ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (এফসিআই) গুদামে চাল-ডাল-গম উপচে পড়ছে। কিন্তু এই খবরে দেশবাসীর উৎফুল্ল হওয়ার কোনও কারণ নেই। করোনা অতিমারিতে ও পুঁজিবাদী অর্থনীতির দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় রুজি-রোজগার হারানো কোটি কোটি মানুষের মুখে এই খবর কোনও হাসি ফোটাতে পারেনি। কারণ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ঘোষণা করেছে, এই উপচে পড়া খাদ্যশস্য তারা অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা মানুষের হাতে নয়, তুলে দিচ্ছে মদ (ইথানল) প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির হাতে। শুধু তাই নয়, এই মদ ব্যারনরা যাতে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করতে পারে তার জন্য চালের সাথে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণও মঞ্জুর করেছে খাদ্য মন্ত্রক। আজ মদ কারবারিদের সাথে সরকারের বোঝাপড়া চলছে প্রকাশ্যেই। একে অপরকে দেখার অলিখিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মদ কারবারিরা শাসক দলকে টাকা জোগায় আর বিনিময়ে শাসক দল তাদের নানা সুবিধা পাইয়ে দেয়। এবার ভুখা জনতার মুখের গ্রাসই বিজেপি সরকার তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এতে মদ কোম্পানিগুলি আর বিজেপি নেতাদের পেট মোটা হলেও দেশের ভুখা জনতাকে খালি পেটেই দিন কাটাতে হবে।
এফসিআই ও রাজ্যের সংস্থাগুলির গুদামে ৭৫২ লক্ষ টন খাদ্যশস্য মজুত রাখার ক্ষমতা রয়েছে। বাফার স্টক (আপৎকালীন ব্যবস্থা) হিসাবে সরকারের কাছে ৩০৭ লক্ষ টন খাদ্যশস্য রাখার কথা। কিন্তু ১ অক্টোবরের হিসেবে গুদামগুলিতে প্রায় ৬৩০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য রয়েছে। তার উপর কৃষি মন্ত্রকের নির্দেশে খরিফ মরসুমে (আগস্ট-নভেম্বর) ধান কেনা চলছে। সেটাও সব রাজ্যে নয়, যে সমস্ত রাজ্যে (যেমন, পাঞ্জাব) কৃষকরা কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরোধিতায় লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে কিছু ধান সরকার কিনেছে। কিন্তু আগামী মাসগুলিতে রেশনে বরাদ্দ চাল-গম দেওয়ার কোনও ঘোষণা সরকার করেনি। নভেম্বর মাসেই মাথাপিছু ৫ কেজি চাল ও ১ কেজি ডাল দেওয়ার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে রেশনে চাল না দিয়ে মদ (ইথানল) প্রস্তুতকারী সংস্থার হাতে তা তুলে দেওয়ার জন্য সরকার এফসিআইকে বলেছে।
ক্ষুধা সূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে ভারতের জায়গা হয়েছে ৯৪। এই অবস্থায় ক্ষুধামুক্ত করার জন্য প্রয়োজন ছিল বিনা পয়সায় ওই খাদ্য জনগণকে দেওয়া। কিন্তু সরকার তেল আমদানির খরচ কমানোর অজুহাত তুলে ইথানল তৈরি করতে চাল ব্যবহার করতে চলেছে। এমন কাজ বিজেপির মতো চরম জনস্বার্থ বিরোধী একটি সরকারই করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এখন তলানিতে। তা ছাড়া আম্বানিদের মতো বড় বড় তেল কোম্পানিগুলি তেলক্ষেত্র থেকে অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করে চলেছে। সরকার চাইলে অনায়াসে সেই মুনাফা খানিকটা ছাঁটাই করতে পারত। তা না করে গরিবের খাদ্য কেড়ে নেওয়াটাকেই তারা সহজ ব্যবস্থা হিসেবে মনে করল।
করোনা অতিমারিতে যখন রুটি-রুজি হারানো অনাহারী মানুষগুলির কাছে আরও বেশি করে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছনোই সরকারের প্রধান কর্তব্য ছিল তখন মদ প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে চাল বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের চরম জনবিরোধী চরিত্রকেই প্রকট করল। সাথে এটাও পরিষ্কার হল, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় ক্ষমতাশালী দলগুলি মালিক শ্রেণিরই স্বার্থ দেখে, সাধারণ মানুষের স্বার্থ তাদের কাছে নিতান্তই ফেলনা।
(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ১১ সংখ্যা_২৭ নভেম্বর, ২০২০)