আন্তর্জাতিক ‘হ্যামার’ পত্রিকার অনুরোধে এস ইউ সি আই (সি)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের লেখা এই নিবন্ধটি প্রথম ওই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর দলের ইংরেজি মুখপত্র প্রোলেটারিয়ান এরার ১ এপ্রিল ২০২৫ সংখ্যায় ‘হোয়াই ওয়াজ সোসালিস্ট সিস্টেম ডিসম্যান্টলড বাই কাউন্টার রেভলিউশন’ নামে এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। প্রোলেটারিয়ান এরায় প্রকাশের সময় তিনি সামান্য কিছু সম্পাদনা করেন। আমরা ওই নিবন্ধেরই বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করলাম। অনুবাদের ভুলত্রুটির দায়িত্ব আমাদের – সম্পাদক, গণদাবী।
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনাগুলির অন্যতম হল সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়। অসাধারণ বিকাশ এবং অগ্রগতি সত্ত্বেও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থায়ী হতে পারেনি। কিন্তু এই বিপর্যয় কি অনিবার্য ছিল? এই প্রসঙ্গে আমরা ইতিহাস থেকে যে শিক্ষাটি নিতে পারি– কোনও আদর্শের চূড়ান্ত বিজয় বা কোনও নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সময় লাগে। ধারাবাহিক ভাবে পরাজয়, পরাজয়, তারপর জয়, আবার পরাজয়, তারপর চূড়ান্ত বিজয় আসে। এতে দশকের পর দশক, এমনকি কয়েক শতাব্দীও পার হয়ে যায়। কয়েক হাজার বছর লেগেছিল দাস ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে, যাকে ‘ঐশ্বরিক শাসন’ বলে দাবি করা হত। সামন্ততন্ত্রকে উৎখাত করে পুঁজিবাদের চূড়ান্ত বিজয় পেতে অর্থাৎ সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর সময় লেগেছে। এই প্রক্রিয়াটির শুরু নবজাগরণের সূচনাপর্ব থেকে। মার্ক্সবাদ তথা সাম্যবাদ হল একটি নতুন মতাদর্শ। এই মতাদর্শ দাসপ্রথা থেকে শুরু করে পুঁজিবাদ পর্যন্ত হাজার হাজার বছর ধরে চলতে থাকা শ্রেণি শোষণের নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করছে। এর আগে যতবার সমাজ পাল্টেছে প্রতিবারই এক ধরনের শ্রেণি শোষণের জায়গায় নতুন ধরনের শ্রেণি শোষণ এসেছে। কিন্তু সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য ছিল চিরতরে শ্রেণি শোষণের অবসান ঘটানো। বলিষ্ঠ সংগ্রাম চালিয়ে সমস্ত আক্রমণ, ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে, সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে হাজার হাজার বছরের শ্রেণিশোষণের বিরুদ্ধে সত্তর বছর ধরে লড়াই করেছে সমাজতন্ত্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও, বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজের আভ্যন্তরীণ প্রতিবিপ্লবীরা নতুন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তার জন্য কি এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, সমাজতন্ত্রের আর কোনও ভবিষ্যৎ নেই?
