গাজা গণহত্যার সময়ে ইজরায়েলের হাতে মোদি সরকারের অস্ত্র কেন

ফাইল ফটো

গাজায় গণহত্যার রক্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত লাল! সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদ সে কথাই বলছে। জানা গেছে, স্পেন সরকার একটি জাহাজ আটকে দিয়েছে যেটিতে ভারত থেকে প্রায় ২৭ টন বিস্ফোরক পাঠানো হচ্ছিল ইজরায়েলের উদ্দেশ্যে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গর্বের সঙ্গে দাবি করেছেন, রমজান মাসে গাজায় ইজরায়েলের হামলা তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বলেছেন, ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে পবিত্র বলে গণ্য রমজান মাসে গাজায় হামলা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে বিশেষ দূত পাঠিয়েছিলেন তিনি। আরও বলেছেন, ‘‘আমার় পরামর্শ মেনে যতটা করা যায় নেতানিয়াহু করেছিলেন। মাসের শেষ কয়েকটা দিনে শুধু সেখানে সংঘর্ষ হয়েছিল’’। এ দিকে খবরে প্রকাশ, রমজান মাসের প্রথম দশ দিনেই ইজরায়েল ৮০০-র বেশি প্যালেস্টিনীয়কে হত্যা করেছে।

আর একটি বিষয় প্রকাশ্যে এসে ইজরায়েলের গণহত্যায় ভারতের সহযোগী ভূমিকার কথা ফাঁস করে দিয়েছে। স্পেন সরকার তাদের বন্দরে এমন একটি জাহাজের নোঙর করা আটকে দিয়েছে যেটিতে ভারত থেকে বোঝাই করে বিস্ফোরক নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ইজরায়েলে। এ দেশের চেন্নাই বন্দরে জাহাজটিতে ওই বিস্ফোরক মজুত করা হয়েছিল ৮ এপ্রিল। অর্থাৎ তখনও রমজান মাস চলছে। ২১ মে কার্টাজেনা বন্দরে জাহাজটি নোঙর ফেলার অনুমতি চাইলে স্পেন সরকার রাজি হয়নি। সেখানকার বিদেশ মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘ ওই জাহাজে ইজরায়েলের জন্য অস্ত্র যাচ্ছে জেনে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। মধ্যপ্রাচ্যের আর অস্তে্রর প্রয়োজন নেই, সেখানে এখন শান্তির প্রয়োজন।’’ ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে স্পেন বরাবরই গাজায় ইজরায়েলের হানাদারির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্রসংঘের পূর্ণ সদস্য করার যে প্রস্তাব ইউএন-এর সাধারণ সভায় নেওয়া হয়েছিল, স্পেন তাতে সমর্থন জানিয়েছিল।

অন্যদিকে শুধু এবারই নয়, ভারত থেকে আগেও অস্ত্রশস্ত্র ভরা জাহাজ সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে ইজরায়েলের উদ্দেশ্যে। বিক্ষোভের ভয়ে স্লোভেনিয়ায় যাওয়ার নাম করে আসলে ইজরায়েলেই প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে পুণের একটি ভারতীয় কোম্পানি। তারও আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে হায়দ্রাবাদে আদানির একটি কোম্পানি ২০টি ড্রোন পাঠিয়েছে যেগুলি গাজায় গণহত্যা চালাতে ব্যাপক ভাবে ব্যবহারও করেছে সাম্রাজ্যবাদী ইজরায়েল। গত নভেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ভারতের একটি বেসরকারি কোম্পানি ইজরায়েলে বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর অনুমতি পেয়েছে। এমনকি খোদ ভারত সরকারের সংস্থা ‘মিউনিশন্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ পর্যন্ত ইজরায়েলে অস্ত্র বিক্রি করেছে। অর্থাৎ ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে যতটুকু পারা যায় চাঙ্গা করতে অস্ত্র তথা যুদ্ধ ব্যবসায় উৎসাহ নিয়ে নেমে পড়েছে ভারত। সেই কারণেই গত মাসে যখন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল গাজায় যুদ্ধবিরতি চালু করা ও ইজরায়েলে অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করার লক্ষ্যে ভোটের আয়োজন করেছিল, ভারত সেই ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি।

সাম্প্রতিক এই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের ভূমিকা নিয়ে গর্ব করে বলেছেন, ‘‘ভারতে মুসলিমদের সঙ্গে আমার আচরণ নিয়ে আপনারা সবাই আমাকে কোণঠাসা করেন, অথচ দেখুন, গাজায় মুসলিমদের জন্য আমি কী করেছি’!’

সে দিনের সাক্ষাৎকারে উপস্থিত সাংবাদিকরা কেউই অবশ্য নরেন্দ্র মোদিকে বলেননি যে, মোদিজি, আপনি আসলে সত্যের গলা টিপে ধরেছেন! তাঁরা তাঁকে বলতে পারেননি যে, যতই আপনি গাজার মুসলমানদের ত্রাতা সাজার চেষ্টা করুন, আসলে সেখানকার শত শত মৃত শিশু নারী ও পুরুষের রক্তে আপনার হাতদুটি আজ লাল।

(সূত্রঃ দ্য ওয়্যার, ১৭ মে, ‘২৪)