এতদিন ধরে মানুষের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, কৃষকদের একতা নেই, তারা সঙ্ঘবদ্ধ হতে জানে না, তাদের কোনও সংগঠন নেই। ফলে চাষি চিরকাল পড়ে পড়ে মার খায়, ফসলের দাম সঠিক পায় না, দেনার দায়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। এই ধারণা যে সঠিক নয় তা দিল্লির কৃষক আন্দোলন প্রমাণ করে দিয়েছে। পাহাড়প্রমাণ বাধা ঠেলে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে হাড় হিম করা শীত উপেক্ষা করে কেন্দ্রের কালা কৃষি আইন বাতিল ও বিদ্যুৎ বিল-২০২০ প্রত্যাহারের দাবিতে বীরত্বপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে চাষিরা।
এ এক অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক আন্দোলন যা গোটা পৃথিবীর পাশাপাশি আমাদের দেশের জনগণকেও ভাবিয়ে তুলেছে। তবুও শাসক বিজেপি সরকারের টনক নড়েনি। শুধু সময় পার করছে। আন্দোলনের প্রবল চাপে পড়ে সংশোধনের প্রস্তাব দিচ্ছে। আইন প্রত্যাহার করবে না, কারণ মালিক শ্রেণির কাছে সরকার দায়বদ্ধ। যে কারণে মিডিয়া এই আন্দোলনের প্রচার সেভাবে দিচ্ছে না। বৃহৎ কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে কৃষকদের এই আন্দোলন অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। এখানে জাত পাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের একটাই পরিচয়– তারা কৃষক।
এই আন্দোলনের পাশে এসেছেন বহু গুণীজন। পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন, চাকরি ছেড়েছেন কেউ কেউ। সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী হয়েছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। আন্দোলনের পাশে এসেছেন চিকিৎসক, নার্স, ছাত্র, যুব, মহিলারা। এই আন্দোলনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই আছেন, শিশুরাও সামিল হয়েছে। স্বাধীনতার পর এত বড় কৃষক আন্দোলন দেশের মানুষএই প্রথম দেখছে। সাধারণ মানুষের করণীয় হল এই আন্দোলনে সবদিক থেকে সহযোগিতা করা। আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়েদেওয়া। কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এসবের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরা।
শাসকরা এই আইনের পক্ষে যে সব প্রচার চালাচ্ছে, তার সবটাই জুমলা। শাসক বিজেপি সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমাদের সকলকে বুঝতে হবে, আন্দোলনই দাবি আদায়ের একমাত্র পথ।
বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া