১৪ নভেম্বর কলকাতার রাজপথ ভেসে গেল হাজার হাজার শ্রমিক–কর্মচারীর প্লাবনে৷ কেন্দ্রীয় সরকার নতুন শ্রম কোডের মাধ্যমে কেড়ে নিচ্ছে দেশের শ্রমিক–কর্মচারীদের সমস্ত অর্জিত অধিকার, কেড়ে নিচ্ছে সামান্য যেটুকু সামাজিক সুরক্ষা তাঁরা পেতেন– তাও৷ রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা, তেল কোম্পানি, বিমান কোম্পানি থেকে শুরু করে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকে কেন্দ্রীয় সরকার বিক্রি করে দিচ্ছে বেসরকারি মালিকদের হাতে৷ ছাঁটাই হচ্ছেন সংগঠিত ক্ষেত্রের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক–কর্মচারী৷ পেনশন, ইএসআই, পিএফের অধিকারটাও কেড়ে নিচ্ছে কেন্দ্র এবং রাজ্যের ক্ষমতায় আসীন সরকারগুলো৷ আশা কর্মী, মিড–ডে মিল কর্মী, পৌর স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মতো স্কিম ওয়ার্কাররা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও সরকারি কর্মচারীর স্বীকৃতিটুকুও পান না৷ দিনরাত অসংখ্য মানুষকে পরিষেবা দিয়েও সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স পাওয়ার স্বীকৃতি জোটে না মোটরভ্যান শ্রমিকদের৷ বাইক ট্যাক্সি চালক, কর্পোরেট সংস্থার ডেলিভারি কর্মী, গিগ ওয়ার্কাররা চরম শোষিত৷ সরকার সব জেনেও ভান করে যেন এদের সমস্যা তারা জানেই না৷ শ্রমজীবী মানুষের এই সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যার অবিলম্বে সমাধানের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল এ আই ইউ টি ইউ সি–র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি৷
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলা থেকে বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ ওই দিন কলকাতার বিক্ষোভে যোগ দেন৷ উত্তরবঙ্গের চা বাগান শ্রমিক থেকে শুরু করে নানা জেলার বিড়ি শ্রমিক, সংগঠিত শিল্পের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী, পরিবহণ শ্রমিক, বাইক ট্যাক্সি চালক, স্কিম ওয়ার্কার, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ঠিকা শ্রমিক সহ নানা পেশার শ্রমিক কর্মচারীরা তাঁদের দাবি–প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিলে সামিল হন৷ মিছিল শুরুর আগে কলেজ স্কোয়ারে বিশাল শ্রমিক জমায়েতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শংকর দাশগুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক কমরেড অশোক দাস, সহ সভাপতি কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ৷ সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনের রাজ্য সভাপতি কমরেড এ এল গুপ্তা৷ এ ছাড়াও স্কিম ওয়ার্কার্স সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক কমরেড ইসমত আরা খাতুন সহ বিভিন্ন ট্রেডের শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন৷
বক্তারা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির শ্রমিকবিরোধী ও মালিক তোষণকারী পদক্ষেপগুলি তুলে ধরেন৷ তাঁরা বলেন, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ম্যানেজার হিসাবে শ্রমজীবী মানুষকে নিঃশেষে শুষে নেওয়ার জন্য পুঁজিপতিদের হাতে নতুন শ্রমকোড তুলে দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ কেড়ে নিচ্ছে শ্রমিকদের সমস্ত অধিকার৷ এই একই লক্ষ্যে দেশের সমস্ত সম্পদ, কলকারখানা, রেল–ব্যাঙ্ক–বিমা–বন্দর তারা মালিকদের হাতে তুলে দিচ্ছে৷ এর বিরুদ্ধে সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে৷ সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস আগামী জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে জেলায় জেলায় ধরনা, বিক্ষোভ মিছিল ও পরবর্তীকালে রাজ্য স্তরে আইন অমান্যের কথা জানান৷
কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে সুসজ্জিত বিশাল মিছিল শিয়ালদহ, মৌলালি হয়ে এসপ্ল্যানেডে পৌঁছনোর পর কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ৬ জনের প্রতিনিধি দল শ্রমমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ২১ দফা দাবি তুলে ধরেন৷ রাজ্যপালের কাছে যায় কমরেড গৌরীশঙ্কর দাসের নেতৃত্বে ৪ জনের প্রতিনিধি দল৷ এছাড়াও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহণ প্রভৃতি দপ্তরে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলির রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