গত তিন মাসে কয়েক দফায় গ্যাসের দাম ২২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে লাগাতার ভরতুকি কমিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এই দুইয়ের ফলে গ্যাসে প্রায় সাড়ে চারশো টাকার অতিরিক্ত বোঝা চেপে গ্যাসের দাম হয়েছে ৮৪৫ টাকা। এই অবস্থায় হঠাৎ পাঁচটি রাজ্যে দ্বিতীয় দফা ভোটের মুখে এসে গ্যাসের দাম ১০ টাকা কমিয়ে ‘সরকার কত ভাল’ তার ফলাও প্রচার করছে বিজেপির নেতা-মন্ত্রী এবং প্রচারক বাহিনী।
বাস্তবে লাগাতার দাম বাড়িয়ে চলার পর ভোটের মুখে এসে ১০ টাকা দাম কমানোর মধ্য দিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত দেশবাসীর সাথে ঠাট্টাই করলেন বিজেপি নেতারা। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় বসার পর থেকে ‘জনগণকে কোনও ভরতুকি নয়, সব ভরতুকি পুঁজিপতিদের’ নীতি নিয়ে চলছে বিজেপি সরকার। সেই নীতি অনুসারেই সাধারণ ও গরিব মানুষের অপরিহার্য ডিজেল, কেরোসিন, রান্নার গ্যাস থেকে ভরতুকি কমাতে শুরু করে এবং এখন তা প্রায় শূন্যের কোঠায়। পেট্রলে ভরতুকি কংগ্রেস সরকারই তুলে দিয়েছিল।
দেশের মানুষকে ধোঁকা দিতে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য জ্বালানি তেল কিংবা গ্যাসের দাম বাড়ানোর পিছনে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়াকেই দায়ী করছেন– যা ডাহা মিথ্যা। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় বসার সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল পিছু ১৩০-১৪০ ডলার। মার্চের গোড়াতেও দাম ছিল ৭০ ডলার, এখন তা আরও নেমে এসেছে ৬৩ ডলারে। অথচ সম্পূর্ণ উল্টো রাস্তায় হেঁটে তেল-গ্যাসের দাম বাড়িয়েই চলেছে বিজেপি সরকার। ২০১৪ সালের ১ মার্চ রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৪১০.৫ টাকা। আর এ বছর মার্চে সেই একই সিলিন্ডারের দাম হয়েছে ৮৪৫ টাকা। একই ভাবে গত সাত বছরে বেড়েছে রেশনে সরবরাহ করা কেরোসিনের দামও। ২০১৪ সালে লিটার প্রতি ১৪.৯৬ টাকা থেকে বেড়ে ২০২১-এ তা হয়েছে ৩৬ টাকার উপর।
সরকার যদি সত্যিই সাধারণ মানুষকে বিপুল মূল্যবৃদ্ধি থেকে রেহাই দিতে চাইত তবে যে বিপুল পরিমাণ করের বোঝা তেল-গ্যাসের উপর তারা চাপিয়ে রেখেছে তা খানিকটা কমাতে পারত। সরকার চাইলে তেল কোম্পানিগুলির বিপুল মুনাফা কিছুটা কমিয়ে মানুষকে সুরাহা দেওয়ার জন্য তাদের বাধ্য করতে পারত। কিন্তু আম্বানি, আদানি গোষ্ঠী, এসার গোষ্ঠীদের লাভের সুযোগ করে দিতে সে চেষ্টা করেনি। বাস্তবে সরকার রান্নার গ্যাস এবং তেলের দাম বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সরকারি কোষাগারকেও ভরিয়ে তুলেছে। পেট্রোপণ্য এবং এলপিজির উপর চাপানো উৎপাদন শুল্ক থেকে গত ৯ মাসে ৩ লক্ষ কোটি টাকা জমা পড়েছে কেন্দ্রের কোষাগারে। যা গত সাত বছরে সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিষয়ক মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের দেওয়া। তথ্য অনুযায়ী, এই প্রথম ৯ মাসের মধ্যেই তেল-গ্যাসের শুল্ক আদায় ৩ লক্ষ কোটি ছাড়াল। মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, গত ৭ বছরে পেট্রোপণ্যে কেন্দ্রের সংগৃহীত শুল্কের পরিমাণ ৪৫৯ শতাংশ বেড়েছে (সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ মার্চ, ২০২১)।
ফলে সরকারের দাম বাড়ানোর পিছনে কাজ করেছে একদিকে সরকারি এবং বেসরকারি তেল কোম্পানিগুলির বিপুল মুনাফার সুযোগ করে দেওয়া, কার্যত তাদের হাতে তেল-গ্যাস সহ প্রাকৃতিক সমস্ত সম্পদ তুলে দিয়ে অবাধ লুঠের সুযোগ করে দেওয়া, অন্য দিকে অস্বাভাবিক রকমের চড়া সরকারি কর চাপানো। তার সঙ্গে রয়েছে জনগণকে কোনও কিছুতেই ভরতুকি না দেওয়ার বিজেপি সরকারের নীতি। এই যে সরকারের আসল চরিত্র সে সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা আজ এ রাজ্যে এসে যে অজস্র প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে, সেগুলি যে সবই আসলে জুমলা অর্থাৎ লোক ভোলানো কথা, মানুষকে তা অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝে নিতে হবে।