তীব্র দাবদাহের মধ্যে কলকাতা সহ সারা রাজ্য জুড়েই মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ঘন ঘন লোডশেডিং এবং লো-ভোল্টেজের আক্রমণে। এই সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কোনও হেলদোল নেই। সরকারি এসইডিসিএল এবং গোয়েঙ্কাদের সিইএসসি দুই কোম্পানিই বিপুল লাভ করছে গ্রাহকদের ঘাড় ভেঙে। অথচ তারা কেউই পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে বেশি চাহিদার দিনে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এবং সঠিক ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থার জন্য এক পয়সাও খরচ করতে আগ্রহী নয়। যদিও নানা ভাবে তারা গ্রাহকদের ওপর বিলের বোঝা বাড়িয়ে চলেছে। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির সাম্প্রতিক মাশুল তালিকায় (ট্যারিফ চার্ট) বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি গড় মাশুল ৭ টাকা ১২ পয়সা অপরিপর্তিত রেখেও গৃহস্থ গ্রামীণ এলাকার ট্যারিফ চার্টের ৩০০ ইউনিটের স্ল্যাবে মাশুল বাড়িয়ে ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ৪৩ পয়সা থেকে ৭ টাকা ৬১ পয়সা করা হয়েছে। কমার্শিয়াল গ্রামীণ ক্যাটাগরি তুলে দেওয়া হয়েছে। কমার্শিয়াল ট্যারিফ এখন একটাই হবে, এবং সেটা শহর (আরবান) ট্যারিফের সমান। ফলে গ্রামীণ কমার্শিয়াল গ্রাহকদের প্রথম ও দ্বিতীয় স্ল্যাবে ইউনিট প্রতি ২ পয়সা করে বেশি দিতে হবে।
এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠন অ্যাবেকার সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস ২ মে এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির এই ট্যারিফ অর্ডার গ্রাহক স্বার্থবিরোধী। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ও বিদ্যুৎমন্ত্রী একাধিকবার় বিদ্যুতের মাশুল কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এবারের ট্যারিফে এক পয়সাও দাম কমানো হয়নি বরং কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। গত বছর যেভাবে ফিক্সড চার্জ ও মিনিমাম চার্জ বাড়ানো হয়েছিল তার আক্রমণে রাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্প ও ক্ষুদ্রকৃষি ধ্বংস হতে বসেছে। এই ট্যারিফে তার কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।
অ্যাবেকার সাধারণ সম্পাদক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জনবিরোধী বিদ্যুৎ বিল ২০২২’ অনুসরণ করে আস্তে আস্তে এ রাজ্যেও সকলের বিদ্যুৎ মাশুল সমান করার অপচেষ্টা চলছে। সুব্রত বিশ্বাস স্মরণ করিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার গ্রাহক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, এবং বিদ্যুৎ শিল্পের ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মচারীদের আন্দোলনের চাপে সংসদে ওই বিল পাস করাতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে অতি অবশ্যই এক অশনি সংকেত।
তিনি আরও বলেন, এবারের প্রবল দাবদাহে অতিষ্ঠ মানুষের জন্য গত বছরের মতোই রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি এবং সিইএসসি নিজের নিজের এলাকায় লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ সমস্যার কোনও সমাধান করেনি। যার ফলে এই গরমে পানীয় জলটুকু পর্যন্ত পেতে মানুষ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রাহক পরিষেবার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ট্রান্সফরমারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং ২৪ ঘন্টা উন্নত মানের বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে অ্যাবেকা।