বর্তমানে রাজ্যে ১৬টি জুট মিল কাঁচা পাটের অভাব দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
কেন কাঁচা পাটের অভাব? গত বছর কাঁচা পাটের ভাল উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও কেন পাটের অভাব? বর্তমানে চাষিদের হাতে পাট নেই, পাট বিক্রয়ের মাণ্ডিগুলিতেও পাট নেই। তাহলে কোথায় গেল পাট? সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বস্ত্র মন্ত্রকের অধীন জুট কমিশন ৬৫ হাজার টাকা প্রতি টন কাঁচা পাটের সহায়ক মূল্য ধার্য করেছে। জুট কমিশন চালু হয়েছিল পাটচাষিদের ন্যায্য মূল্য দেওয়া, পাট কেনা এবং জুটমিলগুলিকে সরবরাহ করার জন্য। কিন্তু জেসিআই বর্তমানে এক ছটাকও পাট কেনে না এবং কাঁচা পাটের বাজারের উপর এর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে সহায়ক মূল্য ধার্য করাও এক অন্তঃসারশূন্য ঘোষণা। পাট বর্তমানে খোলাবাজারের পণ্য এবং এখানে অবাধে কালোবাজারি ও মজুতদারি চলছে। এই কালোবাজারি ও মজুতদারির কারণেই কাঁচা পাটের অভাব।
একশ্রেণির ব্যবসায়ী এবং একশ্রেণির চটকল মালিক এই কালোবাজারিতে জড়িত। কাঁচা পাটের মজুতদারি ও কালোবাজারি বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালুর দাবি জানিয়েছে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)। দলের রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ৪ মে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে এই দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। রাজ্যে চটশিল্পের সঙ্গে ২.৫ লক্ষ শ্রমিক এবং ৪০ লক্ষ পাটচাষি যুক্ত রয়েছে। এদের স্বার্থেই রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করা জরুরি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত পাটনীতির জন্য এরা বিপন্ন। কেন্দ্রীয় সরকার পাটের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়ে সিন্থেটিক বস্তার ব্যবহার বাড়াচ্ছে বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থে। এটা প্রকৃতির পক্ষেও ক্ষতিকর। পাটতন্তু হল স্বাস্থ্যসম্মত তন্তু যা প্রকৃতিতে সহজেই মিশে যায়। এর ব্যবহারই তো গুরুত্ব দিয়ে বাড়ানো উচিত। ১৯৮৭ সালে দেশে চটের বস্তার অত্যাবশ্যকীয় ব্যবহারের আইন চালু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সরকারের বিনিয়ন্ত্রণ ও বিলগ্নিকরণের নীতির ফলে এবং সঠিক পাটনীতির অভাবের ফলে চটশিল্প মার খাচ্ছে এবং অস্বাস্থ্যকর সিন্থেটিক প্যাকেজিংকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সরকার সার, সিমেন্ট সহ খাদ্যদ্রব্য প্যাকেজিং-এও সিন্থেটিক বস্তার ব্যবহারের ঢালাও নীতি নিয়ে চলছে। সঙ্কট বাড়ছে চটশিল্পের। খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৭০ শতাংশ চটের বস্তা কেন্দ্রীয় সরকারকে কিনতে হয়। সরকার আবশ্যিকভাবে চটের বস্তা কিনলে সংকট এরূপ স্তরে পৌঁছত না।
এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর দাবি– সরকারকে জুট কমিশনের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি পাট কিনতে হবে এবং সেই পাট জুটমিলগুলিতে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যের মাধ্যমে পাট সংরক্ষণ ও বিক্রয় করতে হবে। অবিলম্বে সমস্ত বন্ধ চটগুলি খুলতে হবে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিতে হবে। পাটের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে এবং খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেজিং-এ অস্বাস্থ্যকর সিন্থেটিক বস্তার ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।