২৬ জুন গুজরাটের ‘ক্রান্তিগুরু শ্যামজি ভার্মা কচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়’–এর রসায়নের অধ্যাপক গিরিন বক্সিকে মুখে কালি লাগিয়ে চূড়ান্ত হেনস্থা করল আরএসএস–বিজেপির ছাত্র শাখা এবিভিপি৷ তিনি তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন৷ এবিভিপির দুষ্কৃতীরা ক্লাসে ঢুকে তাঁকে টানতে টানতে বের করে এনে মুখে কালি মাখিয়ে দেয়৷ এবিভিপির অভিযোগ, আসন্ন সেনেট নির্বাচনের জন্য তাদের সমর্থকদের ভোটার রেজিস্ট্রেশন ফর্ম অবৈধ বলে তিনি বাতিল করে দিয়েছিলেন৷
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এআই ডিএসও–র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড অশোক মিশ্র ২৮ জুন এক বিবৃতিতে বলেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে এবিভিপি তার সংস্কৃতির প্রমাণ দিল৷ তিনি আরও বলেন, এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়৷ ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে মাধব কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ডঃ এইচ এস সাভারওয়ালকে কলেজ ক্যাম্পাসেই আক্রমণ করে এবিভিপি৷ পরের দিন হাসপাতালে তিনি মারা যান৷ ২০০৮ সালে উজ্জয়িনীতে শহরে মহারাজা কলেজের প্রিন্সিপালকে তারা আক্রমণ করে, কারণ তিনি পরীক্ষায় নকল করতে বাধা দিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসে জুলজি বিভাগের ডঃ উমেশ রাইকে এবিভিপি হেনস্থা করে৷ ২০০৬ সালে ১৮ মার্চ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চমনলাল যখন ‘ভগৎ সিং–এর জীবন ও রচনা’ শীর্ষক এক আলোচনা করছিলেন তখন তাঁর উপর এবিভিপি হামলা চালায়৷ ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রশান্ত চক্রবর্তীকেও এবিভিপি মারধর করে, কারণ তিনি রামযশ কলেজে ছাত্রদের সভা করতে না দেওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন৷ এ বছরের জানুয়ারিতে হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ডঃ কে লক্ষ্মীনারায়ণকেও ওরা হেনস্থা করে৷
২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই জাতীয় আক্রমণ অনেক বেড়ে গিয়েছে৷ এই ঘটনাগুলি দেখাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনে অধ্যাপকদের, বুদ্ধিজীবীদের নিরাপত্তা কত বিপন্ন৷ এর আগে বিজেপির মাতৃসংগঠন আরএসএসের মতাদর্শে প্রভাবিত দুষ্কৃতীরা কর্ণাটকে অধ্যাপক কালবুর্গীকে হত্যা করেছে, মহারাষ্ট্রের যুক্তিবাদী মানুষ গোবিন্দ পানসারেকে হত্যা করেছে৷ হত্যা করেছে প্রখ্যাত সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকেও৷ মুক্ত চিন্তার মানুষ, যুক্তিবাদী–প্রগতিবাদী মানুষ বিজেপির বড় অসহ্য৷ বিজেপির, আর এস এসের চিন্তার থেকে ভিন্ন মত পোষণ করলেই ওরা নামিয়ে আনছে আক্রমণের খড়গ৷
সারা দেশে এখন বিজেপি বুদ্ধিজীবীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের নাটক করছে৷ কিন্তু তাতে সাড়া পাচ্ছে না৷ বিশেষ স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত না হলে কোনও বিবেকবান যুক্তিবাদী মানুষই আরএসএস–বিজেপির ইতিহাস, বিজ্ঞান বিরোধী, কুসংস্কারাচ্ছন্ন পিছিয়ে পড়া চিন্তাকে শিরোধার্য করতে পারেন না৷ গণেশের মাথা– প্রাচীন ভারতে প্লাস্টিক সার্জারির বিপুল অগ্রগতির প্রমাণ এমন উদ্ভট দাবি সত্যকার কোনও বুদ্ধিজীবী মানতে পারেন কি? আধুনিক জ্ঞান–বিজ্ঞানের পরিবর্তে প্রাচীন যুগের পিছিয়ে পড়া ধ্যানধারণা নিয়ে চললে যে প্রগতির পথ রুদ্ধ হবে একথা না মানলেই আক্রমণ করছে বিজেপি৷ এমন আক্রমণই আদর্শগত ভাবে দেউলিয়া বিজেপির সম্বল৷ বুদ্ধিজীবীদের চিন্তাগত দিক থেকে জয় করার মতো কোনও আদর্শ বা যুক্তি বিজেপির ঝুলিতে নেই৷ আশার কথা ইতিহাস, বিজ্ঞানের বিকৃতির বিরুদ্ধে বা শরণার্থীদের নিয়ে বিজেপির ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবাদ করে ইতিমধ্যে দেশের বহু বুদ্ধিজীবী মুখ খুলেছেন৷
আসামে এনআরসি–র নামে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো ও লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ছারখার করে দেওয়ার বিরুদ্ধেও বুদ্ধিজীবীরা সরব হয়েছেন৷ বিজেপি এবং তার ছাত্র শাখা এবিভিপি ন্যক্কারজনক আক্রমণ চালিয়ে প্রমাণ করল তাদের কাছে যুক্তি এবং সত্যের মূল্য নেই৷
(৭০ বর্ষ ৪৬ সংখ্যা ৬ জুলাই, ২০১৮)