আশঙ্কা ছিলই৷ এস ইউ সি আই (সি) দল সুস্পষ্টভাবে বলেও ছিল যে, একতরফা ভাবে জম্মু–কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ এবং রাজ্য হিসাবে তার মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কাশ্মীরবাসীকে আহত করবে, তাদের বাকি ভারত থেকে দূরে ঠেলে দেবে৷ এর সুযোগ নেবে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি (৬ আগস্ট, ২০১৯, কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি)৷
দেশের বহু মানুষ এমনকি জন্মসূত্রে কাশ্মীরী পণ্ডিত প্রাক্তন এয়ার ভাইস মার্শাল কপিল কাক সহ কাশ্মীরের ৬৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক সরকারের কাছে লেখা আবেদনে বলেছিলেন, এই পদক্ষেপ কাশ্মীরবাসীর কাছে একটা আঘাত হিসাবেই আসবে৷
সরকার শোনেনি সে কথা৷ অথচ এই নির্মম সত্যকেই প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করে যেতে হল আপেল বাগানে কাজ করতে যাওয়া পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিককে৷ ২৯ অক্টোবর সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে শেষ হয়ে গেল এতগুলি তাজা প্রাণ৷ আহত আরও দু’জন৷ ঘটনার জেরে তীব্র আতঙ্ক আর মানসিক আঘাতে জর্জরিত হলেন আরও কয়েক শত শ্রমিক৷ তাঁদের অনেকেই কাশ্মীর ছাড়ছেন৷ তারপরেও চলেছে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ, তাতে মহিলা সহ হতাহত অনেকেই৷
কাশ্মীর তো এখন সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে৷ সেখানকার অধিবাসী, বাইরে থেকে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক থেকে শুরু করে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবন–জীবিকা রক্ষার দায়িত্ব তো তাদেরই৷ সমস্ত দোকান–বাজার বন্ধ, মানুষের রোজগার নেই৷ পর্যটকদের কাশ্মীরে যাওয়ার সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতে নেই৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকবে, তা নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না৷ ৩১ অক্টোবর জম্মু–কাশ্মীর পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হল৷ তার থেকে আলাদা হয়ে গেল লাদাখ৷ সেই উপলক্ষে আনন্দিত প্রধানমন্ত্রী যখন বলছেন, কাশ্মীর আর বাকি ভারতের মধ্যে ৩৭০ ধারাই দেওয়ালের মতো দাঁড়িয়েছিল, আমি সেই দেওয়াল সরিয়ে দিয়েছি– ঠিক সেই সময় কাশ্মীরবাসী বন্দি কাঁটাতারের বেড়া আর পুলিশ–সিআরপিএফ–মি বেষ্টনীতে৷ কোথায় তাঁদের ‘দেওয়াল ভাঙার’ আনন্দ? বরং এক অদ্ভুত নীরবতা আজ বিরাজ করছে কাশ্মীর জুড়ে৷ এই নীরবতাকে দেখিয়েই সরকার বলছে– কাশ্মীর স্বাভাবিক৷ আর ঠিক সেই সময় জীবনের ছন্দহারা কাশ্মীরের মানুষের সাথে একটু কথা বলার সুযোগ যাঁরা পাচ্ছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা হল, এ নীরবতা বড়ই বাঙ্ময়৷ এর মধ্যেই ফুটে উঠছে তীব্র প্রতিবাদের স্বর৷
সাংবাদিকদের চোখে কাশ্মীরের কী ছবি ফুটে উঠেছে দেখা যাক৷ ‘জম্মু কাশ্মীর প্রশাসনের এক অফিসার বলছেন, ঘিরে রেখে ক্লান্ত করে দিয়ে মাথা নিচু করানোর এই নীতি আদৌ সফল হবে কি না আমরা জানি না৷ কিন্তু এটা যে কোনওমতেই স্বাভাবিকতা নয়, তা নিশ্চিত বলা যায়,’ লিখেছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক পি বৈদ্যনাথন আয়ার এবং আদিল আখজের (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯)৷ সকালবেলা কিছুক্ষণের জন্য দোকান বাজার খুলছে, আবার বেলা ১১টার পর সব বন্ধ৷ বন্ধ গণপরিবহণ, স্কুল–কলেজ৷ সাংবাদিকরা সরকারি আমলাদের উদ্ধৃত করে বলেছেন, কাশ্মীরে চলছে ‘মানুষের স্বআরোপিত কারফিউ’ (ওই)৷ সরকার নিজেও ১১ অক্টোবর কাশ্মীরের সব সংবাদপত্রের প্রথম পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে, মানুষ নিজে থেকেই দোকান খুলছেন না, গণপরিহণ ব্যবহার করছেন না, সরকারের কাছে আসছেন না৷ প্রশ্ন করেছে, ‘কীসের ভয়’? (এনডি টিভি, ১১ অক্টোবর ২০১৯) অর্থাৎ সরকারই মেনে নিয়েছে সরকারের উপর আস্থা হারাচ্ছে কাশ্মীরের জনগণ৷
কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করে দেওয়ায় লাদাখের রাজধানী লেহ–তে আনন্দের ছবি দেখিয়েছে সরকার৷ কিন্তু সেখানেও চাপা আতঙ্ক, বহিরাগতদের হাতে জমি চলে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে মানুষ৷ লাদাখের অন্তর্গত কারগিলের মানুষ মনে করছেন, আগে জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভায় তাঁদের অন্তত একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধি থাকতেন, এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় সে সুযোটুকুও রইল না৷ কাশ্মীর রাজ্য ভাগ এবং ৩৭০ ধারা রদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ গড়ে উঠেছে কারগিলে (নিউজ ক্লিক, ১ নভেম্বর ২০১৯)৷
কাশ্মীরের জনগণ একদিন রুখে দাঁড়িয়েছিল পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে৷ এই কাশ্মীরী জনগণ ভারতভুক্তির পক্ষে লড়াই করেছে একদিকে রাজা হরি সিং, অন্যদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র ও পাকিস্তানের ধর্মীয় উস্কানির বিরুদ্ধে৷ আজ স্বৈরাচারী কায়দায় একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে বিজেপি সরকার তাদেরই দূরে ঠেলে দিচ্ছে৷ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই আহত মানসিকতাকে আশ্রয় করে তাদের শক্তি বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে৷ ইতিহাস বলে, ভারতের স্বাধীনতার সময় স্বতন্ত্র ধারায় জাতিসত্তার বৈশিষ্ট্য নিয়ে অবস্থান করা কাশ্মীরের ভারতভুক্তির বাস্তব প্রয়োজনেই এসেছিল সংবিধানের ৩৭০ ধারা৷ কাশ্মীরের অবিসংবাদী নেতা শেখ আবদুল্লা সেখানকার গণপরিষদে অনেক আশা নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘…আমাদের জনগণের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য এবং সৃজনীক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের দেশকে গড়ে তোলার স্বাধীনতা যাতে আমাদের হাতে থাকে, তা সুনিশ্চিত করার জন্য স্বায়ত্তশাসন সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করার সাথে সাথে, ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যথোপযুক্ত সাংবিধানিক বোঝাপড়া গড়ে তুলে এই মহান কর্তব্যে ভারতীয় ইউনিয়নের সাহায্য ও সহযোগিতা চাওয়া এবং …একইসঙ্গে ভারতীয় ইউনিয়নকে আমরা দিতে পারি আমাদের পূর্ণ সাহায্য ও সহযোগিতা৷… এই শর্ত এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই ৩৭০ ধারা প্রণীত হয়েছে এবং সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিশেষ মর্যাদার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷’’ ১৯৫০ সালে মুম্বইয়ের ‘কারেন্ট’ পত্রিকায় ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার খাজা মহম্মদ আব্বাস লিখছেন,‘… ভারত সরকার যদি কাশ্মীরের মন জয় করতে চায়, তাহলে নীতিনিষ্ঠভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে এবং শেখ আবদুল্লার অর্থনৈতিক কর্মসূচি তাদের আঁকড়ে ধরতে হবে’ (রামচন্দ্র গুহ, গান্ধী উত্তর ভারত)৷ কিন্তু একেবারে প্রথম থেকেই কংগ্রেস পরিচালিত তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ ধারাকে বারবার লঙঘন করেছে৷ শেখ আবদুল্লাকে দীর্ঘ সময় ধরে গ্রেপ্তার করে রেখেছে৷ বাস্তবে সংবিধান প্রণীত হওয়ার পর থেকে প্রায় কোনওদিনই এই ধারার পূর্ণ মর্যাদা কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি৷ বরং একের পর এক পদক্ষেপ করে ১৯৬৪–৬৫–র মধ্যেই এই ধারার প্রায় সমস্ত অধিকার কেন্দ্রীয় সরকার কেড়ে নিয়েছে৷ এই পদক্ষেপ কাশ্মীরী জনগণের কাছে বিশ্বাসভঙ্গ হিসাবেই এসেছে৷ যা তাদের গোটা ভারতের সাথে এক হয়ে মিলবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই আজ প্রয়োজন ছিল কাশ্মীরী জনগণের এই স্বায়ত্তশাসনের অধিকারকে মর্যাদা দিয়ে ৩৭০ ধারার পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ৷ একমাত্র এই পথেই কাশ্মীরের মানুষকে আশ্বস্ত করা যেত যে, তাদের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষায় সরকার দায়বদ্ধ৷ একমাত্র এর মধ্য দিয়েই বিচ্ছিন্নতাবাদী, মৌলবাদী এবং পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু করা যেত৷ কিন্তু সরকার সে পথে যায়নি৷ এর ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা এবং সন্ত্রাসবাদই শক্তিলাভ করছে৷
আজ প্রচার চলছে ৩৭০ ধারা ভারতের সংবিধানের একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা৷ ফলে সরকার এই ধারা রদ করে ভুল কিছু করেনি৷ কিন্তু সংবিধান বিশেষজ্ঞ রাজীব ধাওয়ান এবং জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বি এ খানের মতে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ভারতের সাথে জম্মু ও কাশ্মীরের সংযুক্তি চুক্তিকেই (ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন) অকার্যকরী করে দেয় (নিউজ–১৮, ৫.০৮.১৯)৷ জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ অমিতাভ মুত্তুর মতে, ৩৭০ ধারার ৩ নম্বর উপধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ৩৭০ ধারা রদের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেন একমাত্র তখনই যদি তা আগেই কাশ্মীরের গণপরিষদ দ্বারা অনুমোদিত হয় (ওই)৷ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নমিত সাক্সেনার মতে কাশ্মীরের গণপরিষদের (কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেমব্লি) সিদ্ধান্ত ছাড়া রাষ্ট্রপতির জারি করা আদেশ বলে ৩৭০ ধারা বাতিল হয় না৷ কাশ্মীরের কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেমব্লি বহুদিন আগেই বাতিল করে বিধানসভা এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এখন নতুন করে গণপরিষদ গঠন ছাড়া এই সংবিধান পরিবর্তন করা আইনসম্মত নয় (ডেকান হেরাল্ড, ৬.০৮.১৯)৷ ২০১৮ সালের এপ্রিলের একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্টও বলেছে ৩৭০ ধারা কোনও মতেই ‘অস্থায়ী’ নয়৷
৩৫–এ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া বাকিদের সে রাজ্যে জমি কেনা, রাজ্য সরকারি চাকরি পাওয়া নিষেধ৷ বিজেপি সরকার বলেছে, এই ধারা রদ করেই ভারতের বাকি অংশের সাথে কাশ্মীরকে তারা মিলিয়ে দিয়েছে৷ অথচ এমন নিয়ন্ত্রণ ভারতের বহু রাজ্যে এবং আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে আছে৷ প্রান্তিক এলাকার বাসিন্দা কিংবা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষকে আশ্বস্ত করতে ও তাদের রক্ষা করতেই এই ধরনের আইনি অধিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সর্বদাই স্বীকৃত৷ বিজেপি বলছে কাশ্মীরের মেয়েরা বাইরের কাউকে বিয়ে করলে ৩৫–এ ধারার জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়৷ তারা এই অধিকার কাশ্মীরী মেয়েদের কাছে ফিরিয়ে দিল৷ অথচ ২০০২ সালেই জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্ট একটি মামলার রায়ে বলেছে, ৩৫–এ ধারা কাশ্মীরী মহিলাদের পিতা–মাতার সম্পত্তির স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে না (ইন্ডিয়া টুডে, ৬.০৮.১৯)৷ তাহলে বিজেপি কাশ্মীরী মেয়েদের ‘মুক্তিদাতা’, এই দাবি আদৌ ধোপে টেঁকে কি?
