দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলি কেন্দ্রের বেশ কিছু এলাকা জুড়ে ভোটের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই চলেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাস। এর মধ্যেও অনমনীয় দৃঢ়তায় বিপ্লবী রাজনীতির ঝাণ্ডা নিয়ে কুলতলিতে নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে গেছেন এস ইউ সি আই (সি) দলের নেতা-কর্মীরা। কোনওভাবেই এস ইউ সি আই (সি) দলের প্রতি মানুষের সমর্থন নষ্ট করতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ভোটের দিনে আক্রমণ চালালো তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। মৈপীঠের মিলন এফপি স্কুলের ২৬০ নম্বর বুথে দলের পোলিং এজেন্ট কমরেড জয়ন্ত জানা গুরুতরভাবে আহত হলেন তাদের আক্রমণে।
এক সময় সিপিএমের আশ্রয়ে থাকা দুষ্কৃতীরাই এখন তৃণমূলে ভিড়েছে। তৃণমূলের প্রার্থী ওই এলাকায় এবার যিনি হয়েছেন, সেই গণেশ মণ্ডল এবং তাঁর পরিবার এক সময় সিপিএমের হয়ে দুষ্কৃতী বাহিনীর সঙ্গে মিলে এস ইউ সি আই (সি) কর্মীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। বেশ কয়েকজন কর্মী নেতা তাদের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। গত বছর ২০২০-র ৪ জুলাই এই তৃণমূল দুষ্কৃতী বাহিনী মৈপীঠ অঞ্চলের বিশিষ্ট জননেতা এবং এস ইউ সি আই (সি) দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড সুধাংশু জানাকে নৃশংশভাবে হত্যা করে। বহু মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ওই সময় থেকেই তারা একটানা সন্ত্রাস চালিয়ে গেছে মৈপীঠ জুড়ে। কিন্তু এস ইউ সি আই (সি)-র প্রতি মানুষের সমর্থনকে দমাতে পারেনি। ভোটের আগে বারবার নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশকে এমনকি বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষককেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল মৈপীঠে সন্ত্রাসের পূর্ব ইতিহাস আছে। এমনকি ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সেখানে পোলিং এজেন্টরা আক্রান্ত হয়েছেন। দাবি করা হয়েছিল কমিশন বিশেষভাবে জনগণ এবং পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তার দিকে নজর দিক। কিন্তু তারা যে কিছুই করেনি তা বোঝা গেল ৬ এপ্রিল ভোটের দিন।
৬ এপ্রিল তৃতীয় দফা ভোটের দিন, ভোট শেষ হওয়ার পর মৈপীঠের মিলন এফপি স্কুলে ভোটের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ওই বুথে দলের পোলিং এজেন্ট কমরেড জয়ন্ত জানা দেখেন তাঁর বাড়ি ফেরার রাস্তায় প্রচুর দুষ্কৃতী জড়ো হয়েছে। তিনি তাঁর এক সঙ্গীর মোটর বাইকে অন্য রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। তাঁকে অন্য রাস্তায় যেতে দেখে ওই দুষ্কৃতী বাহিনীও পিছু নেয়। কিছুটা এগিয়ে জিৎ মোড়ের কাছে একদল তৃণমূল কর্মী তাঁদের পথ আটকায়। ইতিমধ্যে ওই বাহিনীও এসে পড়ে। তৃণমূল নেতা সুনীল দাসের নেতৃত্বে লাঠি রড দিয়ে মেরে কমরেড জয়ন্ত জানাকে তারা মাটিতে ফেলে দেয়। তাঁর গলা টিপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয় এক যুবকের সাহায্যে তাঁর প্রাণ রক্ষা পায়। দলের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তৃণমূলের ওই বাহিনী এবং সুনীল দাস এরপরেও এলাকার মানুষকে শাসাতে থাকে, কেউ কোনও কথা ফাঁস করলে তার অবস্থা খারাপ করে দেওয়া হবে। এলাকার এস ইউ সি আই (সি) সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে তারা হামলা চালায়। কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। দলের পক্ষ থেকে বারবার কমিশন এবং প্রশাসনকে ঘটনা জানালেও তাদের কোনও হেলদোল টের পাওয়া যায়নি।
কুলতলির প্রার্থী কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করেছেন, অবিলম্বে সুনীল দাস সহ এই দুষ্কৃতী বাহিনীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।