হাজার হাজার মানুষের হাহাকার চলছে একটুকরো রুটির জন্য। হ্যাঁ, পাকিস্তানের এখন এমনই অবস্থা। কোথাও খাবারের জন্য লুটপাট, তো কোথাও চলছে কাড়াকাড়ি-মারামারি। তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত দেশে গমের জন্য ত্রাণ দিতে আসা ট্রাকের পিছনে পাগলের মতো ছুটছেন শয়ে শয়ে মানুষ, নয়ত সরকারি গমের বস্তা আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কোথাও খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছেন অনাহারী মানুষ। বালুচিস্তান সহ কয়েকটি প্রদেশে পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের মতো। যাঁদের হাতে টাকাপয়সা আছে, তাঁদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। যাঁদের নেই, তাঁরা ভুখা পড়ে থাকছেন।
গত কয়েক মাসে আর্থিক সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে পাকিস্তান জুড়ে। একদিকে বিপুল বিদেশি ঋণের বোঝা, তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে খাদ্য সঙ্কট। কিছুদিন আগেই ভয়ঙ্কর বন্যায় বিধ্বস্ত পাকিস্তান আজও আর্থিকভাবে মাথা তুলতে পারেনি। তার উপর ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা মানুষ। সরকার বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে বাজার, মল, বিয়েবাড়ি সন্ধে্যর পরই বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
আগে গমের দামে ভর্তুকি দিত পাকিস্তান সরকার। এই চরম খাদ্য সঙ্কটের মধ্যে সেই ভর্তুকি বন্ধ। অনেক প্রদেশে বন্ধ হয়েছে গম সরবরাহ। দেশের প্রধান খাবার রুটি, কিন্তু সেই গমেরই আকাল। ফলে গম এবং আটা-ময়দার দাম লাফিয়ে বাড়ছে। ২০২২-এর জানুয়ারিতে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৩৬ পাক রুপি, এ বছর জানুয়ারিতে তা পৌঁছেছে ২৪০ পাক রুপিতে। মূল্যবৃদ্ধি ৫০০ শতাংশের উপরে। পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, বিদ্যুৎ, জামাকাপড়, খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী। ফলে খাইবার পাখতুন খোয়া, সিন্ধু, বালুচিস্তানে এক প্যাকেট গম ৩ হাজার পাকিস্তানি টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বেশিরভাগ মানুষের দু’বেলা খাবার জুটছে না। অথচ তা নিয়ে ভারতের মতোই পাকিস্তানের শাসক ও বিরোধী দলের নেতাদের বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই। সে দেশের শাসক দল তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দল অনাহার, ক্ষুধাপীড়িত মানুষের মৃত্যুকে উপেক্ষা করে চলেছে। আর বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর প্রধান, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নরেন্দ্র মোদির পাকিস্তান বিরোধী মন্তব্যকে হাতিয়ার করে শাসক দলকে কোণঠাসা করতে ব্যস্ত। দায়িত্বজ্ঞানহীন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে সর্বত্র। পুলিশ লাঠিপেটা করে জনগণের বিক্ষোভ দমন করতে চাইছে।
অনাহার-দারিদ্র ভারত-পাকিস্তানের মতো প্রতিটি পুঁজিবাদী দেশে অনিবার্য। কারণ পুঁজিপতি শ্রেণির চরম শোষণের শিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র মানুষ। এদের শ্রম লুটে নিয়ে তারা মুনাফা করে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র রাস্তা শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। তার আগে অকর্মণ্য সরকারকে বাধ্য করতে হবে দেশের অনাহারী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে। ঐক্যবদ্ধ ও লাগাতার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই সেই দাবি আদায় সম্ভব। সরকারবিরোধী সেই গণআন্দোলনগুলি গড়ে তোলার পথে এগিয়ে চলতে হবে অন্যায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উৎখাতের লক্ষ্যেয।
(তথ্যসূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ১০ জানুয়ারি, ‘২৩ ও আনন্দবাজার, ১৭ জানুয়ারি, ‘২৩)