টিবি-র ওষুধটুকুও দিতে পারছে না সরকারগুলি

পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশেই হাসপাতালে যক্ষ্মারোগের ওষুধ সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। সরকারি নীতির ফলে খোলা বাজারেও এই ওষুধের অভাব দেখা যাচ্ছে। অথচ নিয়মিত ওষুধ না খেলে ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ারই বৃদ্ধি ঘটে। ফলে পরে আর কোনও ওষুধই কাজ করে না এবং মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সর্বভারতীয় কমিটি এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ডাক্তারদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম।

সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সভাপতি ডাঃ দুর্গাপ্রসাদ চক্রবর্তী এবং সম্পাদক ডাঃ সজল বিশ্বাস ১৫ মে এক বিবৃতিতে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে রাজ্য জুড়েই যক্ষ্মার ওষুধ অনিয়মিত ভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে প্রায় সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই রোগীরা মাঝে মধ্যেই ওষুধ পাচ্ছেন না। এই রোগের ওষুধ নিয়মিত না খেলে ওষুধ রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়। ফলে ওই রোগীর ক্ষেত্রে ওই ওষুধগুলো পরে সরবরাহ নিয়মিত হলেও আর কাজ করবে না। এর বিকল্প ওষুধ অর্থাৎ মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির যে সব ওষুধ রয়েছে সেই সব ওষুধেরও অনেকগুলিই বর্তমানে অমিল হয়ে যাচ্ছে। ফলে ওই সব রোগীর ক্ষেত্রে যখন কোনও ওষুধ আবিষ্কার হয়নি সেই পুরনো দিনের মতোই মৃত্যুর দিন গোনা ছাড়া আর গত্যন্তর থাকবে না।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, এই সব ড্রাগ রেজিন্ট্যান্ট টিবি রোগীদের সংস্পর্শে যারা আসবে এবং সংক্রামিত হবে, তাদেরও মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবিই হবে। অর্থাৎ প্রথম সারির ওষুধে তাদের আর কাজ হবে না। ফলে তাদেরও মৃত্যুর দিন গোনা ছাড়া পথ নেই।

মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের সর্বভারতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বিনায়ক নার্লিকার এবং সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ভবানীশঙ্কর দাস ১৫ মে এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতে প্রতিদিন গড়ে ১৪০০ যক্ষ্মারোগীর মৃত্যু হচ্ছে। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন, কেন্দ্র-রাজ্য তরজায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে এই মর্মান্তিক চিত্র। হাসপাতালে ওষুধ যে অমিল হয়ে পড়েছে তা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের কোনও নজরদারিই নেই। পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার নিয়েছে।

সরকারি নীতির সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, এই ভাবে অনিয়মিত ওষুধ সরবরাহ হতে থাকলে গোটা সমাজই একদিন ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবিতে ভরে যাবে। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? টিবির ওষুধের কাঁচামাল যা বিদেশ থেকে আনা হয়, তা আজ বন্ধ হয়ে গেছে। মোদি সরকার কর্পোরেট মালিকের স্বার্থে জনবিরোধী ভেষজ নীতি গ্রহণ করে দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো বন্ধ করে দিয়েছে যেখান থেকে এইসব কাঁচামাল একদিন তৈরি হত। বিদেশনীতির জটিলতায় আজ বিদেশ থেকেও কাঁচামাল আসা বন্ধ। ফলে টিবির ওষুধ আজ অনিয়মিত। কিছু রাজ্য তৎপর হয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে ওষুধ কিছুটা সংগ্রহ করতে পেরেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সে তৎপরতা না থাকায় এখানকার রোগীরা চূড়ান্ত সংকটে পড়েছে।

পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, যাদের পয়সা আছে তারাও ওষুধ পাবে না, কারণ বাজারেই ওষুধ অমিল। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলেই এই বিপদের সামনে।

মোদি সরকারের চূড়ান্ত জনবিরোধী ওষুধ নীতি কেবল দেশি-বিদেশি কর্পোরেট মালিকের মুনাফাই সুনিশ্চিত করছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিপন্ন। অবিলম্বে এই ভেষজ নীতি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। তাদের দাবি দ্রুত বিদেশ থেকে ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করতে হবে, জনমুখী ভেষজ নীতি তৈরি করতে হবে এবং দেশীয় ওষুধ শিল্পগুলিকে পুনরায় চালু করে সেখানে থেকেই টিবির ওষুধ তৈরি করতে হবে। রাজ্য সরকারকেও এ বিষয়ে তৎপর হতে হবে।

এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সহ সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আবেদন জানান তাঁরা।