কলকাতার তিন হাজার সহ রাজ্যের মোট ২৮ হাজার বারোয়ারি দুর্গাপুজো কমিটিকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এর জন্য সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হবে ২৮ কোটি টাকা৷ শুধু তাই নয়, তিনি পুজো কমিটির সবরকম লাইসেন্স ফি মকুব করে দেবেন, বিদ্যুতে ছাড় ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করবেন৷ এ ছাড়াও ৭৫টি পুজো কমিটি নিয়ে আরও বড় বিসর্জনের কার্নিভাল করবেন৷ ইতিমধ্যেই তিনি ক্লাবগুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া চালু করেছেন৷ এই রকম আরও কিছু খাতে দান–খয়রাতি চলছে– যা সমাজে কোনও স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি করে না৷
অথচ মাত্র তিন কোটি টাকা সরকার সময়মতো বরাদ্দ করলে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা পেত মাঝেরহাট ব্রিজ৷ বাঁচত তিনটি প্রাণ, হাজার হাজার নিত্যযাত্রী রেহাই পেত দৈনন্দিন যন্ত্রণা থেকে৷ স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক নেই, পরিকাঠামো নেই– সরকারের অজুহাত টাকা নেই৷ হাসপাতালে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসা নেই৷ কারণ নাকি রাজকোষ শূন্য৷ এ রাজ্যের ঋণের বোঝা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে৷ শুধতে হবে জনগণকেই৷
তাহলে এই দান–খয়রাতি কেন? বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রের মানুষকে এভাবে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্য কী? আসলে বিজেপি যেমন হিন্দুত্বের জিগিরে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে সংহত করতে চাইছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও সেই হিন্দুভোটের লক্ষ্যে পুজো কমিটিগুলিকে সরকারি অর্থ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন৷ যেমন, বিজেপি রামনবমীর মিছিল করলে তৃণমূল তা নিয়ে মহামিছিল করছে, বিজেপি গণেশ পুজো করলে তৃণমূল গণেশের সংখ্যায় টেক্কা দিচ্ছে, এরা হনুমান মূর্তি বসালে ওরা বৃহত্তর হনুমান মূর্তি প্রতিষ্ঠা করছে!
কিন্তু একটা বিষয় তৃণমূল নেতৃত্ব খেয়াল করছেন না, এর মাধ্যমে তাঁরা বিজেপি যা চায় তাই করে দিচ্ছেন৷ বিজেপি চায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের দেশ এই ভারতবর্ষে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশের জনগণকে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় ফাঁসিয়ে দিতে৷ এভাবে বিভাজনের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যকে ধ্বংস করতে৷ ধর্মীয় অন্ধতায় ডুবিয়ে রেখে মানুষকে যুক্তিহীন উন্মাদ রোবটে পরিণত করতে৷ যাদের দিয়ে শাসকশ্রেণি তার স্বার্থে যে কোনও কাজ করিয়ে নিতে পারবে৷
শুধু ভোটের স্বার্থে, গদির স্বার্থে তৃণমূলের এই প্রতিযোগিতামূলক হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি তাই বিজেপির হাতকেই শক্তিশালী করবে৷ যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদ, শিক্ষা–সংসৃক্তি ক্ষেত্রের মনীষী এবং শ্রমিক–কৃষকদের মহান সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাবে৷
(৭১ বর্ষ ৯ সংখ্যা ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)