এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১৩ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের পরিকল্পনা হিন্দু মহাসভা, আরএসএস, মুসলিম লিগ উত্থাপন করেছিল এবং পরে জাতীয় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি তা গ্রহণ করেছিল৷ তদানীন্তন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা এই পরিকল্পনায় তৎক্ষণাৎ মদত দিয়ে তা কার্যকর করে দেয়৷ এই কারণে ভারত, পাকিস্তান উভয় দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন৷ ফলশ্রুতিতে যে অভূতপূর্ব শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি হয় তার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে সেদিন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ভারতের জনগণের ইচ্ছাকে স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় দায়বদ্ধতা হিসাবেই ঘোষণা করেন যে, সমস্ত শরণার্থীদের কোনও রকম বিধিনিষেধ বা পূর্বশর্ত ছাড়াই ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ পরবর্তীতে বা সম্প্রতি যারা প্রবেশ করেছে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নটি ভারতের সংবিধান, নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ এবং আন্তর্জাতিক আইন ও প্রচলিত রীতি– পদ্ধতির ভিত্তিতেই দেওয়া যায়৷ বিজেপি সরকার সে পথে না গিয়ে এবং নাগরিকত্বের প্রশ্নে আগে জাতীয় স্তরে ঐকমত্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নাগরিকত্ব আইনের নূতন একটি সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে এল এবং সেটি সংসদের দুই কক্ষে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে পাশ করিয়ে নিল, যার কোনও প্রয়োজনই ছিল না৷
আসলে জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ও বিভেদকামী মানসিকতায় উস্কানি দিতে, জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি থেকে জনগণের নজর ঘুরিয়ে গণআন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ আটকাতে আর এস এস–বিজেপির এটি এক জঘন্য ষড়যন্ত্র৷ আমরা বিজেপি সরকারের এই চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারী পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছি৷ এ কথাও ভোলা যায় না জনগণকে বিভক্ত করার একই ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে বিজেপি গোটা দেশে রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জি (এন আর সি) চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও আনা হয়েছে একই জঘন্য পরিকল্পনারই অঙ্গ হিসাবে৷ এই অবস্থায় আমরা গোটা দেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে এই দুটি পদক্ষেপেরই প্রতিরোধ করা দরকার মনে করি৷
একই সাথে আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যে, আন্তর্জাতিক আইন, নিয়ম এবং রীতিনীতি অনুযায়ী যে কোনও দেশের কোনও ব্যক্তি বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং সে দেশের আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ বা জাতিগত পরিচয়ের ভেদাভেদ ছাড়াই তাঁর নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার আছে৷ আমরা দাবি করছি, এই ধরনের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত প্রশ্নে ভারত সরকারকেও কঠোরভাবে একই নীতি অনুসরণ করতে হবে৷