মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে শাসক দলের বা প্রাক্তন শাসক দলের বড় বড় ইউনিয়ন ছিল। ছিলেন নামীদামি অনেক নেতাও। তাদের আগুনঝরা ভাষণে গরম গরম নানা বুলিতে শ্রমিকরা বহু সময় বিভ্রান্ত হতেন। তাই দলে দলে ঠিকা শ্রমিক নানা সমস্যা নিয়ে শাসক দলের ইউনিয়ন আইএনটিটিইউসি বা সিটুতে নাম লিখিয়েছেন। ভেবেছেন এরা তাঁদের স্বার্থ নিয়ে আন্দোলন করবে। কিন্তু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যায়– আন্দোলনের রাস্তায় এদের দেখা মেলে না।
এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থায়ী কাজে বহু ঠিকা শ্রমিক যুক্ত। তাঁরা লক্ষ করেছেন এই সংগঠনগুলির নেতারা সংগ্রামের পরিবর্তে নানা রকম আপস করে চলেছেন। এই ঠিকা শ্রমিকরা আইএনটিটিইউসি ও সিটু নেতৃত্বের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী এবং প্রশাসন ও ঠিকাদারপ্রেমী ভূমিকায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে এ আই ইউ টি ইউ সি-র নেতৃত্বে গড়ে তোলেন সাগরদিঘি থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট কন্ট্রাক্টরস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। তারপর থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট দিনে ন্যায্য মজুরি দেওয়া, বেআইনি ছাঁটাই ও ঠিকাদারদের জুলুমের প্রতিবাদে শুরু হয় ধারাবাহিক আন্দোলন। শ্রমিকরা প্রাণ ফিরে পান। এই আন্দোলন তাঁদের শেখায় শ্রমিকদের দুর্দশার কারণ কী, এর থেকে মুক্তির পথই বা কী। এই আন্দোলন আরও শেখায় শ্রমিকদের মধ্যে আপসকামী ইউনিয়নগুলি কীভাবে ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করে। শ্রমিকদের মধ্যে এই চেতনার জাগরণ কর্তৃপক্ষ মানতে পারেনি। স্বাভাবিক ভাবেই কর্তৃপক্ষ ও তাঁবেদার ইউনিয়নগুলি একযোগে এ আই ইউ টি ইউ সি-র সংগঠনকে কোণঠাসা করার সর্বাত্মক চেষ্টা কর়ে। কিন্তু সংগ্রামী শ্রমিকরা তা ব্যর্থ করে দেন। শ্রমিকদের প্রবল চাপে কলকাতায় গত ৪ অক্টোবর ২০২১ শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি অংশের শ্রমিকদের মজুরি সংশোধনের চুক্তিতে এ আই ইউ টি ইউ সি অনুমোদিত ইউনিয়নকে যুক্ত করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়। কিন্তু বাকি শ্রমিকদের মজুরি সংশোধন গত ২৮ অক্টোবর সম্পন্ন হওয়ার লিখিত চুক্তি হলেও কর্তৃপক্ষ তা না করে কথার খেলাপ করে। এই পরিস্থিতিতে চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট শ্রমিকদের মজুরি সংশোধন ও অন্যান্য দাবিতে চলমান আন্দোলন আরও শক্তিশালী করতে ইউনিয়ন তৎপর হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ জুন সাগরদিঘিতে অনুষ্ঠিত হয় ইউনিয়নের চতুর্থ সম্মেলন। সম্মেলন শুরুর আগেই প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে সম্মেলনস্থল জলমগ্ন হয়ে পড়ে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়। উপস্থিত ২০০-র বেশি প্রতিনিধি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। প্ল্যান্টের অন্যান্য শ্রমিক ও পথচলতি মানুষ দূর থেকে এই ঘটনা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেন।
প্রধান বক্তা ছিলেন পাওয়ারমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সমর সিনহা। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ইউনিয়নের সহ সভাপতি কমরেড কাশীনাথ বসাক। সম্মেলনে কমরেড মির্জা নাসিরুদ্দিনকে সভাপতি, বিশ্বজিৎ রাজমাল্লাকে সম্পাদক, জিয়াউর রহমানকে কোষাধ্যক্ষ এবং প্রিয়রঞ্জন বিশ্বাস সহ সাত জনকে সহ সম্পাদক করে ৪১ জনের কমিটি নির্বাচিত হয়। কর্মীরা বলেন, এই সংগঠন তাদের বাঁচার পথ দেখিয়েছে। একটা দীর্ঘ সময় ভুল সংগঠনের সঙ্গে থাকার জন্য তাঁদের অনেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করেন।