এবার হোটেল ব্যবসায়ীদের থাবা বসতে চলেছে উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের জমিতে৷ ইতিমধ্যেই এমন ১৬টি প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে জমা পড়েছে৷ বেশিরভাগই শিলিগুড়িকে ঘিরে৷ সরকারও চাইছে চা শিল্পের সঙ্গে পর্যটনকে যুক্ত করতে৷ তৈরি হয়েছে ‘টি টুরিজম অ্যান্ড অ্যালায়েড বিজনেস পলিসি ২০১৯’৷ সিদ্ধান্ত হয়েছে, টি এস্টেটের ১৫ শতাংশ জমি (পতিত) পর্যটনে দিতে পারবেন মালিকরা৷
দার্জিলিং, তরাই এবং ডুয়ার্সের বেশ কিছু বাগান সরকারের কাছে পরিকল্পনা পেশ করেছে৷ প্রকল্পগুলিতে কিছু কর্মসংস্থান হবে বলে বলা হয়েছে৷ কিন্তু এতে চা শিল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে নানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷
পর্যটনে ঢুকতে চাইছে টাটা, আইটিসি এবং মাঝারি মানের আরও কিছু হোটেল ব্যবসায়ী৷ ইতিমধ্যেই মকাইবাড়ি চা বাগানে টাটা এক বিলাসবহুল রিসর্ট তৈরি করেছে৷ মুনাফার লোভে আরও বহু ব্যবসায়ী চা বাগানে হোটেল ব্যবসায় পা রাখতে চাইছে৷ শিলিগুড়িতে চাঁদমারি চা বাগানে ও কালিম্পঙের আপার ফাগু গার্ডেনে রিসর্ট তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে লক্ষ্মী টি গ্রুপ৷ উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, হোটেল ব্যবসায় ভাল সম্ভাবনা রয়েছে৷ আপার ফাগু টি এস্টেটের ডিরেক্টর বলেন, তাঁরা ৫০ একর প্লটের ৬০টি হোটেল তৈরি করতে চান, যেখানে সবরকম সুবিধা থাকবে৷
এমনিতেই তরাই ও ডুয়ার্সের চা-বাগানগুলি ধুঁকছে৷ মালিকদের লক্ষ্য দ্রুত মুনাফা লোটার ব্যবস্থা করা৷ এর জন্য সময় নিয়ে বাগানগুলির যথাযথ পরিচর্যার বন্দোবস্ত তাঁরা করছেন না৷ বাগান পরিচালনার ক্ষেত্রে রয়েছে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার অভাব৷ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক চা বাগান, নয়ত চলছে খুঁড়িয়ে৷ শ্রমিকদের দুরবস্থা কহতব্য নয়৷ তাঁরা একেবারেই ‘নেই’ রাজ্যের বাসিন্দা৷ নিয়মিত মজুরি নেই, থাকার ঘর নেই, পরিস্রুত পানীয় জল নেই, অসুখে চিকিৎসা নেই৷ নিরুপায় অসহায়তায় কোনও রকমে জীবন কাটাচ্ছেন তাঁদের অধিকাংশই৷ এই অবস্থায় চা বাগানকে পর্যটন শিল্পের জন্য ব্যবহার করা শুরু হলে মালিকদের মুনাফার পরিমাণ হয়ত বাড়বে, কিন্তু বাগানের যাঁরা পুরনো কর্মী, চা-বাগানের কাজ ছাড়া যাঁদের অন্য কাজ জানা নেই, তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সে প্রশ্ণ থাকছেই৷ তাছাড়া মুনাফার লোভে ধীরে ধীরে পতিত জমির সীমা ছাড়িয়ে চা বাগানের জমিতে পর্যটন শিল্প থাবা বসাবে কি না, সে আশঙ্কার মেঘও উত্তরের আকাশে দেখা যাচ্ছে৷ সেটা হলে হতদরিদ্র চা শ্রমিকরা অগাধ জলে পড়বেন৷
(তথ্যসূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ ১৬ মার্চ ২০২৩)