এখানে উল্লেখ করা অত্যন্ত প্রয়োজন যে, মার্ক্সবাদীরা কখনও এমন দাবি করেনি যে, একবার সমাজতন্ত্র অর্জিত হলে পুঁজিবাদের আর ফিরে আসার কোনও আশঙ্কা নেই। বরং তারা বারবার সেই বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। মার্ক্স যেমন বলেছেন, ‘‘এখানে আমাদের যে সাম্যবাদী সমাজটিকে পরিচালনা করতে হবে, তা নিজের ভিত্তির উপর বিকশিত নয়। বরং তার বিপরীতে যেহেতু এই সমাজ পুঁজিবাদী সমাজ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, তাই এই সমাজের অর্থনৈতিক, নৈতিক ও বৌদ্ধিক সহ সমস্ত ক্ষেত্রে সেই পুরনো সমাজের জন্মচিহ্ন (Birthmark) থাকবে যার গর্ভ থেকে তার উদ্ভব ঘটেছে’’১। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘… সাম্যবাদী সমাজের উচ্চতর পর্যায়ে ব্যক্তির শ্রমবিভাগের দাসত্ব থেকে মুক্তির পর, এবং তার সঙ্গে সঙ্গে যখন মানসিক ও দৈহিক শ্রমের মধ্যে বিরোধাত্মক দ্বন্দ্ব ঘুচে যাবে, শ্রম যখন বেঁচে থাকার উপায় নয়, বরং জীবনের প্রধান আকাঙক্ষা হয়ে উঠবে, ব্যক্তির সার্বিক বিকাশের সাথে সাথে উৎপাদিকা শক্তিগুলিও যখন বৃদ্ধি পাবে এবং সমাজের সম্পদের বারিধারা যখন আরও অফুরান স্রোতে বইতে থাকবে– একমাত্র তখনই বুর্জোয়া অধিকারের সংকীর্ণ গণ্ডি সম্পূর্ণ রূপে অতিক্রম করা যাবে এবং সেই সমাজের পতাকায় খোদাই করা থাকবে এই কথা– প্রত্যেকের কাছ থেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী (শ্রম নেওয়া হবে) এবং প্রত্যেকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী (পাবে)’’২। অর্থাৎ মার্ক্সের মতে, ‘‘সাম্যবাদের উচ্চতর পর্যায় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ‘বুর্জোয়া অধিকার’গুলির সংকীর্ণ গণ্ডি বহাল থাকবে। এর অর্থ হল, পূর্ণাঙ্গ সাম্যবাদ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত, পুঁজিবাদের পুনরুজ্জীবনের বিপদ হিসাবে সমাজতান্ত্রিক সমাজে ‘বুর্জোয়া অধিকার’-এর আকাঙক্ষা থেকে যাবে। এ সম্পর্কে লেনিনও সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্ব মানে হল, অধিকতর শক্তিধর শত্রু বুর্জোয়া শ্রেণি, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর (এমনকি একটিমাত্র দেশে হলেও) যাদের প্রতিরোধশক্তি দশগুণ বেড়ে যায় এবং যাদের শক্তি শুধু আন্তর্জাতিক পুঁজির শক্তির মধ্যে, তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগগুলির শক্তি ও স্থায়িত্বের মধ্যে নিহিত থাকে না, নিহিত থাকে অভ্যাসের শক্তি, ছোট উৎপাদনক্ষেত্রগুলির শক্তির মধ্যে– তাদের বিরুদ্ধে নতুন (সর্বহারা) শ্রেণির সবচেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কঠোর ও আপসহীন সংগ্রাম’’৩।
এ বার আমি রাশিয়া এবং চিন, এই দুটি সমাজতান্ত্রিক দেশের আভ্যন্তরীণ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট বিষয় যা ওই দেশগুলির প্রতিবিপ্লবকে তরান্বিত করেছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করব। এই বিষয়ে আমি বিশিষ্ট মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক এবং এসইউসিআই(কমিউনিস্ট)-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শিবদাস ঘোষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন উল্লেখ করতে চাই। ১৯৪৮ সালে, যে সময়টায় সারা বিশ্ব জুড়ে কমিউনিস্ট আন্দোলন দৃঢ় প্রত্যয়ে এগোচ্ছে, সেই সময় শিবদাস ঘোষ কমিউনিস্ট আন্দোলনের অগ্রযাত্রার প্রশংসা করে একটি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন যে, ‘‘…বিশ্ব কমিউনিস্ট শিবিরের বর্তমান নেতৃত্ব অনেকাংশে যান্ত্রিক চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত। … এই কারণে মার্ক্সবাদী দ্বান্দ্বিক নীতি লংঘিত হয়ে চলেছে। … বেশিরভাগ দলই যান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার সহজ পথ বেছে নিয়েছে। যার ফলে শীর্ষ নেতৃত্ব আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়ছে’’৪। উপযুক্ত আদর্শগত মান এবং সর্বহারা সংস্কৃতির অভাবের কারণেই এটি ঘটেছিল।
