১৮৫৫ সালের ৩০ জুন বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলার ভগ্নাডি গ্রামে হাজার হাজার শোষিত নির্যাতিত প্রতিবাদী মানুষের সমাবেশের মধ্য দিয়ে হুল বা সাঁওতাল বিদ্রোহ সূচনা হয়েছিল। জমিদার, মহাজন ও পুলিশ প্রশাসনের শোষণ-অত্যাচারের প্রতিবাদে সমবেত এই জনতাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিদো মুর্মু ও কানহু মুর্মু। পুলিশ সিদো-কানহুকে গ্রেপ্তারের আদেশ দিলে সশস্ত্র আন্দোলন বা হুল শুরু হয়। একদিকে তির-ধনুক সহ প্রাচীন অস্ত্র নিয়ে নিপীড়িত মানুষ, অন্যদিকে বন্দুক-কামানের মতো আধুনিক অস্তে্র সজ্জিত পুলিশ– এই অসম লড়াইয়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ আত্মাহুতি দেন। ইতিহাসে এটি সাঁওতাল বিদ্রোহ হিসাবে উল্লেখিত হলেও এতে কামার, কুমোর, জোলা, তাঁতি প্রভৃতি নিম্নবর্ণের হিন্দু ও গরিব মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এই ঐতিহ্যমণ্ডিত লড়াইয়ের শহিদদের স্মরণে ৩০ জুন অল ইন্ডিয়া জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির আহ্বানে গভীর শ্রদ্ধায় দেশ জুড়ে পালিত হয় হুল বার্ষিকী। সিদো-কানহুর মূর্তি, শহিদ বেদি ও প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক, দিল্লি প্রভৃতি রাজ্যে হুল দিবস পালিত হয়। কলকাতার সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি ও জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির অন্যতম আহ্বায়ক বিসম্বর মুড়া। উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক পরিমল হাঁসদা সহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা।
১-৭ জুলাই বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৬৬তম হুল বার্ষিকী পালিত হয়। কমিটির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়– ১) আদিবাসী ও চিরাচরিত বনবাসীদের জঙ্গল-জমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। জঙ্গলের অধিকার আইন-২০০৬- এর উপর সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ের ফলে এগারো লক্ষের মতো মানুষ রুটি রুজি ও আশ্রয় হারানোর সম্মুখীন হয়েছেন, সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। জঙ্গলের অধিকার পুরোপুরি কার্যকর করে আদিবাসী ও চিরাচরিত বনবাসীদের জঙ্গলে প্রবেশের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে, ২) বর্তমান করোনা অতিমারিতে বিনামূল্যে করোনা প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। গ্রামীণ হাসপাতালগুলিকে চালু রাখার যথাযথ উদ্যোগ ও দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সমস্ত হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিও যাতে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়ে বেকার হওয়া ও গরিব মানুষদের রুটি রুজির জন্য কৃষিকাজে সরকারকে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। যে ভেস্টেড জমি বা জঙ্গলের জমিতে গরিব মানুষ চাষ আবাদ করেন সেই জমি কেড়ে নেওয়ার যে প্রক্রিয়া সরকার বন দপ্তরকে দিয়ে শুরু করিয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, ৩) ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে পর্যাপ্ত পরিমাণে রেশন দিতে হবে। জমিকে কৃষি উপযোগী করার জন্য চাষিদের সরকারি সাহায্য দিতে হবে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত ও কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করতে হবে, ৪) রাজ্যে রাজ্যে আদিবাসীদের জমি রক্ষার আইনগুলি সংশোধন করা যাবে না, ৫) কোনও অজুহাতেই অরণ্যের অধিকার কর্পোরেট ও পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।