কাশ্মীরের মানুষের আহত আবেগকে ভাষায় ব্যক্ত করে প্রাক্তন এয়ার ভাইস মার্শাল কপিল কাক বলেছেন, ‘কাশ্মীর ভারতকে ত্যাগ করেনি, কার্যত ভারতই কাশ্মীরকে ত্যাগ করল’(টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ১১ আগস্ট, ২০১৯)৷ কাশ্মীরে আজ এত সেনা, অথচ বাস্তবে সাধারণ মানুষের জীবনে কোনও নিরাপত্তা নেই৷ তিন মাস হয়ে গেল কাশ্মীরে বিরোধী দলের নেতারা বন্দি, সরকারের ন্যূনতম সমালোচনা করতে পারেন এমন সম্ভাব্য ব্যক্তিরা তো বটেই এমনকী বহু নাবালকও জেলে বন্দি৷ সংবাদমাধ্যমও কার্যত স্তব্ধ, কারণ সরকারের সমালোচনা হলে নাকি সন্ত্রাসবাদীদের সুবিধা হবে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলেই সাংবাদিকদের জুটছে সেনাবাহিনীর মার৷ ১ নভেম্বর রাজধানী শ্রীনগরে মহিলা সাংবাদিকরা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর জওয়ানদের হাতে প্রহৃত এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন৷ বন্ধ ইন্টারনেট, প্রিপেড মোবাইল– তাতে নাকি সন্ত্রাসবাদীরা কোণঠাসা হয়ে যাবে কিন্তু এর বিপরীতে দেখা যাচ্ছে কোণঠাসা হয়ে আছেন সাধারণ মানুষই৷ পুলিশ–মিলিটারি–আধাসামরিক বাহিনীর অস্ত্রের জোরে মানুষকে আটক রেখে উপর উপর সব শান্তিপূর্ণ দেখানোর চেষ্টা মানুষের ধূমায়িত ক্ষোভকে বাড়িয়ে তুলেছে৷
সাংবাদিকরা যতটুকু কাশ্মীরে পৌঁছতে পেরেছেন, তাতেই দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিরীহ শ্রমিকদের এই হত্যাকাণ্ডকে অতিথিবৎসল এবং শান্তিপ্রিয় কাশ্মীরী জনগণ তাঁদের ‘কাশ্মীরীয়তে’র উপর আঘাত হিসাবেই দেখছেন৷ ভারত সরকার এই বার্তাটি পড়তে পারলে উপকার হত৷ তা হলে ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যার বিচারের ন্যায্য দাবিটিকে সরকার মান্যতা দিত৷ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা নির্বিচারে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ কয়েক শত মানুষের যথাযথ খবর পরিবারকে দেওয়ার জন্য তারা উদ্যোগী হত৷ বোঝার চেষ্টা করত কেবলমাত্র নির্মম প্রহার আর ছররা বুলেটই যে ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রের প্রতীক নয়, এ কথা কাশ্মীরের মানুষকে বোঝানোটা আজ কতখানি দরকার৷ এই পরিস্থিতিতে ভারতের অন্যান্য অংশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে কাশ্মীরের প্রশ্ণটিকে অত্যন্ত সহানুভুতির সাথে দেখতে হবে৷ একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের দীর্ঘদিন অনুসৃত দমনমূলক–প্রবঞ্চনামূলক কাশ্মীর নীতির বিরোধিতায় যেমন গণআন্দোলন গড়ে তোলা দরকার, একই সাথে কাশ্মীরের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক দাবি নিয়ে আন্দোলনের সামান্য সম্ভাবনাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে৷ সারা ভারতের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দাবির সাথে তাকেও যুক্ত করা প্রয়োজন৷ কাশ্মীরের চাষি–মজুর–মধ্যবিত্ত মানুষের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমেই তাঁদের আস্থা ফেরানো এবং সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তিগুলির প্রভাব থেকে তাঁদের মুক্ত করা সম্ভব৷ তাঁদের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ সরকার যখন এ কাজ করবে না তখন যথার্থ বাম–গণতান্ত্রিক শক্তি এবং গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকেই আজ এ দাবি তুলতে হবে৷