এ ছাড়া, তিনি দেখিয়েছেন যে, বিপ্লবের ফলে রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে সাথে অর্থনৈতিক কাঠামোর বেশিরভাগটাই পরিবর্তিত হয়। কিন্তু দর্শন, মতাদর্শ, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, পারিবারিক সম্পর্ক, প্রেম ও স্নেহ, অভ্যাসের শক্তি ইত্যাদির মতো পুরনো উপরিকাঠামোর বিভিন্ন দিকেরও পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন। কিন্তু অর্থনৈতিক ভিত্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে এই পরিবর্তন আপনাআপনি ঘটে না। সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিপূরক করে উপরিকাঠামোয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার জন্য আদর্শগত-সাংস্কৃতিক-নৈতিক ক্ষেত্রে পৃথক ও সর্বাত্মক তীব্র শ্রেণিসংগ্রামের প্রয়োজন, যা অবশ্যই সময়সাপেক্ষ। তা না হলে উপরিকাঠামোর মধ্য দিয়ে বুর্জোয়া শক্তিগুলির দ্বারা সমাজতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তিকে আক্রমণ ও তা ধ্বংস করে দেওয়ার বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়।
তিনি আরও যে বিষয়টির উল্লেখ করেছিলেন তা হল বুর্জোয়া ব্যক্তিবাদ। এই ‘ব্যক্তিবাদ’ ইতিহাসে এমন এক সময়ে এসেছিল যখন উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণি উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছিল। সুতরাং, ‘ব্যক্তি অধিকার’, ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ ইত্যাদি ধারণা সেই সময়ে সমাজপ্রগতির সূচক ছিল। কিন্তু মজুরি শ্রমের (wage labour) শোষণের মাধ্যমে উৎপাদনের উপর পুঁজিবাদী মালিকানা প্রতিষ্ঠার পর এই ধারণাগুলিই প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়ে যা আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজের প্রতি উদাসীন মনোভাবের জন্ম দেয়।
রাষ্ট্রক্ষমতা যেহেতু বুর্জোয়াদের দখলে ছিল, তাই রুশ বিপ্লব ছিল পুঁজিবাদবিরোধী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, এবং লেনিনের মতে, ‘সেই অর্থে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পূর্ণ হয়েছিল’। কিন্তু বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অন্যান্য দিক যেমন অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদির পরিবর্তন অপূরিত থেকে যায়। চিন বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে মূলত একটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব ছিল। ব্যক্তিবাদ দুটি বিপ্লবেই খানিকটা প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেছিল, যেমন করেছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মুক্তি আন্দোলনে।
ফলে, রাশিয়া এবং চিন উভয় বিপ্লবের সময়েই নৈতিকতার ধারণা ছিল– ‘বিপ্লবের স্বার্থ মুখ্য’ এবং ‘ব্যক্তির স্বার্থ গৌণ’। বিপ্লবের পরে এবং অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য সমৃদ্ধির পরে সেই ব্যক্তিস্বার্থ ‘সমাজতান্ত্রিক ব্যক্তিবাদে’ পরিণত হয়। শিবদাস ঘোষ বলেছেন, ‘…সমাজতান্ত্রিক সমাজের এই ব্যক্তিবাদ যদিও চরিত্রের দিক দিয়ে মূলত বুর্জোয়া ব্যক্তিবাদই, তবুও এর রূপ ও ধরন-ধারণ বিপ্লব-পরবর্তী সমাজতান্ত্রিক সমাজে বুর্জোয়া ব্যক্তিবাদের সাথে অভিন্ন নয়। উভয়ের প্রকৃতির মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরার জন্য, আমরা সমাজতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিবাদের এই রূপটিকে ‘সমাজতান্ত্রিক ব্যক্তিবাদ’ বলি। মনে রাখতে হবে, সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলেই শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে থেকে বুর্জোয়া ব্যক্তিবাদ খতম হয়ে যায় না’’৫। কমিউনিস্ট নৈতিকতার নতুন ধারণা গড়ে তুলে, অর্থাৎ ব্যক্তিবাদের শৃঙ্খল থেকে ব্যক্তিকে মুক্ত করে ব্যক্তিস্বার্থকে সমাজ, বিপ্লব এবং বিপ্লবী দলের স্বার্থের সাথে একাত্ম করে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা যেত। ওই দুটি দেশে এটি করা হয়নি। যদিও জীবনের শেষ পর্যায়ে স্ট্যালিন এই বিপদটি আঁচ করেছিলেন, পরে আমি এ বিষয়ে বলব।
উপরের বিষয়গুলি ছাড়াও, আরও কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। বিপ্লবের সময় ওই সব দেশের মানুষ বিপ্লবকে সমর্থন করেছিল, কারণ তারা মনে করেছিল, এটি শোষণ, দারিদ্র্য দূর করবে এবং তাদের উন্নত জীবন এনে দেবে। কিন্তু জনসাধারণের সকলেই কমিউনিস্ট ছিলেন না। উভয় দেশেই কমিউনিস্ট নন, এমন মানুষই সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। তুলনায়, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য অনেক কম ছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ আদর্শগতভাবে মার্ক্সবাদী হিসাবে গড়ে ওঠে ততক্ষণ তারা অ-মার্ক্সবাদী চিন্তাভাবনা, অর্থাৎ বুর্জোয়া মতাদর্শ বহন করে চলে এবং এটি জনগণ এবং কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে একটি পরস্পরবিরোধী দ্বন্দ্ব তৈরি করে। তীব্র আদর্শগত সংগ্রামের মাধ্যমে যদি মানুষকে বুর্জোয়া মতাদর্শ থেকে মুক্ত না করা হয়, তা হলে এটি কমিউনিস্ট পার্টিকে বিপন্ন করে এবং এর সদস্যদের অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায়। ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছিল।
আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয়। মানসিক ও শারীরিক শ্রমের মধ্যে একটি বিরোধাত্মক দ্বন্দ্ব ছিল। সমাজের বুদ্ধিজীবী অংশ যদি কমিউনিস্ট নৈতিকতা অর্জন না করে, তা হলে তারা অহংবোধের শিকার হয় এবং ভাবতে শুরু করে যে কায়িক শ্রমজীবীরা তাদের চেয়ে নিম্নমানের। এই অহংবোধ তাদের সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্ব গ্রহণ করতে বাধা দেয় এবং তাদের মধ্যে বুর্জোয়া ব্যক্তিস্বাধীনতার আকাঙক্ষা তৈরি করে।
এ ছাড়া, আদর্শগত মানের নিম্ন মান এবং উন্নত কমিউনিস্ট নৈতিকতার অভাবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা যান্ত্রিক কেন্দ্রিকতায় পরিণত হয়, যার ফলে দল ও রাষ্টে্রর নেতৃত্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিকতা জন্ম নেয় এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উগ্র গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণা গড়ে ওঠে। তা ছাড়া, যে পুরনো প্রজন্ম জারশাসিত রাশিয়ায় অকথ্য শোষণ-নির্যাতন সহ্য করেছিল এবং বিপ্লবের জন্য লড়াই করেছিল, নবজাত সোভিয়েত সমাজতন্ত্রকে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ আগ্রাসন, অর্থনৈতিক অবরোধ ও দেশের ভিতরে প্রতিবিপ্লবীদের হাত থেকে রক্ষা করেছিল, সেই প্রজন্ম আজ আর নেই।
বিপ্লবের কয়েক দশক পরে আসা নতুন প্রজন্ম, যারা উন্নত সমাজতন্ত্রের সমস্ত সুবিধা ও সুফল ভোগ করেছে, তাদের অধিকাংশই কমিউনিস্ট আদর্শ ও নৈতিকতার চর্চার অভাবে ‘সমাজতান্ত্রিক ব্যক্তিবাদ’-এর শিকার হয়েছে। বিপ্লব-পূর্ব যুগের অসহনীয় যন্ত্রণা এবং বিপ্লবী সংগ্রামে পূর্বতন প্রজন্মের ভূমিকা সম্পর্কে এদের কেবল বই-পড়া ধারণা থাকায় এদের মধ্যে বিপ্লব সম্পর্কে আবেগ ও বিপ্লবী চেতনা আগেকার মতো ছিল না। উপরে উল্লিখিত ঘটনার পাশাপাশি বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র রাশিয়া এবং চিন উভয় দেশেই প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছিল।
কিন্তু আগেই বলা হয়েছে, জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে স্ট্যালিন এই বিপদের আশঙ্কা করেছিলেন। অসুস্থ থাকায় সিপিএসইউ-এর ১৯তম পার্টি কংগ্রেসে তাঁর পক্ষ থেকে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল, সেখানে অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে সে আশঙ্কা তিনি ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি সেই রিপোর্টে বলেছিলেন, ‘‘দলের প্রধান কর্তব্য হল আদর্শগত সংগ্রাম পরিচালনা করা এবং এই কাজে অবহেলা করা হলে তা পার্টি এবং রাষ্টে্রর অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমাদের সর্বদা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়ার অর্থ হল বুর্জোয়া মতাদর্শের প্রভাব শক্তিশালী হওয়া। … আমাদের মধ্যে এখনও বুর্জোয়া মতাদর্শ টিকে আছে, ব্যক্তিগত সম্পত্তির মানসিকতা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অবশিষ্টাংশ রয়ে গেছে। এগুলি আপনাআপনি ধ্বংস হয়ে যায় না। এগুলি টিকে থাকার খুবই শক্তি রাখে (ড়iন্ধড়প্তম্ভ ব্ধন্দ্বুaন্তুiপ্সuব্দ) এবং নিজেদের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ সবের বিরুদ্ধে অবশ্যই নিরলস ভাবে সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে।
… বাইরের পুঁজিবাদী দেশগুলি থেকে কিংবা দেশের ভিতরকার সোভিয়েট রাষ্টে্রর প্রতি শত্রুভাবাপন্ন গ্রুপগুলি যাদেরপার্টি সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি, তাদের থেকে বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি, ধ্যানধারণা, অনুভূতি ইত্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটবে না– আমাদের এমন গ্যারান্টি নেই।’’৬ এটা স্পষ্ট যে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিপন্নকারী এইসব পুঁজিবাদী শক্তিগুলি থেকে বিপদের আশঙ্কা স্ট্যালিন অনুভব করেছিলেন এবং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করার জন্য পার্টিকে প্রস্তুত করছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পরেই তাঁর দুঃখজনক মৃত্যু সেই কাজকে ব্যাহত করেছিল।
