৪ জুলাই সকালেই ছড়িয়ে পড়েছিল খবরটা৷ আবার রক্তাক্ত হয়েছে সুন্দরবনের কোলে নদীঘেরা মৈপীঠের মাটি৷ হিংস্র জন্তুর থেকেও বেশি হিংস্রতায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হত্যা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ট্রেড ইউনিয়ন এবং এলাকার গণআন্দোলনের এক নেতৃস্থানীয় মানুষকে৷ রক্ত ঝরেছে, হাত পা ভেঙেছে আরও অন্তত শতাধিক মানুষের৷ শত শত পোড়া বাড়ির ধোঁয়ার গন্ধ, ঘরহারা মানুষের কান্না, নারী–শিশুদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে কুলতলির বাতাস৷
তীব্র ধিক্কারে ফেটে পড়েছেন রাজ্যের মানুষ৷ কুলতলির সংগ্রামী ইতিহাসের কথা তাঁদের অনেকেরই স্মরণে আছে৷ মনে আছে সিপিএম আমলে ভুবনেশ্বরী অঞ্চলে বস্তাবন্দি করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া পাঁচজন মানুষের দেহ উদ্ধারের কথা৷ যা দেখে শাসক দলের সমর্থক সংবাদপত্র পর্যন্ত লিখেছিল, মানুষ যে এত নৃশংস হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাসই করা যেত না৷ অনেকেরই হয়ত মনে পড়ে গেছে ১৯৮৯ সালের ৯ ডিসেম্বর মৈপীঠেরই ৯ জন মানুষের নির্মম হত্যার কথা৷ জানা গেল সেদিন যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল তারাই আজ সিপিএমের জামা বদলে তৃণমূলের আশ্রয়ে এসে একই ভাবে মানুষের উপর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে৷ সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় জেলায় জেলায় প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন এস ইউ সি আই (সি) দলের নেতা–কর্মীদের সাথে বহু সাধারণ মানুষ৷ বহু গুরুত্বপূর্ণ বাজারে মোড়ে প্রতিবাদ সভা, মিছিল সংগঠিত হয়৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার বহু জায়গায় শুরু হয়ে যায় স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ৷
এস ইউ সি আই (সি) দল ৬ জুলাই কুলতলি বনধ এবং রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দেয়৷ ওই দিন কুলতলির সমস্ত বাজার, সাপ্তাহিক হাট স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ চলেনি কোনও যানবাহন৷ মেরিগঞ্জ–১ এর কচিয়ামারা বাজারে বিশাল মিছিলে অংশ নেন শত শত মানুষ৷ মৈপীঠ সংলগ্ন ভুবনেশ্বরীতে মিছিলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন মিছিল রুখে দেয়৷ কুলতলির প্রাক্তন বিধায়ক এস ইউ সি আই (সি) দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার মানুষের এই প্রতিবাদী ভূমিকাকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানান৷
দার্জিলিং থেকে সুন্দরবন সমস্ত জেলাতেই সভা, মিছিল ইত্যাদির মাধ্যমে পালিত হয় প্রতিবাদ দিবস৷ শিলিগুড়িতে পুলিশ দলের জেলা সম্পাদক সহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে৷ অন্যান্য কয়েকটি জায়গাতেও পুলিশ বাধা দেয়৷