“শুধু লড়াই শুধু, স্লোগান এবং যে কোনও উপায়ে দলের শক্তিবৃদ্ধির কথাই যাঁরা ভাবেন, তাদের আমি একটা কথা ভেবে দেখতে বলি৷ আমাদের দেশেও কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী তথাকথিত দলগুলির মধ্যে এই মানসিকতা আছে এবং সতর্ক না থাকলে আমাদেরও এই মানসিকতা যে কোনও দিন ছেয়ে ফেলতে পারে৷ শক্তিবৃদ্ধি হলে তাঁরা আর চোখে-কানে পথ দেখতে পান না৷ তাদের মাথা ঠিক থাকে না৷ তাঁরা আদর্শের দিক থেকে কতদূর এগোচ্ছেন, তাদের মধ্যে তত্ত্বগত চেতনার মান বাড়ছে কি না, যেসব কর্মীরা তাদের দল ভারী করছে সেই সব কর্মীরা সঠিক কমিউনিস্ট চেতনায় উদ্বুদ্ধ কি না, তাদের মধ্যে উন্নত কমিউনিস্ট নৈতিকতার ভিত্তি আছে কিনা, আদর্শবাদ আছে কি না– নাকি তারা শুধু স্লোগানসর্বস্ব কর্মী, শুধু দলের শক্তিবৃদ্ধি করছে– এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি তাঁরা কোনও নজর দেন না। শক্তিবৃদ্ধির নামে যারা এসে তাদের দলে ভিড় করে, দলের সভ্য হিসাবে তাদের পরিচয়টা জানা না থাকলে রাস্তার একটা রকবাজ ছেলের সঙ্গে কোনও পার্থক্যই তাদের খুঁজে বের করা যাবে না৷ এইভাবে দল ভারী করলে দলের কর্মী সংখ্যা হয়তো তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়, পার্লামেন্টারি রাজনীতির আসরও হয়তো গরম হয় এবং তাদের নেতা হওয়ার বা প্রচার-প্রপাগান্ডার ক্ষেত্রে হয়তো অনেক সুবিধা হয়– কিন্তু, তার ফলে বিপ্লবের গোটা মানসিকতাটাই মার খায়৷
কারণ, সাধারণ মানুষ, যারা কমিউনিজম এবং কমিউনিজমের ভাবাদর্শকে বুঝতেও চায়, তারা ঐ নীচু স্তরের কর্মীদের আচার-ব্যবহার দেখে সেই কমিউনিজম সম্পর্কেই বিগড়ে যায়৷ প্রতিদিন এদের সঙ্গে মেলামেশার দ্বারা তারা দেখে যে, যারা কমিউনিজমের কথা বলছে, পাড়ার অন্যান্য রকবাজ ছেলেদের সাথে তাদের কোনও পার্থক্য নেই– জ্ঞান, বিদ্যা, বুদ্ধি, নীতিনৈতিকতা, সমস্ত দিক থেকে তারা ঐ রকবাজ ছেলেদের মতোই৷ যদি না জানা থাকে যে, এই ছেলেটা কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার, তা হলে অন্যদের থেকে আলাদা করে তাকে চেনবারই উপায় নেই৷ সেজন্যই বিপ্লবীদের উন্নত আদর্শগত ও নৈতিক মান অর্জনের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
–নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি