কৃষকদের ট্রাক্টর প্যারেড তৈরি হল আন্দোলনের নতুন অধ্যায়

২৬ জানুয়ারি লক্ষ লক্ষ কৃষক ট্রাক্টর নিয়ে দিল্লির রাস্তায় কৃষক-প্রজাতন্ত্র পালন করলেন। কয়েক লক্ষ ট্রাক্টর এ দিন দখল নিয়ে নিল দিল্লি ঘিরে থাকা রাস্তাগুলির। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল দিল্লি। দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের সেনা কুচকাওয়াজের থেকেও দেশের মানুষের অনেক বেশি আগ্রহ তৈরি করল এই ট্রাক্টর প্যারেড। রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য মানুষ কোথাও ফুল ছড়িয়ে, কোথাও হর্ষধ্বনি করে সংহতি জানালেন কৃষকদের।

পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ দিন সিংঘু, টিকরি, গাজিপুর প্রভৃতি দিল্লি সীমান্তের কৃষক অবস্থানগুলি থেকে ট্রাক্টর মিছিল শুরু হয়। প্রায় সারা দিন ধরে চলে এই ট্রাক্টর প্যারেড।

এই দিনটি ছিল আন্দোলনের ৬২তম দিন। এই দিনটি ঘিরে আন্দোলন কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন কৃষকরা, গড়ে তুলছিলেন প্রস্তুতি। যেমন সিংঘু, টিকরি সহ প্রত্যেকটি অবস্থানে, তেমনই গ্রামে গ্রামে কৃষকদের নিয়ে বৈঠক করে কৃষি-আইনের মারাত্মক দিকগুলি তুলে ধরছিলেন সংযুক্ত কিসান মঞ্চের নেতারা, যার অন্যতম শরিক এআইকেকেএমএস। তাঁরা আহ্বান জানাচ্ছিলেন ২৬ জানুয়ারি ট্রাক্টর নিয়ে মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য। এ দিনের বিশাল ট্রাক্টর প্যারেড সেই ঐকান্তিক প্রস্তুতিরই ফল। গভীর আবেগে বিভিন্ন রাজ্য থেকে এ দিন হাজার হাজার কৃষক মিছিলে যোগ দেন। এই প্যারেড আন্দোলনে যেমন এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে তেমনই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উপরও দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বিরাট চাপ তৈরি করেছে। অনেকেই বলছেন, আন্দোলন যে বিরাট, বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে তাতে সরকারের এখন আর দাবি না মেনে উপায় নেই।

দিল্লির কৃষক আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এস ইউ সি আই (সি) কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ লোকাল কমিটির উদ্যোগে ২০ জানুয়ারি তুফানগঞ্জ শহর থেকে দেওচড়াই বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার কিসান জাঠা সংগঠিত হয়। নেতৃত্ব দেন কমরেডস রুহুল আমিন, দেবেন্দ্রনাথ বর্মন প্রমুখ।

দীর্ঘ দু’মাস ধরে কৃষকদের দাবি মানার ক্ষেত্রে যে টালবাহানা কেন্দ্রীয় সরকার করে চলেছে তা যেমন অগণতান্ত্রিক তেমনই অমানবিক। বাড়ি-ঘর ছেড়ে প্রবল শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে এতদিন ধরে অবস্থান করছেন কৃষকরা। প্রাণ হারিয়েছেন ১৪০ জন। তা সত্ত্বেও সরকার নির্বিকার। এই নির্মম সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের ক্ষোভ তৈরি হলে তার দায় কার? স্বাভাবিক ভাবেই ধৈর্যচ্যুত হয়ে এ দিন আবেগ-তাড়িত কৃষকদের একাংশ নির্দিষ্ট কর্মসূচির বাইরে গিয়ে রাজধানীর মধ্যে ঢুকে পড়লে পুলিশ তাঁদের নির্মম ভাবে লাঠিপেটা করেছে, টিয়ার গ্যাস এবং জল কামান চালিয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতৃত্ব এই পুলিশি অত্যাচারের তীব্র নিন্দা করেন। একই সাথে তাঁরা বলেন, কৃষকদের এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে আন্দোলন ভাঙতে শাসক বিজেপির সুবিধা হয়ে যায়। তাঁরা আন্দোলনের সংহতি আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানান।

দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ২৬ জানুয়ারি নদিয়ায় ট্রাক্টর মিছিল

কিসান প্যারেডের সমর্থনে সারা দেশ জুড়ে রাজ্যপালের দপ্তরে এদিন বিক্ষোভ দেখায় এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)। দেশের শত শত জায়গায় কৃষকরা এ দিন ট্রাক্টর মিছিল করে মূল আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান। কলকাতায় শিয়ালদহ থেকে দলের উদ্যোগে এক বিশাল মিছিল ট্রাক্টর নিয়ে ধর্মতলায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। সেখানে কৃষি আইনের কপিতে আগুন দেন রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অমিতাভ চ্যাটার্জী। ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, তমলুক, কোচবিহার, শিলিগুড়ি, কৃষ্ণনগর, বাঁকুড়া, জয়নগর, কুলতলি, মথুরাপুর প্রভৃতি প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে কোথাও ট্রাক্টর মিছিল, কোথাও বাইক মিছিল, কোথাও সাইকেল মিছিল হয়। সর্বত্রই কৃষকদের মধ্যে গভীর আবেগ লক্ষ করা যায়।

গভীর রাত পর্যন্ত দিল্লিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল চলে। কৃষক নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অবিলম্বে জনবিরোধী কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল-২০২০ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, দাবি আদায় না হলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরও বৃহত্তর আকার নেবে।

দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ২৬ জানুয়ারি দার্জিলিংএ বাইক মিছিল

 

দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ২৬ জানুয়ারি বাঁকুড়ায় বাইক মিছিল