১৯৫৬ সালে ত্রুশ্চেভের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত সিপিএসইউ-এর ২০তম কংগ্রেসের ঠিক পরেই শিবদাস ঘোষ সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, ‘‘নিঃসন্দেহে ত্রুশ্চেভের এই চিন্তাভাবনা বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে সংস্কারবাদ-সংশোধনবাদের প্রবণতা তৈরি করবে’’৭। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘স্ট্যালিনকে কালিমালিপ্ত করার অনিবার্য পরিণাম তাঁর অথরিটিকে অস্বীকার করা এবং লেনিনবাদ সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা, যা মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের আজকের দিনের সঠিক উপলব্ধি, তা প্রত্যাখ্যান করা। … এর অর্থ মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের নামে সমস্ত ধরনের প্রতিবিপ্লবী ধ্যান-ধারণাকে আমন্ত্রণ জানানো যার ফলে সাম্যবাদী আন্দোলনের ভিত্তি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে’’৮।
রেনিগেড ক্রুশ্চেভকে একমাত্র এর জন্য দায়ী করলে চলবে না। সোভিয়েট ইউনিয়নের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা একটি প্রতিবিপ্লবী ধারার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। দলের সাধারণ সদস্য-কর্মীদের আদর্শগত মান অনুন্নত থাকায় নেতৃত্বকে তারা অন্ধ ভাবে অনুসরণ করতে অভ্যস্ত ছিল। রেনিগেড ত্রুশ্চেভের তোলা ‘ব্যক্তিপূজার বিরুদ্ধে সংগ্রাম’, ‘উদারীকরণ’, ‘সমাজতন্ত্রের গণতন্ত্রীকরণ’ ইত্যাদি স্লোগানের় পিছনে থাকা ষড়যন্ত্রটি তারা ধরতে পারেনি। চিনেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৬৬ সালে মাও সে তুং নিজে চিনে প্রতিবিপ্লবের বিপদটি অনুভব করেছিলেন এবং দল ও রাষ্টে্রর মাথায় বসে থাকা ‘পুঁজিবাদের পথিক’দের (Caহ্মiব্ধaপ্তiব্দব্ধ rপ্সaস্তুন্দ্বrব্দ) বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু করেছিলেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক বিপ্লব বুর্জোয়া শক্তিগুলিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করতে পারেনি এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭৬ সালে মাও সে তুং-এর মৃত্যুর পর ‘পুঁজিবাদী পথিক’রা পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠা করে।
যদিও সমাজতন্ত্র ভেঙে গেছে, তবুও মনে রাখা দরকার যে, মানবজাতির ইতিহাসে সমাজতন্ত্র একটি নতুন সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। শ্রেণিশোষণহীন এই সভ্যতা সকল নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থান, খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থে্যর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিশ্চিত করেছিল। এই সভ্যতা পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা এনেছিল। সকল জাতি ধর্মের মধ্যে সংঘাতের বিলোপ নিশ্চিত করেছিল। সবচেয়ে গণতান্ত্রিক সংবিধানে লিঙ্গ নির্বিশেষে শ্রমিকদের ব্যাপক প্রতিনিধিত্ব, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রত্যাহারের অধিকার ও জাতিগুলির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করেছিল। এই সভ্যতা বিশ্বশান্তি এবং সকল ধরনের স্থানীয় ও বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ করা এবং সমস্ত অস্ত্র ধ্বংসের জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করেছিল। এই কারণেই রোমাঁ রোলাঁ, বার্নার্ড শ, আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু, শরৎচন্দ্র, ভগৎ সিং প্রমুখ বিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ত্ব এই নতুন সভ্যতার প্রশংসা করেছিলেন। মহান স্ট্যালিনের নেতৃত্বে এই সোভিয়েট ইউনিয়নই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মানবজাতিকে ফ্যাসিবাদী দেশগুলির আগ্রাসন থেকে রক্ষা করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশ্বপুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের প্রতিস্পর্ধী একটি শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যা সমস্ত পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামকে সহায়তা করেছিল। যদি আজ সেই সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অস্তিত্ব থাকত, তা হলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইরাক দখল করতে, লিবিয়া ধ্বংস করতে কিংবা প্যালেস্টাইনে আক্রমণে ইজরায়েলকে মদত দেওয়ার সাহস করত না। একই সাথে সাম্রাজ্যবাদী দেশে পরিণত হওয়া রাশিয়া আজ যে ভাবে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, শত শত শহর ও গ্রাম ধ্বংস এবং অগণিত মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে, তা-ও করতে পারত না।
