কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের চার বছর অতিক্রান্ত৷ এই চার বছরে নরেন্দ্র মোদি যতগুলি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার অধিকাংশই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে৷ এরই জ্বলন্ত একটি উদাহরণ ‘উজ্জ্বলা যোজনা’৷
প্রকল্পটি চালু হয়েছিল ২০১৬ সালে৷ এর মাধ্যমে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া মানুষ, তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষ ঝুপড়িবাসী, দলিত সম্প্রদায়, চা–বাগানের বাসিন্দা, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষায় থাকা গ্রাহক সহ বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের মহিলা সদস্যের নামে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল৷ তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল পাঁচ কোটি দরিদ্র পরিবারে গ্যাস সংযোগ দেওয়া৷
তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত ৩ কোটি ৮০ লক্ষ পরিবারকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে৷ অর্থাৎ, ১ কোটি ২০ লক্ষের বেশি পরিবার এমনিতেই প্রকল্পের বাইরে থেকে গেছে৷ সরকার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ৷ দ্বিতীয়ত উপযুক্ত পরিবার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি ও নানা ত্রুটি–বিচ্যুতি৷ প্রকল্পটি চালু করার সময় সরকার ২০১১ সালের সোসিও ইকনমিক–কাস্ট সেনসাস–এর ভিত্তিতে প্রাপকদের যে তালিকা তৈরি করেছিল তাতেই ছিল জল৷ ফলে বহু দরিদ্র পরিবারের কাছে এই সুযোগ পৌঁছায়নি৷
তবে এদেশের শাসকদলগুলির স্বজনপোষণের রীতি মেনেই এমন অনেক পরিবার এই সুযোগ পেয়েছে যাদের প্রয়োজন নেই৷ অনেকেই নিজেদের গ্যাস বিক্রি করে দিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী গলার জোরে যতই একে ‘মহিলাদের ক্ষমতায়ন’ বলুন না কেন, বাস্তব হল– গ্রাহককে স্টোভ ও আনুসঙ্গিক সবকিছুই কনতে হয়েছে পকেটের টাকা খরচ করে৷ এমনকী শুরুতে দেওয়া ভর্তুকির টাকাও পরবর্তীকালে মাসিক কিস্তিতে মেটাতে হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, প্রথম সিলিন্ডারটি ছাড়া পরে সবগুলিই নিজের পয়সা দিয়েই কিনতে হয়েছে৷ লাভ কি কারও হয়নি? হয়েছে৷ তেল কোম্পানিগুলি সংযোগ পিছু ১৬০০ টাকা সরকারের থেকে আদায় করে নিয়েছে৷ কিন্তু গ্যাস বেচেছে পুরো দামে৷ গরিব মানুষের নাম করে পকেট ভরেছে আম্বানি–আদানিদের৷
এ কথা অনেকেরই স্মরণে আছে, এই প্রকল্প চালু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত অনুষ্ঠানে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারগুলিকে ভর্তুকি ছেড়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ যাতে গরিব পরিবারগুলিকে গ্যাস সরবরাহ করা যায়৷ দেখা গেল প্রায় ১ কোটি পরিবার স্বেচ্ছায় ভর্তুকির টাকা ছেড়ে দিলেও মহা জনদরদি দেশের সাংসদ, নেতা, মন্ত্রীরা কিন্তু এই সুবিধা ছাড়েননি৷ প্রধানমন্ত্রীও সেই তালিকাতেই পড়েন৷
২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারের সাফল্য দু’বেলা টিভি–রেডিওতে ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু বছরে ২ কোটি চাকরি, প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা পৌঁছে দেওয়া বা আবাস যোজনায় সকলের বাড়ি পাওয়ার প্রকল্পগুলি সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত৷ একই হাল ‘উজ্জ্বলা যোজনার’৷ দেশের সাধারণ মানুষ আজ এটা বুঝতে পারছেন যে এটাও একটা জুমলা বা প্রতারণা তাই দ্বিতীয় পর্যায়ে এই প্রকল্পের জন্য এখন আর কোনও পরিবারকে পাওয়া যাচ্ছে না৷
(৭১ বর্ষ ৫ সংখ্যা ৩১ আগস্ট, ২০১৮)