এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের কেরালা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড জি এস পদ্মকুমার আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৮ এপ্রিল সকাল দশটা পাঁচ মিনিটে ত্রিবান্দ্রমে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর৷ ২৯ এপ্রিল তাঁর শেষযাত্রায় রাজ্যের সমস্ত জেলা থেকে শত শত কমরেড ত্রিবান্দ্রমে এসে উপস্থিত হন৷ রাজ্য সম্পাদক কমরেড সি কে লুকোস গুরুতর অসুস্থ থাকার কারণে তাঁর পক্ষে কমরেড পদ্মকুমারের মরদেহে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান কমরেড ভি বেনুগোপাল৷ পার্টির সমস্ত ফ্রণ্ট ও গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড জাইসন যোসেফ৷ এর পর সঙ্গীত গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পরিবেশন করে৷ কমসোমলের সদস্যরা রক্তপতাকা নিয়ে শেষ যাত্রার পুরোভাগে ছিলেন৷
কমরেড জি এস পদ্মকুমার ১৯৭৮ সালে ১৭ বছর বয়সে দলে যুক্ত হন৷ ত্রিবান্দ্রম জেলায় কাজ শুরু করে পরে পার্টি সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়ে এর্ণাকুলাম জেলায় যান৷ উন্নত সাংস্কৃতিক মান এবং অত্যন্ত নিষ্ঠা ও যোগ্যতার সাথে দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে সেখানে তিনি পার্টির বহু কর্মী তৈরি করে শক্তিশালী পার্টি ইউনিট গড়ে তোলেন৷ ১৯৮৮ সালে তিনি পার্টির কেরালা রাজ্য কমিটির সদস্য হন৷ এর্ণাকুলাম জেলার সাথে ত্রিচুর, পালাক্কড় ও মলপ্পুরম জেলার সংগঠন দেখভালের দায়িত্বও তাঁকে দিয়েছিল পার্টি৷ এই সবক’টি জেলাতেই পার্টি সংগঠন গড়ে তুলতে তিনি সক্ষম হন৷ মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন পার্টির কুইলন জেলার সম্পাদক এবং কেরালা রাজ্য কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য৷
কমরেড পদ্মকুমার নিরলস সংগ্রামের মাধ্যমে মার্কসবাদ–লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা সম্পর্কে উন্নত উপলব্ধির অধিকারী হয়েছিলেন৷ ভারতবর্ষের মাটিতে বিপ্লবের জন্য জাত–বিপ্লবী গড়ে তোলার সঠিক পদ্ধতির ধারণা দিয়ে গেছেন সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ৷ সেই পদ্ধতির ভিত্তিতে কমরেড পদ্মকুমার শ্রমিকশ্রেণি ও তার পার্টি এস ইউ সি আই (সি)–র কাছে ব্যক্তিগত সমস্ত কিছু সমর্পণ করে, সাধারণ জীবন ছেড়ে দিয়ে কমিউনিস্ট বিপ্লবীর জীবন বেছে নেন৷ এভাবেই তাঁর জীবন অন্য অসংখ্য কমরেডের কাছে প্রেরণাদায়ক এবং দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে ওঠে৷ একবার বিপ্লবী জীবন বেছে নেওয়ার পর মৃত্যুর প্রাকমুহূর্ত পর্যন্ত আর কখনও তিনি পিছন ফিরে তাকাননি৷ সমস্ত ক্ষেত্রেই তিনি পার্টির প্রতি ছিলেন অত্যন্ত অনুগত৷ কমিউনিস্ট আচরণবিধি মেনে চলতেন তিনি এবং অন্যদেরও সে বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতেন৷
কেরালার কমরেডদের নিয়ে তিনি বহু আলোচনা, ক্লাস, স্টাডি সার্কল ইত্যাদি পরিচালনা করতেন৷ রাজ্যস্তরের বেশির ভাগ শিক্ষাশিবিরে তিনি অন্যতম প্রধান বক্তা হিসাবে থাকতেন৷ তাঁর পড়াশুনার অভ্যাস সকল কমরেডের কাছেই একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ তাঁর বিস্তৃত পড়াশুনা ও উপলব্ধি, সাহিত্য–ইতিহাস–দর্শন থেকে শুরু করে বিজ্ঞান– প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁকে উন্নত জ্ঞানের অধিকারী করেছিল৷ কেরালার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বুদ্ধিজীবীরা, যাঁরা তাঁর আলোচনা শুনেছেন, প্রত্যেকেই মুগ্ধ হতেন এবং তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন৷ কেরালা রাজ্য কমিটি তাঁকে পার্টির বহু পুস্তিকা লেখার এবং অনুবাদ করার দায়িত্ব দিয়েছিল৷ তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন শুধু নয়, অন্যদেরও ইতিহাস, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে নানান বই লিখতে সাহায্য করেছেন৷
বিজ্ঞান আন্দোলনের কেরালা শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি৷ তাঁর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ‘ব্যানার’ সাংস্কৃতিক সংস্থা নানা সৃজনশীল কর্মসূচি পালন করেছে৷ মালয়লাম ভাষায় ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘ব্যানার’–এরও তিনি ছিলেন সম্পাদক৷ রাজ্য কমিটির পরিচালনায় তাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন কমরেডের একটি বিশেষ দল কেরালার ইতিহাস বিষয়ে বিশেষ গবেষণা চালিয়েছেন৷ সেসব যখন আমরা প্রকাশ করি তখন তা বুদ্ধিজীবী মহল সহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোড়ন তুলেছিল৷
কমরেড পদ্মকুমারের প্রয়াণে পার্টি একজন যোগ্য সংগঠক ও নেতাকে হারাল৷
কমরেড জি এস পদ্মকুমার লাল সেলাম
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)