এ দেশের সবচেয়ে ধনী পাঁচ জনের মধ্যে চার জনই গুজরাটের মানুষ৷ ২০১৯ সালে অতি ধনীদের যে তালিকা তৈরি করেছে ফোর্বস, সেখানে রয়েছে এই তথ্য৷ ধনকুবেরদের মধ্যে টানা ১২ বছর ধরে এক নম্বর স্থানটি রয়েছে মুকেশ আম্বানির দখলে৷ তালিকায় তার পরেই উঠে এসেছে শিল্পপতি গৌতম আদানির নাম৷ এছাড়া পালনজি মিস্ত্রি ও উদয় কোটাকের নাম রয়েছে তালিকার চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে৷
সবই ঠিক ছিল৷ ২৫ বছর ধরে গুজরাটে ক্ষমতায় রয়েছে ‘আচ্ছে দিন’–এর মহান কারিগর বিজেপি৷ তাদের উন্নয়নের মডেল রাজ্য– সাধের ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাট’–এর তো এমন ঝলকই দেখাবার কথা কিন্তু মুশকিল করেছে খোদ বিজেপি রাজ্য সরকারেরই একটা তথ্য৷ বিধানসভায় পেশ হওয়া সেই সরকারি তথ্য বলছে, ‘ঝলমলে’ গুজরাটের ১ লক্ষ ৪২ হাজারেরও বেশি শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে৷ হিসাবের খাতার বাইরে যে রয়ে গেছে আরও বহু, তা বলাই বাহুল্য৷ স্বাভাবিক ভাবে আদিবাসী অধ্যুষিত দাহোড় ও নর্মদার মতো জেলাতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অপুষ্ট, রুগ্ন শিশু৷ কিন্তু ছবিটা বিশেষ অন্য রকম নয় আনন্দ–এর মতো সমৃদ্ধ এলাকাতেও৷ ধনী প্রবাসী গুজরাটিদের বাস এই আনন্দে৷ কিন্তু সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ হেন আনন্দেও ছ’হাজারের বেশি বাচ্চা অপুষ্টির শিকার৷
শুধু শিশু–পুষ্টিই নয়, ২০১৮–র একটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আগের দু’বছরের তুলনায় সে বছরে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাওয়া পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে এক–আধটা নয়, প্রায় ১৯ হাজার৷ সরকার নিজেই বিবৃতি দিয়েছে, গুজরাটে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারের সংখ্যা ৩১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪১৩টি৷ পরিবারপিছু সদস্যসংখ্যা গড়ে ৫ জন হলে রাজ্যে খেতে না–পাওয়া মানুষের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি৷ গোটা দেশ জুড়ে আজ বেকারির ভয়ঙ্কর থাবা, নোটবন্দি ও জিএসটি যা আরও বাড়িয়েছে৷ গুজরাটও ব্যতিক্রম নয়৷ ফলে গত এক বছরে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যাটা সেখানে যে আরও বেড়েছে বৈ কমেনি, তা বলাই যায়৷
উন্নয়নের মডেল রাজ্য ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাটে’র আসল চেহারা তাহলে এই ২৫ বছরের শাসনে বিজেপি তাহলে সেখানে এ হেন ‘রামরাজ্য’ই স্থাপন করেছে, যেখানে উন্নয়নের সমস্ত সুফল শুষে নিচ্ছে হাতে–গোনা কয়েকজন ধনকুবের, আর খালি পেটে, ছেঁড়া জামাকাপড়ে ফুটপাতে দিন গুজরান করছে লক্ষ লক্ষ মানুষ, খুঁটে খাচ্ছে ডাস্টবিনের খাবার
(সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া–২৪ মার্চ, ’১৮ এবং পিটিআই–৯ জুলাই, ’১৯)