স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে
১৭ নভেম্বর৷ সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে যেমন আসছেন শয়ে শয়ে মানুষ তেমনই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছেন হাজারে হাজারে৷ হাওড়া স্টেশনে একের পর এক ট্রেন ঢুকছে, আর ঢল নামছে ধর্মতলামুখী মানুষের৷ স্টেশন লাল পতাকা আর স্লোগানে মুখরিত৷ একজন কর্মী একটি ব্যানার নিয়ে ঘুরছেন সারা স্টেশন– যদি কেউ কোথাও বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকে যান তবে ব্যানার দেখে এগিয়ে আসবেন৷ হঠাৎ টিকিট কাউন্টারের দিক থেকে একজন দৌড়ে এসে কর্মীটির হাতে কিছু গুঁজে দিলেন৷ কর্মীটি কিছু বোঝার আগেই দ্রুত পায়ে চলতে চলতে তিনি বললেন, আপনাদের সমাবেশের জন্য যৎসামান্য সাহায্য৷ কর্মীটি চিৎকার করে বললেন, দাঁড়ান, দাঁড়ান, আমার কাছে তো বিল–কুপন কিছুই নেই৷ চলতে চলতেই তিনি বললেন, দরকার নেই, আপনাদের দলকে আমি জানি৷ কর্মীটি গুনে দেখলেন তিরিশ টাকা৷
বিপ্লবের মর্মবস্তু
নভেম্বর বিপ্লবের যেটা মর্মবস্তু সেটা একমাত্র এস ইউ সি আই–ই উপলব্ধি করেছে৷ সেটার মূল্য একমাত্র এরাই বুঝেছে৷ অনেক বড় বড় বামপন্থী দল আছে, তাদের যা করা উচিত ছিল তা তারা কেউ করল না৷ তারা এস ইউ সি আইয়ের ধারেকাছে কেউ যেতে পারেনি৷ আসলে বিপ্লবের প্রতি দায়বদ্ধতা এদের ছাড়া আর কারও নেই৷ কথাগুলি বললেন, সোনারপুর এলাকার এক প্রবীণ বামপন্থী মানুষ৷
সামনে চলে আসবে
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার রাজপুরের রাস্তা দিয়ে নভেম্বর বিপ্লবের সমাবেশের প্রচারে সাইকেল মিছিল এগিয়ে চলেছে৷ একজন আরোহী নেমেছেন জল খাওয়ার জন্য৷ পাশেই জটলায় একজন মিছিল লক্ষ করে অন্যদের বলছেন, এরা দ্রুত বাড়ছে৷ দেখিস, এরাই সামনে চলে আসবে৷ গরিবের জন্য তো এরাই লড়ে৷
দ্রুত শক্তিশালী হোন
অন্য সব জায়গার মতো বাঁকুড়া জেলা জুড়েও নভেম্বর বিপ্লব শতবার্ষিকীর সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক প্রচার হয়েছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ–উদ্দীপনাও তৈরি হয়েছে৷ এমনই একজন উৎসাহী মানুষ দলের এক সংগঠককে ডেকে বললেন, দেখুন, ওই সব বিজেপি–টিজেপি দিয়ে কিছু হবে না, আমরা চাই আপনারা রাজ্যে দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠুন৷ আমরা এখনই আপনাদের সাথে যেতে পারছি না, কিন্তু যখন যা প্রয়োজন বলবেন, সাধ্যমতো সাহায্য করব৷
দলের কাজ করতে চাই
কলকাতার তারাতলা অঞ্চলে নভেম্বর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপনের প্রচার চলাকালিন কর্মীরা এক যুবককে হ্যান্ডবিল দিয়ে ডোনেশনের জন্য অনুরোধ করে৷ যুবকটি বললেন– ‘আমি একটা বামপন্থী দলের যুব সংগঠন করতাম৷ এখন সব ছেড়ে দিয়েছি৷ দেখলাম সব ব্যাটা চোর৷ জানেন, ৪০ হাজার টাকা ডোনেশন তুলে দিয়েছিলাম৷ কিন্তু এলাকার নেতারা সমস্ত টাকা মেরে দিয়ে উল্টে আমাকেই ধমকাতে থাকল৷ এখন আমি কোনও ডোনেশন দেব না৷ আগে আপনাদের লিফলেট পড়ি, ভাবনা–চিন্তা করি, ভাল লাগলে পরে দেব৷’
দিনকয়েক পরে দলের কর্মীরা আবার যোগাযোগ করলে ওই যুবক জানান, দলের বক্তব্য তাঁর ভাল লেগেছে৷ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ১৭ নভেম্বরের সমাবেশে আসবেন বলে কথা দেন৷ অর্থসাহায্যও করেন৷ সমাবেশ থেকে ফিরে এলাকায় দলের কাজ করতে চেয়েছেন তিনি৷
আমাদেরই প্রাণের কথা
বাঁকুড়ায় দলের এক সংগঠক সমাবেশের ছবি–খবরে সাজানো গণদাবী বিক্রি করছিলেন৷ এক যুবক এগিয়ে এসে অনেকটা ছোঁ মেরে একটি গণদাবী নিয়ে নিলেন৷ গভীর মনোযোগে দ্রুত চোখও বোলালেন প্রথম পাতায়৷ তারপরই শোনালেন নিজের কাহিনি৷ বললেন, ‘আমার স্ত্রী একদিন আমায় বলল, এস ইউ সি আই–এর এত দেওয়াল লিখন, পোস্টার, মাইকপ্রচার, ঘরে ঘরে চাঁদা তোলা– চলো, গিয়ে মিটিংটা শুনে আসি৷ তার অনেক কথাই আমার এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে যায়৷ কিন্তু এই কথাটা কেন জানি না আমার মনকে বেশ নাড়া দিল৷ বললাম, আমার কতকগুলো কাজও আছে কলকাতায়, চলো তবে সমাবেশটা দেখেই আসি৷ ১৭ তারিখ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম দু’জনে৷ স্ত্রী বলল, আগে মিটিংয়ে যাই, তারপরে কাজ সারব৷ মিটিংয়ে পৌঁছে এত লোক দেখে অবাক হয়ে গেলাম৷ তারপর যেন বিভোর হয়ে পুরো মিটিংটা শুনলাম৷ আরে, এ তো আমাদেরই প্রাণের কথা
মিটিং শেষ হলে বাড়ি ফিরে এলাম৷ অন্য কাজগুলো হল না ঠিকই, কিন্তু মনটা আনন্দে ভরে গেল৷ আমাদের জীবনগুলো খুবই কঠিন, কষ্টের৷ কিন্তু তা দূর করারও যে রাস্তা আছে তা জানতে ও সেইসব কষ্টের বিরুদ্ধে লড়বার প্রেরণা পেলাম’৷
অল্পবয়সে কেন যুক্ত হলাম না
সমাবেশের কয়েকদিন পর দক্ষিণ কলকাতায় গণদাবী বিক্রি করছিলেন স্থানীয় কর্মীরা৷ এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে কাগজ নিলেন৷ বললেন, ‘আমি একসময় একটা বড় বাম দলের নেতা ছিলাম৷ কিন্তু দেখলাম দলটা এখন আর কমিউনিস্ট নেই, একটা বুর্জোয়া দলের মতো হয়ে গেছে৷ ঠিক করেছি এখন থেকে এস ইউ সি–ই করব’৷ কর্মীটির সঙ্গে হাত মেলালেন তিনি৷ আপশোস করে বললেন, ‘মাঝে মাঝে ভাবি, যদি তোমাদের মতো অল্পবয়সে এই পার্টির সাথে যুক্ত হতে পারতাম’