১১-১৪ মার্চ এআইকেকেএমএস-এর সর্বভারতীয় সম্মেলন সফল করার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কমরেড শঙ্কর ঘোষ বলেন, বহুজাতিক পুঁজির স্বার্থে রচিত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কৃষক-খেতমজুর বিরোধী নীতির আক্রমণের ফলে কৃষক-খেতমজুরদের জীবনে দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সার-বীজ-তেল-বিদ্যুৎ-ডিজেলের দাম বাড়ছে হু হু করে, অথচ ফসলের লাভজনক দাম পাবার কোনও উপায় নেই। ফলে হাজার হাজার ঋণগ্রস্ত কৃষক আত্মহত্যার বেদনাদায়ক পথ গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতি ১২ মিনিটে এ দেশের একজন কৃষক আত্মহত্যা করেন। খেতমজুরদের কাজ নেই, ফলে অনাহার তাদের নিত্যসঙ্গী। কৃষক খেতমজুর সহ সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষ সবাই যেন একটা ‘নেই রাজ্যের বাসিন্দা’।
এই অবস্থার মধ্যেও আমরা একটা বিষয় লক্ষ না করে পারি না–সংকট যত বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যেন কৃষকদের সংগ্রামী মনোবল। আমরা দেখেছি কৃষকদের কাছ থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে টাটা সালেমের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের সংগ্রামী কৃষকরা কী অমিত বিক্রমে লড়াই করেছেন, সিপিএম সরকারকে মাথা নত করতে বাধ্য করেছেন। এই দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে তারপর রাজ্যে রাজ্যে কৃষক সংগ্রাম গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি মানুষ দেখেছে দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন–যার শৌর্য, বীর্য, বীরত্ব, আত্মবলিদানের মহত্ত্ব আমাদের কাছে আগামী বহুদিন প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। গর্বের সাথে বলতে পারি, এই সব আন্দোলনে এআইকেকেএমএস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে।
এআইকেকেএমএস-র প্রতিষ্ঠাতা, আমাদের প্রেরণার উৎস, সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা থেকে আমরা জানি, সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদ তার আক্রমণ ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর করবে। পাশাপাশি কৃষক-খেতমজুরেরাও তাদের সংগ্রামকে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যাবার প্রয়োজন অনুভব করবেন। এই নতুন প্রয়োজনকে ভাষা দিতে এআইকেকেএমএস-কে সব দিক দিয়ে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্যই এই সংগঠনের তৃতীয় সর্বভারতীয় সম্মেলনের আয়োজন। সম্মেলন উপলক্ষে ১১ মার্চ, হাওড়ার শরৎ সদনে হবে এক আন্তর্জাতিক সেমিনার। সেমিনারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, বাংলাদেশের প্রতিনিধি সহ সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতৃত্ব ‘কৃষির উপর বহুজাতিক পুঁজির আক্রমণ ও কৃষক আন্দোলন’– এই বিষয়ের উপর আলোকপাত করবেন।
প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন ভারতবর্ষের বিপ্লবী বামপন্থী আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা, এস ইউ সি আই (সি)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ। দেশের ২৫টি রাজ্য থেকে ৮০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত থেকে আগামী দিনের সংগ্রামের কলাকৌশল নির্ধারণ করবেন। সম্মেলনকে সফল করে দেশের কৃষক আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।