খাদ্যদ্রব্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷ সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের খাবারের পাতে মূল সবজি আলু৷ ডাল ভাতের সঙ্গে আলুই একমাত্র সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়৷ যার দাম বাজারে এখন প্রতি কেজি ২০ টাকা৷ অন্যান্য সব্জির দামও ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকার নিচে নয়৷ বরং কিছু কিছু সময় তার উপরেই৷ তাই খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই এখন দায়৷ আলুর দাম চাষি পেয়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা৷ খুচরো বাজারে তা ২০ টাকায় এখনই দাঁড়ানো মানে দু’এক মাসের মধ্যে সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভাবলেও আতঙ্ক হয়৷
সবজি ব্যবসার ক্ষেত্রে চাষি যে ফসল ফলায় তাঁদের থেকে গ্রামীণ ভেন্ডাররা তা সংগ্রহ করে৷ তারা আবার তা পাইকারি বাজারের এজেন্ট বা ফড়েদের কাছে বিক্রি করে৷ তারপর খুচরো ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে তা কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে৷ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রেও চাষি এবং ক্রেতাদের মাঝে ফড়ে, দালাল বা অসাধু ব্যবসায়ীরাই জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণ করে৷ দীর্ঘদিন ধরে এসব চলছে৷ চাষির হাত থেকে ফসল চলে যাবার পর পাইকারি ও খুচরো বাজারে দামের এই বিপুল বৃদ্ধি নিয়ে সরকার কার্যত নীরব৷
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চটকদারি ঘোষণা করে রাজ্য সরকার ঘটা করে ‘টাস্ক্ ফোর্স’ তৈরি করেছিল৷ কিন্ত কোথায় তারা? কী তাদের টাস্ক, তা বোঝা যাচ্ছে না৷ বাস্তব হল গত ৮ মাসে টাস্ক ফোর্স একটাও বৈঠক পর্যন্ত করেনি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ তো অনেক বড় কথা
বিগত ৮ মাসে যে চাল–ডাল থেকে শুরু করে শাক–সবজি সহ সমস্ত কিছুরই দাম বেড়েছে তা টাস্ক–ফোর্সের এক সদস্য স্বীকারও করেছেন৷ অথচ এ ব্যাপারে তাঁদের ভূমিকা ঠুঁটো জগন্নাথের৷ শুধু লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে এ ধরনের নানা কমিটি তৈরির পিছনে৷ সরকার এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য অসাধু ব্যবসায়ী, ফড়ে বা দালালদের গ্রেপ্তার করা, কালোবাজারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার মতো অবশ্যকরণীয় কাজটুকু না করে কখনও কখনও বাজারে হঠাৎ হানা দেওয়া, ৭/৮ টাকার আলুকে ১৩ টাকায় বেঁধে দেওয়া এ সব চমক দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের নাটক করছে৷ এতে অসাধু ব্যবসায়ী বা কালোবাজারিরা বহাল তবিয়তেই থাকছে৷ তাদের গায়ে আঁচড়ও লাগছে না৷ এই টাস্ক ফোর্সের মাথায় বসে আছেন যিনি তিনি নিজেই কলকাতার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারের মালিক৷ ফড়ে, অসাধু ব্যবসায়ীদের তিনি নিয়ন্ত্রণ করবেন একথা ভাবাও বাতুলতা৷
খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে একদিকে যেমন অসাধু ব্যবসায়ী কালোবাজারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দরকার৷ তেমনই দরকার এই অবস্থায় খাদ্যদ্রব্যের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করা৷ যাতে এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ খাদ্যদ্রব্যে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করার দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি কোনও সরকার কর্ণপাত করেনি৷ আসলে এর মাধ্যমে এই ফড়েরাজ খতম হলে, কালোবাজারিদের রমরমা বন্ধ হলে ক্ষমতাসীন দলগুলির কোষাগারে টান পড়তে পারে৷ তাই কি সরকার নীরব?
(৭০ বর্ষ ৪২ সংখ্যা ৭জুন, ২০১৮)