গর্ভবতী স্ত্রীকে রক্ত দিতে হবে৷ হাসপাতাল টাকা চাইছে অনেক৷ উত্তরপ্রদেশের অসহায় অরবিন্দ বানজারা শেষ পর্যন্ত নিজের চার বছরের মেয়ে রোশনিকে দালাল মারফত ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করার মর্মান্তিক পরিস্থিতির শিকার হতে বাধ্য হলেন৷
এ কোন ভারত উন্নয়নের তরী তরতর করে এগিয়ে চলেছে বলে নেতারা যে দু’বেলা বক্তৃতা দিচ্ছেন, অরবিন্দরা তাতে সওয়ার হতে পারছেন না কেন? হাসপাতালের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটেও কিংবা বাড়ির আশেপাশে কারও থেকে টাকার আশ্বাসটুকু পর্যন্ত পাননি অরবিন্দ৷ তখনই সন্তানের বিনিময়ে স্ত্রীকে বাঁচানোর মতো হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তিনি৷ রাজ্যে প্রশাসন আছে, একটা সরকার আছে, গ্রামে গ্রামে রয়েছে গ্রামপ্রধানরা৷ তবুও অরবিন্দের মতো হতদরিদ্রদের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পথে পথে ঘুরে সন্তান বিক্রির মতো নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে হয় কেন?
রাজ্যে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী আবার সাধুপুরুষ (যোগী আদিত্যনাথ) হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে গোশালা খুলেছেন তিনি৷ কিন্তু গরিব–দুঃস্থদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই৷ থাকলে রোশনিদের মায়েরা হয়ত বাঁচতে পারত৷ গো–মাতার সন্তানবৎ তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা যদি গরু–মোষ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে নিরীহ মানুষদের পিটিয়ে মারার রেকর্ড না গড়ে গরিব–দুঃখীদের চিকিৎসার বিন্দুমাত্র ভাবনা–চিন্তা করতেন, তাহলে বোধহয় ঠিক ‘যোগী’ হওয়া যেত না৷
আসলে উত্তরপ্রদেশ কিংবা অন্য কোনও রাজ্যে ক্ষমতায় আসীন দলগুলি উন্নয়নের যে কথা তুলে ধরে, তা সাধারণ মানুষের উন্নয়ন নয়৷ তা রাফাল যুদ্ধবিমানের বরাত পাওয়া শিল্পপতি আম্বানি, অস্ট্রেলিয়ায় বিশাল খনির মালিক সরকার ঘনিষ্ঠ ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি কিংবা এ দেশে একচেটিয়া বাজার দখলকারী পতঞ্জলির মালিক বাবা রামদেবের৷ সেটা বুঝতে ভুল করে অরবিন্দর মতো আমজনতা৷ মালিকদের টাকায় এই দলগুলির নির্বাচনী সভায় হাততালির ঝড় বইয়ে দেয় এদের মতো হতদরিদ্ররাই৷ তারপর ক্ষমতায় গিয়ে এদের দিকে ফিরেও তাকায় না৷ যোগীমশাইরা অরবিন্দদের জীবনের করুণ চিত্র বিন্দুমাত্র পাল্টায় না, তাদের উন্নয়নের স্বপ্ন ‘জুমলাই’ থেকে যায়৷
(৭১ বর্ষ ৬ সংখ্যা ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)