রাজকোটের গেমিং জোন অগ্নিকাণ্ড
২৫ মে গুজরাটে রাজকোটের গেমিং জোনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯ শিশু সহ ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন। জানা গেছে, যে বহুতলে গেমিং জোন, তার গোটাটাই ছিল দাহ্য পদার্থে ঠাসা। ফ্লোর সাজানোর জন্য ছিল রাবার, রেক্সিন, থার্মোকল এবং ফোমের মতো দাহ্য পদার্থ। ফাইবার, কাপড়, কাঠ, টিনের শেডও ছিল। ওই গেমিং জোনে মেরামতির জন্য ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল।
সেই অবস্থাতেই সেখানে ৫০০ টাকার প্রবেশ টিকিটে ব্যাপক ছাড় দিয়ে মাত্র ৯৯ টাকার বিনিময়ে নানা বিনোদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ দুর্ঘটনার দিন ভিড় জমান সেখানে। হঠাৎই লাগা আগুনে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেকে পুড়ে মারা যান। এতটাই ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে যে, বহু মানুষকে শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্ট পর্যন্ত করতে হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, গেমিং জোনের কোনও ফায়ার লাইসেন্স ছিল না। কী ভাবে এতদিন কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই এই গেমিং জোন চলছিল, তা নিয়ে গুজরাট হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের বিজেপি সরকার এবং রাজকোট পুরসভার প্রতি। এই বিপর্যয় ‘মানুষের তৈরি’ এই তোপ দেগে হাইকোর্ট সরকারকে বলেছে, ‘আপনারা কি অন্ধ হয়ে গেছেন, নাকি ঘুমিয়ে ছিলেন’? কোর্ট এটাও বলেছে, ‘এখন আর আমরা স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারকে বিশ্বাস করি না।’ উল্লেখ্য, আমেদাবাদের কয়েকটি গেমিং জোনের প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নেই জেনেও উষ্মা প্রকাশ করেছে কোর্ট।
আনন্দ করতে এসে ৩৩টি তাজা প্রাণ গিয়েছে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে। গেমিং জোনের মালিক সহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। তদন্তের ভার হাতে নিয়েছে সিট। এমনকি রাজকোট পুলিশ কমিশনার, পুরসভার কমিশনার, দুই আইপিএস অফিসারের শাস্তিমূলক বদলি হয়েছে, ন’জন আধিকারিক সাসপেন্ড হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কোনও নিরাপত্তা বিধি না মানা সত্তে্বও এই গেমিং জোনটি চলছিল কী করে? ইতিপূর্বে আমেদাবাদের গেমিং জোনগুলি কোনও নিরাপত্তা বিধি না মানায় দুর্ঘটনা ঘটা সত্তে্বও রাজ্যের বিজেপি সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? তারা তো অন্য কারও ঘাড়ে দোষ চাপাতে পারবে না। ১৯৯৫ সাল থেকে একটানা রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। দীর্ঘদিন চলছে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারও। সরকার চাইলে নিরাপত্তাবিধি না মানার জন্য এই ব্যবসা বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে পারত। প্রশ্ন উঠেছে, শাসক দলের সাথে কর্তৃপক্ষের ‘বিশেষ লেনদেনের’ ফলেই কি চোখ বুজে ছিল বিজেপি সরকার? নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দায় কে নেবে? কয়েক দিন পরে যে আবার এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না, তার নিশ্চয়তাই বা কে দেবে?
এর আগে সরকারি অবহেলার পরিণামে বিজেপি শাসিত এই গুজরাটেই মোরবি সেতু দুর্ঘটনায় ১৪১ জন মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন ১৮০-র বেশি। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের ভার বিজেপি পরিচালিত পুরসভা দিয়েছিল ঘড়ি কোম্পানি ওরেভাকে। সেতু সারাইয়ে নিম্নমানের জিনিস ব্যবহার করা হয়েছিল, তা প্রশাসন জানত। অথচ এতগুলি প্রাণ চলে যাওয়ার পরও শাস্তি হয়নি কারও।
বিজেপি সরকারের সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা কতটা, বোঝা যায় একের পর এক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুতে। সাধারণ মানুষের প্রতি কতটা উদাসীন হলে তারা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে পারে! সাধারণ মানুষের স্বার্থ নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র চিন্তিত হলে এই মারণ ব্যবসা তারা চলতে দিত কি? মালিকরা লাভ, আরও লাভের দিকে তাকিয়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তাদের ব্যবসা চালায়। আর তাদের দক্ষ ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করে চলেছে সরকার। সেজন্য অসংখ্য মানুষের মৃত্যুতে একটু দুঃখপ্রকাশ আর সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়েই তারা হাত ধুয়ে ফেলে।