২০২০ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট প্রসঙ্গে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন,
এ দেশের জনগণ যে দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দীর্ঘ বাজেট বত্তৃতায় তার কোনও চিহ্ন নেই। কিছু চমক দেওয়ার চেষ্টা আর হাস্যকর কিছু আশাবাদের কথা ছাড়া জনজীবনের মূল সমস্যাগুলির কোনও একটি বিষয়ও এই বাজেটে স্থান পায়নি। অর্থমন্ত্রী নিজেই বাজেট বত্তৃতায় পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধির যন্ত্রণা, বিরামহীন ভাবে বেড়ে চলা জ্বালানির দাম, দিন দিন বাড়তে থাকা বেকারি, বিপুল সংখ্যায় শ্রমিক ছাঁটাই, একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো যে আর্থিক পরিস্থিতি মানুষের জীবন জেরবার করে দিচ্ছে, তা নিয়ে সরকারের বলবার মতো কিছু নেই। সাধারণ মানুষের আয় ক্রমাগত কমছে, বাজারে চাহিদা কমে চলেছে, কমছে মানুষের ভোগব্যয়ের ক্ষমতা, চাষির ফসলের লাভজনক দাম নেই, ক্রমবর্ধমান মন্দার সাথে যুক্ত হয়েছে দিন দিন বেড়ে চলা মুদ্রাস্ফীতি। কর্পোরেট ধনকুবের মালিকদের প্রতি সদয় দাক্ষিণ্য আর কর আদায়কারী ব্যবস্থায় লাগামছাড়া দুর্নীতির কল্যাণে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি বেড়েই চলেছে। উৎপাদনের মূল ক্ষেত্রগুলিতে কার্যকরী বিনিয়োগ নেই, বারবার সুদ কমিয়েও ব্যাঙ্ক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ঋণ নেওয়ার মতো শিল্পসংস্থা মিলছে না। কেন যে সরকার জনস্বার্থবাহী কাজে ব্যয়বৃদ্ধি করছে না, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এই সমস্ত সমস্যার কোনওটি নিয়েই কিছু বলেননি। তিনি ব্যাখ্যা করেননি, এক শতাংশ অতি ধনীর হাতে দেশের অধিকাংশ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশবাসীর ৭০ শতাংশ শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তকে অতল দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়ে তাঁদের বহুল প্রচারিত ‘ইনক্লুসিভ গ্রোথে’র তত্ত্বটি কেমন চরিতার্থ হল!
প্রকাশিত সমস্ত তথ্য, জনগণের শোচনীয় জীবনযাত্রার মান যে সত্যকে তুলে ধরছে, অর্থমন্ত্রী দেশের মানুষের সাথে মিথ্যাচার করে তুলে ধরেছেন তার বিপরীত বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব, দারিদ্র দূরীকরণের সাথে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির কিছু ভাসা ভাসা হিসাব। এলআইসি সহ নতুন নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ ও রেল সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশি বেশি করে পিপিপি মডেলের মাধ্যমে বেসরকারিকরণের পথ প্রশস্ত করছে সরকার। আরও উল্লেখযোগ্য হল, শিক্ষায় ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে জনকল্যাণের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে অবাধ ব্যবসার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে পুরো বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ‘সহজে ব্যবসার সুযোগ’ করে দেওয়ার নামে কর্পোরেট ক্ষেত্রকে নতুন নতুন করছাড়ের ঘোষণায়। ব্যক্তিগত আয়কর ছাড়ের ঘোষণার আড়ালে এতদিন পর্যন্ত কর সাশ্রয়কারী বিনিয়োগে যে ছাড়গুলি পাওয়া যেত তা তুলে নেওয়া হয়েছে। আর একবার শোনানো হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বল বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়ার তত্তে্বর ফাটা রেকর্ডটি। যদিও একই সাথে ভারতীয় শাসক শ্রেণি অর্থাৎ একচেটিয়া বুর্জোয়ারা এবং তাদের প্রসাদধন্য অর্থনীতিবিদ-লেখক-ভাষ্যকাররা বাজেটের আগের দিন পর্যন্ত গর্বের সাথে প্রচার করেছেন– বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও ভারতের শক্তিশালী আর্থিক বৃদ্ধির তত্ত্ব।
এক কথায়, দেশের যে লক্ষ কোটি জনগণের কাছে ভোটের আগে বিজেপি প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছুটিয়়েছিল, এই বাজেট সেই জনগণ নয়,বিজেপি যে পুঁজিপতি প্রভুদের পলিটিক্যাল ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করে চলেছে, তাদেরই সেবা করবে। ফলে জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কোনও অবসান হবে না।
এই পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কর্তব্য হল, এই বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে সামিল হওয়া।