কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তর সম্প্রতি ‘পোষণ ট্র্যাকারস’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য আইসিডিএস (ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট স্কিম) প্রকল্পের উপভোক্তাদের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে, টিকাকরণ শিক্ষাদান সহ এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত বিভিন্ন কর্মসূচিকে আরও মসৃণভাবে কার্যকর করা। বাস্তবে, ১৯৭৫ সাল থেকে চলে আসা এই প্রকল্প গোটা দেশেই নূ্যনতম পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে এবং তার সাথে যুক্ত দেশের হাজার হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী উপযুক্ত বেতন, স্বীকৃতি, সরকারি সহায়তা ছাড়াই দিনের পর দিন প্রবল প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোর উন্নতি না করে এবং কর্মীদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবিগুলো মেটানোর চেষ্টা না করে ডিজিটালাইজেশন এর নামে এই অ্যাপ চাপিয়ে দেওয়া কার্যত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কঠিন লড়াইকে আরও দুঃসহ করে তুলেছে। কর্মীদের জন্য অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবস্থা করা, ফোনে নেট-সংযোগ এবং অবিচ্ছিন্ন নেট পরিষেবার ব্যবস্থা করার মতো জরুরি দায়িত্বগুলো এড়িয়ে গিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকার এই অ্যাপ চালানো, তাতে তথ্য ভরার যাবতীয় দায়দায়িত্ব ঠেলে দিচ্ছে অতি সামান্য মাইনের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ওপর। ইতিমধ্যেই সরকারি চাকরির স্বীকৃতি এবং সুযোগ সুবিধা থেকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত কর্মীরা এই অ্যাপকে কেন্দ্র করে নতুন করে প্রবল অসুবিধায় পড়ছেন, ব্যক্তিগত ফোনে এই অ্যাপ ইনস্টল করতে বাধ্য হচ্ছেন, সরকারি আধিকারিকদের অন্যায় জবরদস্তি এবং মানসিক উৎপীড়নেরও শিকার হচ্ছেন।
এর প্রতিবাদে ১৭ জুন কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ-তে বিক্ষোভ দেখাল এআইইউটিইউসি অনুমোদিত ওয়েস্ট বেঙ্গল অঙ্গনওয়াড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড হেল্পার্স ইউনিয়ন। সংগঠনের সম্পাদিকা মাধবী পণ্ডিত বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে হয়ত তথ্য পাওয়া যাবে, কিন্তু বাস্তবে এই প্রকল্প, তার উপভোক্তা এবং কর্মী-সহায়িকাদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হবে না। পানীয় জল-শৌচালয় এমনকি একটি বাড়ির অভাবে ধুঁকতে থাকা দেশের অসংখ্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হাল হকিকত একই থেকে যাবে। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ‘পোষণ ট্র্যাকারস’ অ্যাপ বাধ্যতামূলক না করা, প্রত্যেক কেন্দ্রের নামে সরকারি ভাবে অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং সিম কার্ড সহ নেটপ্যাক এর ব্যবস্থা করা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ভাতা প্রদান, মাসিক ২১০০০ টাকা বেতন-পিএফ-পেনশন-গ্র্যাচুইটি সহ সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি দেওয়া– এমন একগুচ্ছ দাবি তোলা হয়। এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এআইইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক দাস এবং পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন।
সমাবেশ থেকে দপ্তরের মন্ত্রী, ডিরেক্টর এবং রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। মন্ত্রীর দপ্তর তিন মাসের মধ্যে ‘পোষণ ট্র্যাকারস’ এর কাজের জন্য মোবাইলের ব্যবস্থা করা এবং আরও কিছু দাবি বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দেন। সরকার এই প্রতিশ্রুতি না রাখলে এবং অন্যান্য ন্যায্য দাবি না মানলে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।