জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের জয়ে এআইডিএসও–র সংগ্রামী অভিনন্দন

এআইডিএসও–র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি ডাঃ মৃদুল সরকার ১৭ জুন এক বিবৃতিতে বলেন,

আজ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের নিরাপত্তা, আক্রমণকারী দুষ্কৃতীদের শাস্তি ও হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা সহ বিভিন্ন দাবি–দাওয়া পেশ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী এইসব দাবিগুলি শুনে সেগুলি কার্যকর করার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেন৷ এই আন্দোলন শুধু জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ছিল না, জনগণের সুচিকিৎসা পাওয়ার স্বার্থের সাথেও যুক্ত ছিল৷ তাই, এই আন্দোলনের জয় শুধু জুনিয়র ডাক্তারদের নয়, জনগণেরও৷

রাজ্য সরকার যদি প্রথম থেকে অনড় অবস্থান না নিত, হুমকি ও কটূক্তি না করত এবং সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করে সমস্যা সমাধানে অগ্রণী হত, তা হলে আন্দোলন এত দূর গড়াত না৷ সরকারি এই মনোভাবের ফলে আন্দোলনকারীদের মনোভাব যথেষ্ট আহত হয়েছিল৷ অন্য দিকে, সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রাজ্য ও বিদেশের চিকিৎসক ও সর্বোপরি সিনিয়র ডাক্তাররা যেভাবে আন্দোলনে এগিয়ে এসেছেন, সেজন্য আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ৷ আমরা বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ এ রাজ্যের বিশিষ্ট কিছু চিকিৎসকদের কাছে, যাঁরা সরকারের সাথে মীমাংসার স্বার্থে বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলেন৷ বিজেপির পক্ষ থেকে আক্রমণকারী দুষ্কৃতীদের উপর ধর্মীয় রং লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল এবং চেষ্টা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক না করে রাজ্যপালের সাথে যাতে বৈঠক করা হয়৷ আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী আন্দোলনকারীরা সেটা অগ্রাহ্য করেছেন৷

যখন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের আহ্বান করেছিলেন, তখন থেকেই আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম যাতে জুনিয়র ডাক্তার প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে ও আচরণে তাঁরা আহত হওয়ায় তাঁদের এই বৈঠকে সম্মত করাতে কিছুটা সময় লেগেছে এবং শেষ পর্যন্ত বৈঠকে তাঁরা যোগদান করেছেন৷

রাজ্য সরকার যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলি যাতে কার্যকর হয় তার জন্য জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র চিকিৎসক এবং জনগণকে সজাগ থাকতে হবে৷ এটাও সকলকে মনে রাখতে হবে, একমাত্র আন্দোলনের দ্বারাই ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় করা সম্ভব৷ আমরা আশা করি, হাসপাতালে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে এবং জনগণ উন্নত পরিষেবা পাবেন৷

সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সম্পাদক ডাঃ সজল বিশ্বাস আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বর্তমান পর্যায়ে আন্দোলন শেষ হলেও জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে না পারলে প্রকৃত অর্থে জনস্বাস্থ্যের কোনও সুরাহা হবে না, ডাক্তার–নার্স–স্বাস্থ্যকর্মী নিগ্রহের ঘটনাও বন্ধ করা যাবে না৷

 

আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি রাজ্য সম্পাদকের আবেদন

প্রিয় আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার বন্ধুরা,          

বারবার দুষ্কৃতীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এবং সম্প্রতি এন আর এস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার পর বাধ্য হয়ে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে আপনারা যে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন তাতে রাজ্য জুড়ে হাসপাতালগুলিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ এহ আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন৷

দুঃখের বিষয় রাজ্য সরকার প্রথম থেকে অনড় অবস্থান নেওয়ায় এবং আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে কটু মন্তব্য করায় আন্দোলনকারীরা মানসিকভাবে আরও আহত হন৷ এহ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালের কয়েকশত সিনিয়র ডাক্তার গণ–হস্তফা দিয়েছেন৷ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিদেশেও এহ আন্দোলনের সমর্থনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে৷

এটা আশাব্যাঞ্জক যে রাজ্যের কয়েকজন বিশিষ্ট শ্রদ্ধাভাজন চিকিৎসক ডাঃ সুকুমার মুখার্জীর নেতৃত্বে স্বেচ্ছায় উদ্যোগী হয়ে অচলাবস্থা অবসানে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের বৈঠক করিয়ে সুষ্ঠু মীমাংসার চেষ্টা করেন৷ 

আমরা মনে করি জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের এহ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসে ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের ভিত্তিতে মীমাংসার পথ গ্রহণ করা উচিত৷ উত্তেজনা ও ব্যথাবেদনার যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও বৈঠকের স্থান নিয়ে জেদাজেদি করা উচিত নয়৷

(উপরোক্ত চিঠিটি দলের রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ১৬ জুন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে পাঠান)

মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্য সম্পাদকের চিঠি

মাননীয়া মহাশয়া,

সমগ্র রাজ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে বিপর্যয় চলছে, একমাত্র আপনিই তার অবসান ঘটাতে পারেন ভেবে আপনার বিবেচনার জন্য এই চিঠি দিচ্ছি৷

১০ জুন এনআরএস হাসপাতালে একজন জুনিয়র ডাক্তারের উপর নৃশংস আক্রমণকে কেন্দ্র করে গত ৬ দিন যাবৎ ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতির ফলে সমগ্র রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত৷ রোগাক্রান্ত সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই৷ বাস্তবে ডাক্তারদের এই স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপক বিক্ষোভ কার্যত বিস্ফোরণে পরিণত হওয়ার কারণ হল, জনমুখী স্বাস্থ্যনীতি, হাসপাতালের উপযুক্ত পরিকাঠামো ও দক্ষ প্রশাসনের অভাব৷ দিনের পর দিন চিকিৎসক–নার্স নিগ্রহকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে৷ এই ক্ষোভের ন্যায্যতা বোঝাতেই জুনিয়র ডাক্তারদের  সুরক্ষা ও উপযুক্ত পরিকাঠামোর দাবিকে সমর্থন জানিয়ে সিনিয়র ডাক্তাররা গণইস্তফা দিতে বাধ্য হচ্ছেন এবং একই সমস্যায় আক্রান্ত সারা ভারতের চিকিৎসক সমাজ এঁদের সমর্থনে প্রতিবাদে নেমেছেন৷

এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীর স্বার্থে আপনার কাছে আবেদন, অবিলম্বে আপনি স্বয়ং আহত অবস্থানরত জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে দেখা করুন এবং তাঁদের ন্যায্য দাবিগুলি পূরণের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে এই অচলাবস্থার অবসান ঘটান৷

(দলের রাজ্য সম্পাদক চিঠিটি ১৫ জুন মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠান)

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা)