ছাত্র-ছাত্রী কম থাকার অজুহাতে রাজ্যে ৮ হাজার ২০৭টি স্কুল বন্ধ করার যে কথা উঠছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এস ইউ সি আই (সি)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উদ্দেশে ৪ মার্চ এক চিঠিতে বলেন,
ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩০-এর কম এমন ৮ হাজার ২০৭টি স্কুল নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা দফতর সমীক্ষা করছে এবং সমীক্ষার রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে, আপনার বক্তব্য হিসাবে এ কথা আমরা সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছি। এই স্কুলগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, সেখানকার শিক্ষকদের প্রয়োজনে শহর থেকে গ্রামে বদলি করা হবে কি না, তা আমরা জানি না। কিন্তু এই সংবাদে সরকার-পোষিত স্কুলশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা অত্যন্ত শঙ্কিত।
দেশের তথা রাজ্যের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সেই অনুপাতে সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা স্কুলের সংখ্যা যে বাড়ছে না তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাহলে সরকার-পোষিত স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থীর অপ্রতুলতা কেন? আমরা আশা করব সরকারি সমীক্ষায় এর কারণ অনুসন্ধান করা হবে। আমরা জানি, সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক সহ পঠন-পাঠনের সরঞ্জাম ও অন্যান্য পরিকাঠামোর ভীষণ অভাব।
শহরের তুলনায় গ্রামের স্কুলগুলির দৈন্যদশা আরও প্রকট। শিক্ষক বদলির নিয়ম চালু হয়েছে অথচ নতুন শিক্ষক নিয়োগ স্তব্ধ হয়ে আছে। দুর্নীতির পথ অবলম্বন করে যে অযোগ্যদের নিয়োগ করা হয়েছে, হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে তাঁরা চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন। অথচ প্রকৃত যোগ্য চাকুরিপ্রার্থীরা দু’বছরেরও বেশি রাস্তায় ধরনা দিলেও তাঁদের নিয়োগে সরকারের নির্লজ্জ অনিচ্ছা প্রকাশিত হচ্ছে। এর ফলে স্কুলগুলিতে শিক্ষকের সংখ্যা দৃষ্টিকটুভাবে কম।
এর পাশাপাশি আছে বেসরকারি মালিকানাধীন ঝাঁ-চকচকে স্কুলের রমরমা। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। ফলে সরকার-পোষিত স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে এবং স্কুলশিক্ষায় বেসরকারিকরণের রাস্তা আরও সুগম হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দাবি,
১। সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক সমেত অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের দ্রুত ব্যবস্থা হোক,
২। শিক্ষক বদলি হওয়ার পর শূন্যপদ ভর্তির উপযুক্ত ব্যবস্থা হোক,
৩। ছাত্রছাত্রী ঘাটতির অজুহাতে কোনও ভাবেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়া চলবে না।