সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগের ছয়টি বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা স্থগিত রাখার প্রতিবাদে ছাত্রদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ৯৯টি জায়গাই ভাল, একটি জায়গা খারাপ৷ সেটা যাদবপুর ৷ পড়াশোনা ছাড়া সেখানে সব হয়৷ শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না৷ তিনি কি জানেন না যে যাদবপুর দেশের একটি অগ্রগণ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ranking এ ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে যাদবপুরের স্থান একেবারে উপরের দিকে? ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউশনাল ranking ফ্রেমওয়ার্কও যাদবপুরকে দেশের ষষ্ঠ শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা দিয়েছে৷ যদি না জানেন, তা হলে শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে সেটা তাঁর সীমাবদ্ধতা৷ সেটাই সব নয়, তাঁর আর একটি সত্তাও আছে৷ তিনি তৃণমূলের মহাসচিব৷ মনে হয়, শিক্ষামন্ত্রী যে কথা বলেছেন তা তিনি বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা হিসাবে৷ কারণ অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তৃণমূলের দখলদারি কায়েম করতে পারলেও যাদবপুরে সেটা তাঁরা এখনও করতে পারেননি৷ কারণ সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা আজও মুক্তমনা, তারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করে, প্রশ্ন করে৷ তাই শিক্ষামন্ত্রীর তাদের উপর এত রাগ৷ একই কারণে জে এন ইউ–এর ছাত্রদের উপর বিজেপি সরকারের রাগ৷ আসলে সব শাসকই মুক্তচিন্তাকে ভয় পায়৷ এখানকার ছাত্রছাত্রীরা রাজনীতি, সমাজ ও পড়াশোনা সব ক্ষেত্রেই নিজের মতো করে ভাবতে চায়৷ তাদের এই স্বাধীনতা খর্ব করতে চান মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী৷
যেহেতু শিক্ষামন্ত্রী চান প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে নয়, নম্বরের ভিত্তিতে সেখানে ভর্তি নেওয়া হোক তাই প্রবেশিকা পরীক্ষা বাতিল করা হল৷ এটা কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ নয়?
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ, ‘টাকা দিই, তাই নাক গলাব’–এই মনোভাব ছেড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত হোন কারণ শিক্ষায় স্বাধিকার শিক্ষার মানোন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত।
ডঃ প্রদীপকুমার দত্ত
প্রাক্তন প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, প্রেসিডেন্সি কলেজ
(৭০ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা ১৩ জুলাই, ২০১৮)