70 Year 29 Issue 9 March 2018
রেল এ বছর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, গ্রুপ–ডি পদে ৮৯,৪০৯ জন কর্মী নিয়োগ করা হবে৷ গোটা দেশের চাকরি প্রার্থীদের কাছে এটা একটা বড় খবর নিশ্চয়ই৷ কিন্তু পাশাপাশি বহু সংশয়ও রয়েছে তাদের মধ্যে৷ ২০১৫ সালের বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে নিয়োগ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি৷ তার মধ্যেই হঠাৎ করে এত লোক নেওয়ার ঘোষণা কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে?
রেলে লোক হয়ত নেওয়া হবে কিছু৷ কারণ, শ্রম ছাড়া, শ্রমিক ছাড়া পৃথিবী অচল৷ ফলে, লোক কিছু নিতেই হবে৷ বিশেষ করে যেখানে দীর্ঘকাল ধরে রেলে প্রায় ২ লক্ষ পদ খালি পড়ে রয়েছে৷ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভায় বলেছিলেন, ‘‘রেলের মতো যে কোনও বড় সংস্থায় সব সময়ই ‘কিছু পদ’ ফাঁকা থাকে৷ এখানে কর্মী নিয়োগের কাজটা হল একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া৷’’ যদিও, তারপর নিয়োগ নয়, বরং শুরু হয়েছিল মোট পদের সংখ্যাটাকেই কমিয়ে দেওয়ার লাগাতার প্রক্রিয়া৷ রেল পরিষেবার জন্য নির্ধারিত মোট ১৭ লক্ষ পদ ছেঁটে ২০০৪–০৫ সালে, নীতিশকুমার–লালুপ্রসাদের আমলে করা হয়েছিল ১৪ লক্ষ এবং তখনই ২০১০ সালের মধ্যে আরও ২ লক্ষ কমাবার পরিকল্পনাও হয়েছিল৷ পরিসংখ্যান বলছে, সে পরিকল্পনা সম্পূর্ণ সফল হয়েছে৷ রেল মন্ত্রকের নিজস্ব তথ্যানুসারে কর্মীসংখ্যা বছরে বছরে কীভাবে কমেছে তা নিচের পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাবে৷
১৯৯০–৯১ বর্ষে কর্মীসংখ্যা ছিল ১৬,৫১,৮০০, পরবর্তী দশ বছরে কমে ২০০০–০১ বর্ষে দাঁড়ায় ১৫,৪৫,৩০০৷ পরের দশ বছরে আরও কমে ২০১০–১১ বর্ষে হয় ১৩,৩২,০০০, যা ২০১৪–১৫ বর্ষে হয় ১৩,২৬,৩০০ এবং ২০১৫–১৬ বর্ষে হয়েছে ১৩,৩১,৪০০৷
তা হলে দেখা যাচ্ছে, রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে নামমাত্র কিছু নিয়োগ চললেও সামগ্রিক ভাবে কর্মী সংখ্যা কমানো হচ্ছে৷ যার পরিণতিতে একদিকে সুষ্ঠু যাত্রী পরিষেবার ব্যাপক অভাব, অন্য দিকে দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে দেদার৷ অথচ, প্রতি বছর নানা ভাবে রেলের ব্যবসা বাড়ছে, আয় বাড়ছে৷
২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি আসার পর রেল ক্ষেত্রে কিছু কি বদলেছে? না, মন্ত্রীদের মুখ এবং তাঁদের ভাষণ দেওয়ার ভাবভঙ্গি ছাড়া আর কিছুই বদলায়নি৷ সেই একই কর্মী–সংকোচন নীতি, বেসরকারিকরণ ইত্যাদি সবই আগের কংগ্রেস সরকারের মতোই চলছে৷ তা হলে, নতুন কিছুই হয়নি? হ্যাঁ, সাধারণ টিকিটের ব্যাপক দামবৃদ্ধি হয়েছে, চাকরিতে নিয়োগসংক্রান্ত পরীক্ষাব্যবস্থা অন–লাইন করা হয়েছে এবং আবেদন–ফর্মের দাম বাড়ানো হয়েছে৷ কেন্দ্রে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে বিজেপি প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল৷ কিন্তু কোথায় চাকরি? কোথায় কর্মসংস্থান? চাকরি নেই৷ আছে চাকরির নামে খালি এই পরীক্ষা আর সেই পরীক্ষা৷ তারপর হঠাৎ পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া৷ আবার পরীক্ষা নেওয়া৷ নিজেরাই মামলা–মোকদ্দমা–বা দিয়ে নিয়োগের প্যানেল নিয়ে টাল–বাহানা করা৷ আরও কত কী কেন হয় না খালি পদগুলিতে নিয়োগ?
দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে এই প্রশ্ন জোরালো ভাবে উঠতে শুরু করেছে৷ বিজেপির ‘সুদিন’–এর গালগল্প বুদবুদের মতোই অতি দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে৷ ধর্মের নামে বিদ্বেষ–বিভাজন হালে পানি পাচ্ছে না৷ ‘উন্নয়নে’র মুখোশ খসে ধনতন্ত্রের বীভৎস মুখটা প্রকাশ্যে এনে দিচ্ছে একের পর এক দুর্নীতি৷ মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখছে বিজেপি আজ প্রকাশ্যে মালিক শ্রেণির পাশে দাঁড়িয়ে গেছে৷ ফলে, ২০১৯–এর লোকসভা ভোটকে লক্ষ রেখেই যে ‘রেলে প্রচুর চাকরি’র বিজ্ঞাপন, তা স্পষ্ট৷