কংগ্রেস পরিচালিত পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে খুচরো–মাঝারি ব্যবসায় দেশি–বিদেশি একচেটিয়া পুঁজিপতিদের জন্য দরজা খোলা শুরু হয়েছিল৷ এবার বিজেপি সরকার সেই দরজা ১০০ শতাংশ খুলে দিল৷ সকলেই জানেন, ছোটখাটো দোকানে ও হকারিতে নানাভাবে খুচরো জিনিস বিক্রিবাটাতে দেশের কোটি কোটি মানুষ যুক্ত৷ এদের পরিবারের নূ্যনতম ভরণপোষণের সংস্থান হয় ব্যবসা থেকে৷ খুচরো–মাঝারি ব্যবসায় বৃহৎ পুঁজির বেপরোয়া অনুপ্রবেশের অর্থ দাঁড়াবে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ গরিব নিম্নবিত্ত ব্যাপক সাধারণ মানুষের চরম বিপদাপন্ন হওয়া৷ তাদের রোজকার প্রয়োজনের জিনিসপত্রের বেচা–কেনা ধনকুবের বৃহৎ পুঁজির হাতে চলে যাবে এবং বড় বড় শপিং মলের কুক্ষিগত হবে– যার কিছু নজির ইতিমধ্যে সারা দেশে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও দেখা যাচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গে পূর্বতন সিপিএম ফ্রন্ট সরকারের আমলেও খুচরো ব্যবসায় বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছিল৷ প্রতিবাদ প্রতিরোধের ফলে তা বেশিদূর এগোতে পারেনি৷ আমাদের মতো পুঁজিবাদী দেশে এমনিতেই কোটি কোটি মানুষ বেকার, সেখানে বৃহৎ পুঁজির কবজায় গেলে খুচরো ও মাঝারি ব্যবসায় যারা মালিক ও কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত, তারা এক ধাক্কায় উচ্ছেদ হয়ে পথের ভিখারিতে পরিণত হবে৷
প্রসঙ্গত, একবছর আগে মোদি সরকারের নোট বাতিলের বিপর্যয়কর সিদ্ধান্তের ফলে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র শিল্প মার খেয়েছে, কয়েক লক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন৷ সরকার ঘোষিত কালো টাকা উদ্ধারের প্রচার যে নিতান্তই ভুয়ো ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে৷ অর্থনীতিবিদরাও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানিয়েছেন৷ এরপর কেন্দ্রের মোদি সরকার জিএসটির মাধ্যমে একদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চরম অসুবিধায় ফেলেছে, আবার সাধারণ মানুষের উপরও মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপিয়ে জনগণের টাকা লুণ্ঠনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে৷ ব্যাঙ্কগুলি থেকে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেশের ধনকুবেররা শোধ করছে না৷ এর ফলে ব্যাঙ্কগুলি দেউলিয়া হতে পারে৷ বিজেপি সরকার এমন আইন আনতে চাইছে যার দ্বারা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমানতকারী সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা দেউলিয়া ব্যাঙ্কগুলি দখল করে নিয়ে ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারবে৷ এই ভয়ঙ্কর আইনের বিরুদ্ধে আমানতকারী জনগণকে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷
কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্তগুলি প্রমাণ করছে, এই পুঁজিবাদী দেশে যে দল বা জোটই সরকারে যাক, সকলেরই লক্ষ্য জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহৎ পুঁজির বাড়তি মুনাফার স্বার্থ দেখা এবং তার পুরস্কার হিসাবে ধনকুবের ব্যবসায়ীদের অর্থবল এবং তাদের কুক্ষিগত প্রচার মাধ্যমের সহায়তায় সংসদীয় আসন বৃদ্ধি করা৷
ইতিমধ্যেই আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ তীব্র প্রতিবাদ সহ খুচরো–মাঝারি ব্যবসাদার, হকার সহ সকল অংশের মেহনতি মানুষকে একযোগে প্রতিবাদ জানাবার আহ্বান জানিয়েছেন৷ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে দোকানদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ ব্যাপক জনগণের সহযোগিতায় কালো ব্যাজ পরিধান করে পথসভার মাধ্যমে ও সরকারি ঘোষণার প্রতিলিপি পুড়িয়ে সমস্ত বড় গঞ্জ ও বাজারে সম্মিলিত প্রতিবাদ জানাবার আবেদন করেছেন৷ আমাদের দল সর্বশক্তি দিয়ে এই কর্মসূচি পালন করবে, এতে যোগদানের জন্য আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি৷ আমাদের সাহায্য ছাড়াও আপনারা সকলে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলে জোরালো প্রতিবাদ জানান, যাতে সরকার এই পদক্ষেপ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়৷
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটতির অজুহাতে পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি রেললাইন বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে৷ যার ফলে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ মারাত্মক অসুবিধার সামনে পড়বেন৷ এই বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে যাত্রী কমিটি গঠন করে লাগাতার সংগঠিত আন্দোলন অত্যন্ত প্রয়োজন৷