আজ দুটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদী রাষ্টে্র পরিণত হওয়া চিন, বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তার এবং অন্যান্য দেশকে অর্থনৈতিকভাবে লুণ্ঠনের জন্য একে অপরের সাথে প্রবল দ্বন্দ্বে লিপ্ত। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ আজ অভূতপূর্ব অনিরসনীয় অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। বাস্তবে তীব্রতর হতে থাকা ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মন্দা তাদের অর্থনীতিকে ক্রমশ আরও বেশি করে নিমজ্জিত করছে। তাই তারা একটি অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছে। সম্প্রতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ অন্যান্য দেশগুলিকে তার নির্দেশের কাছে নতজানু হতে আদেশ করার সাহস দেখিয়েছে। দুটি বিশাল সাম্রাজ্যবাদী দানবের মধ্যে বর্তমান অর্থনৈতিক যুদ্ধ সশস্ত্র যুদ্ধের দিকে যাবে কি না, ভবিষ্যতই তা বলবে।
তবে সমস্তটাই অন্ধকার নয়। আশার আলোও রয়েছে। জীবনের অসহনীয় তীব্র সমস্যাগুলি জনগণের ক্ষোভের স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। ঢেউয়ের মতোই এই বিক্ষোভ কখনও উত্তাল হচ্ছে, কখনও তাতে ভাটার টান দেখা যাচ্ছে, আবার তা উত্তাল হয়ে উঠছে, আবার নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে– এ ভাবেই একটানা চলছে। ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’, ‘আরব বসন্ত’, দিল্লিতে বছরব্যাপী কৃষক আন্দোলন, ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশে ঘন ঘন শ্রমিক ধর্মঘটের মতো আন্দোলনগুলি যে তীব্র আকার ধারণ করেছে, তা আকস্মিক নয়। জনগণ যে প্রতিবাদ চাইছে, জনগণ যে সংগ্রাম চাইছে, জনগণ যে পরিবর্তন চাইছে– এ সবের মধ্যে দিয়ে সেটা প্রতিফলিত হচ্ছে। বিপ্লবের জন্য এটাই বাস্তব শর্ত। কিন্তু জনগণের় এই আকাঙক্ষাকে বাস্তবায়িত করবে অর্থাৎ বিপ্লব সংঘটিত করবে, মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের শিক্ষাকে হাতিয়ার করে গড়ে ওঠা এমন যে বিপ্লবী সর্বহারা দল, সেটি এখনও উপযুক্ত ক্ষমতা নিয়ে আবির্ভূত হয়নি।
সমাজতন্ত্রের আকাঙক্ষা এ জন্য তৈরি হয়নি যে মার্ক্স-এঙ্গেলস তা চেয়েছিলেন। পুঁজি এবং শ্রমের মধ্যে অনিরসনীয় দ্বন্দ্বকে ভিত্তি করে উদ্ভূত অনিবার্য এক সামাজিক নিয়মেই এই আকাঙক্ষা তৈরি হয়েছে যাকে মার্ক্স-এঙ্গেলস বৈজ্ঞানিকভাবে সুনির্দিষ্ট রূপ দিয়েছেন। মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ একমাত্র সমাজতন্ত্রের উপরে এবং তার পরবর্তী কালে সাম্যবাদের উপরেই নির্ভর করে আছে। শীঘ্রই হোক বা কিছু বিলম্বে হোক, অনিবার্যভাবেই আবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের উত্থান হবে। প্যারি কমিউনের পরাজয় থেকে রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব যেমন শিক্ষা নিয়েছিল, তেমনই প্রতিবিপ্লবকে প্রতিরোধ ও পরাজিত করতে, আগামী দিনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে রাশিয়া ও চিনের প্রতিবিপ্লব থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
সূত্রঃ
১. What we have to deal with here is a communist society, not as it has developed on its own foundations, but, on the contrary, just as it emerges from capitalist society; which is thus in every respect, economically, morally, and intellectually, still stamped with the birthmarks of the old society from whose womb it emerges. কার্ল মার্ক্সঃ ক্রিটিক অফ গোথা প্রোগ্রাম
