কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ২০১৮–’১৯–এর বাজেট ভাষণ প্রসঙ্গে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১ ফেব্রুয়ারি একটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ তিনি বলেন,
কেন্দ্রীয় বাজেট হল জনজীবনের সঙ্গে জড়িত মৌলিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলি সম্পর্কে সরকারি নীতির ঘোষণা৷ ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি, কল–কারখানা বন্ধ হওয়া, শ্রমিক ছাঁটাই, মজুরি হ্রাস, চূড়ান্ত শোষণমূলক ঠিকা–শ্রমিক প্রথা, কৃষিপণ্যের দাম না পাওয়ায় দরিদ্র কৃষকদের বঞ্চনা, পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাবৃদ্ধি, চাষি ও ছাঁটাই শ্রমিকদের একের পর এক আত্মহত্যা, মুষ্টিমেয় ধনী ও কোটি কোটি দুদর্শাপীড়িত মানুষের ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য, উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হ্রাস, চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগহীনতা, ঋণের টাকা শোধ না করে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের ব্যাঙ্ক–সম্পদের বেপরোয়া লুঠ, কালো টাকার রমরমা, ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি ইত্যাদি সমস্যায় জনজীবন আজ জর্জরিত৷ বাজেট ভাষণে এ সব বিষয়ে আলোচনা দূর অস্ত্, কোনওটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই৷ পরিবর্তে মন্ত্রী তাঁর ভাষণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উজ্জ্বল চিত্র এবং বৃদ্ধির দুর্দান্ত হারের আশা তুলে ধরেছেন৷ দাবি করেছেন, এর ফলে গোটা দেশের মানুষের উন্নয়ন হবে৷ সকলেই জানেন, নোট বাতিলের ঘটনা এক ধাক্কায় দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর, হকার, ছোট দোকানদার, ছোট ব্যবসায়ী সহ মেহনতি মানুষের জীবনে অধিকতর দুর্দশা নিয়ে এসেছে এবং শত শত মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে৷ সর্বৈব মিথ্যার রঙিন মোড়কে ঢেকে অর্থমন্ত্রী একে ‘সততার প্রতীক’ বলে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ একইভাবে, জনসাধারণ এবং ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপর আরেকটি কঠিন আঘাত নামিয়ে আনা জিএসটি–কে অর্থমন্ত্রী করনীতি সংস্কারের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হিসাবে বর্ণনা করেছেন৷
মন্ত্রী ও দলীয় সাংসদদের অবিশ্রান্ত টেবিল–চাপড়ানির মধ্যে বিজেপি সরকারের অর্থমন্ত্রী সংসদে যে বাজেট পেশ করেছেন, কার্যত তা তাঁর দলের প্রাক–নির্বাচনী প্রচারপত্র৷ এটি সাফল্যের নানা ভুয়ো দাবি এবং জনকল্যাণের অজুহাতে নেওয়া প্রকল্প ও পরিকল্পনার নিয়মমাফিক ঘোষণায় ভরা, যেগুলির সাথে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর নাম যুক্ত করা হয়েছে৷ চূড়ান্ত জনস্বার্থবিরোধী এই বাজেট কদর্য ভাবে ধনকুবের কর্পোরেটদের স্বার্থবাহী৷ ফলে এই বাজেট বহুলপ্রচারিত ‘ডিজিটাল ইকনমি’ এবং স্বঘোষিত ‘সততার প্রতিমূর্তি’ প্রতারক এই সরকারের আমলে শাসক একচেটিয়া পুঁজিপতি শ্রেণির জন্য অধিকতর সৌভাগ্য এবং জনসাধারণের জীবনে অধিকতর দুর্দশা বহন করে আনবে৷ বাৎসরিক বাজেটের নামে এই প্রতারণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত করার জন্য আমরা দুর্দশা জর্জরিত জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