১৮ এপ্রিল হায়দরাবাদে সিপিআই(এম)–এর ২২তম পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এস ইউ সি আই (সি)–র পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্য৷
প্রথমেই উপস্থিত সকলকে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর পক্ষ থেকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের পার্টি কংগ্রেস এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন গোটা দেশ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত৷ প্রায় সমস্ত শিল্পই বন্ধ হওয়ার মুখে, সর্বত্রই বহাল মন্দার আবহাওয়া৷ জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে আজ বেঁচে থাকাটাই দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ গরিব ও ক্ষুদ্র চাষিরা এই ধাক্কা সামলাতে না পেরে অধিকতর সংখ্যায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে৷ এই অসহনীয় অবস্থা যে শাসক পুঁজিপতি শ্রেণির মারাত্মক শোষণ ও শাসনেরই ফল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এর উপর কেন্দ্রে এবং রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি–আরএসএস সরকারি ক্ষমতা পাওয়ার ফলে যন্ত্রণাক্লিষ্ট শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নতুন করে অস্তিত্ব রক্ষার সংকট দেখা দিয়েছে৷ পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় মদতে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা, হত্যা, লুঠ প্রভৃতির মাধ্যমে গোটা দেশের পরিবেশকে এরা বিষাক্ত করে তুলছে৷ শুধু তাই নয়, আরও মারাত্মক বিষয় হল, বিজেপি–আরএসএস একদিকে ধর্মীয় অন্ধতা জাগিয়ে তুলছে, অন্য দিকে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনকে আরও কেন্দ্রীভূত ও জনবিরোধী করে দেশকে প্রশাসনিক ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ ফ্যাসিবাদ হচ্ছে মানবসমাজের নিকৃষ্টতম শত্রু৷
এই পরিস্থিতিতে সমস্ত বামপন্থী শক্তিগুলির অবশ্যকর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি রাজনৈতিক ‘কোর’ গঠন করে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য ঐতিহাসিক গণআন্দোলন পরিচালনা করা৷ সেক্ষেত্রে অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা দরকার একথা মনে রেখেই যে সকল বিজেপি বিরোধী শক্তি আদতে ধর্মনিরপেক্ষ নয়৷ সামন্ততন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় ক্রিয়াকলাপে ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই ইতিহাসের এক পর্যায়ে যথার্থ ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার জন্ম হয়েছিল৷ পরবর্তীকালে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বৈজ্ঞানিক গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়৷ এই ভাবধারা বিকাশের সর্বোচ্চ স্তরে মানুষকে ধর্মীয় অন্ধতা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়৷
সামগ্রিক পরিস্থিতির বিচারে, বিশেষ করে আরএসএস–বিজেপির বিপজ্জনক উত্থানের দিকে তাকিয়ে আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, দেশব্যাপী শক্তিশালী বামপন্থী আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার, যেমনটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার আগে জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে জাত–পাত–ধর্ম–ভাষা নির্বিশেষে সমস্ত অংশের খেটে–খাওয়া মানুষকে যুক্ত করে লাগাতার গণআন্দোলন পরিচালনার মধ্য দিয়ে৷ সেই সংগ্রাম আজ অত্যন্ত জরুরি৷ একথা সত্য যে, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে লোকসভা–বিধানসভা অভ্যন্তরে আন্দোলনের সহায়ক যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার৷ কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আইনসভার বাইরের সংগ্রামটাই প্রধান এবং সেটাই নির্ণায়ক শক্তি৷ আপনাদের পুনরায় অভিনন্দন জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি৷
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)