২. n a higher phase of communist society. after the enslaving subordination of the individual to the division of labor, and therewith also the antithesis between mental and physical labor, has vanished; after labor has become not only a means of life but life’s prime want; after the productive forces have also increased with the all-around development of the individual, and all the springs of co-operative wealth flow more abundantly – only then can the narrow horizon of bourgeois right be crossed in its entirety and society inscribe on its banners From each according to his ability, to each according to his needs. কার্ল মার্ক্সঃ প্রবন্ধ।
৩. The dictatorship of the proletariat means a most determined and most ruthless war waged by the new class against a more powerful enemy, the bourgeoisie, whose resistance is increased tenfold by their overthrow •even if only in a single country——, and whose power lies, not only in the strength of international capital, the strength and durability of their international connections, but also in the force of habit, in the strength of small-scale production. ভি আই লেনিনঃ লেফটউইং কমিউনিজম অ্যান ইনফ্যান্টাইল ডিজর্ডার
৪. … the present leadership of the world communist camp is to a very large extent, influenced by mechanical process of thinking…. because of this there has been continuous violation of the Marxist dialectical principle… most of the parties have chosen the easy way of mechanical centralisation which has led to the formation of bureaucratic leadership at the top. শিবদাস ঘোষঃ কমিউনিস্ট শিবিরের আত্মসমালোচনা, নির্বাচিত রচনা, খণ্ড-১
৫. Although this individualism in the socialist society is essentially bourgeois individualism, in terms of character, its manifestations and pattern in the post-revolutionary social¬ist society are not, however, identical with bourgeois individualism. To point out the difference between the nature of the two, we call this form of individualism in socialist society ‘socialist individualism’. It has to be kept in mind that establishment of the socialist society has not ipso facto put an end to bourgeois individualism within the working class. শিবদাস ঘোষঃ মার্ক্সবাদী বিজ্ঞান হল বৈজ্ঞানিক দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি, নির্বাচিত রচনা, খণ্ড-৪
৬. Ideological work is the prime duty of the party and under-estimation of this work may cause irreparable damage to the interest of the party and state. We must always remember that any weakening of the influence of the socialist ideology signifies strengthening of the influence of bourgeois ideology. We still have survivals of the bourgeois ideology, relics of the private property mentality and ethics. These survivals do not die away of themselves.
They are highly tenacious and may strengthen their hold, and resolute struggle must be waged against them. Nor are we guaranteed against the penetration of alien views, ideas and sentiments from outside, from the capitalist countries or from inside, from the remnants of groups hostile to Soviet state which had not been completely demolished by the party. জে. ভি স্ট্যালিনঃ সিপিএসইউ-এর ১৯তম পার্টি কংগ্রেসের প্রতিবেদন
৭. No doubt, this trend of thinking by Khrushchev is sure to generate the trend of reformism-revisionism in the communist movement of different countries. শিবদাস ঘোষঃ সিপিএসইউ-এর ২০তম পার্টি কংগ্রেসের প্রতিবেদন, নির্বাচিত রচনা, খণ্ড-১
৮. To black out Stalin would have the inevitable result of disowning his authority and consequently of rejecting his interpretation of Leninism, which is the present-day understanding of Marxism-Leninism. It would mean invitation to all sorts of counter-revolutionary ideas to pass for Marxism-Leninism and the ideological foundation of the communist movement would suffer a setback. শিবদাস ঘোষঃ স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে, নির্বাচিত রচনা, খণ্ড-১