১১ মার্চ কেরালার ত্রিশূরে সাহিত্য অ্যাকাডেমি হলে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র উপর ‘জনগণের সংসদ’ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে কোনও আলোচনা না করে কেবলমাত্র মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করছে। সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির কেরালা শাখার উদ্যোগে সংগঠিত ‘জনগণের সংসদ’ দু’ঘন্টা আলোচনা করে জাতীয় শিক্ষানীতিকে সম্পূর্ণ বাতিল করার সুপারিশ করে। এই জনগণের সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডঃ এম ভি মাথাই বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক এবং দেশের ফেডেরাল ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী। এমনকি কেরালা রাজ্য সরকারও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কেরালা সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির প্রাক্তন সম্পাদক পি ভি কৃষ্ণান নায়ার বলেন, নতুন শিক্ষানীতি দেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা ধ্বংস করবে এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের রাস্তাকেই প্রশস্ত করবে। সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর উদ্বোধনী বত্তৃতায় বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি পার্লামেন্টে আলোচনা করেনি। ত্রিশূরের ‘জনগণের সংসদ’ সরকারকে সুপারিশ করুক– সাধারণ মানুষ কেমন শিক্ষানীতি চায়। দেশের মানুষ যে যে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এই শিক্ষানীতির বিরোধিতা আশা করেছিল তাদের মধ্যে কেরালা অন্যতম। কিন্তু কেরালা সরকার দিল্লির বি আর আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য শ্যাম বি মেননকে চেয়ারম্যান করে বিকল্প শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য যে কমিটি করেছিল, তা ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্স, অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট, ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, গবেষণায় ৫০ শতাংশ বেসরকারি পুঁজি ও সরকার পোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি পুঁজির সুপারিশ করেছে এবং সরকার তা কার্যকরী করছে। উক্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অর্থনৈতিক স্বাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করে ছাত্র-ফি বাড়ানোর অধিকার দিয়েছে। কেরালা রাজ্য সরকার নানা নামে জাতীয় শিক্ষানীতির বিভিন্ন ধারাও কার্যকর করছে। সেভ এডুকেশন কমিটি শুরু থেকেই এর বিপরীতে জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা করছে এবং শিক্ষার পণ্যায়নের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলছে।
জনগণের সংসদের দুটি সমান্তরাল অধিবেশন হয়– একটি স্কুল শিক্ষার উপর এবং অপরটি উচ্চশিক্ষার উপর। প্রত্যেকটি অধিবেশনে ১২ জন করে ২৪ জন বক্তা বক্তব্য রাখেন। সবশেষে ত্রিশূর ঘোষণা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ঘোষণায় বলা হয়, যতদিন না কেন্দ্রীয় সরকার এই শিক্ষানীতি প্রত্যাহার করছে ততদিন এই পার্লামেন্টের সদস্যরা দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন পরিচালনা করতে প্রতিশ্রুত থাকবেন। সংসদ থেকে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সাধারণ মানুষকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আবেদন জানানো হয়। সবশেষে শিক্ষাবিদদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।