২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট যখন উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা গুঁড়িয়ে দেওয়া বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণ করার পক্ষে রায় দেয় এবং সেই নির্মাণের দায়িত্ব ধ্বংসকারীদের হাতেই তুলে দেয় তখন দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ চমকে উঠেছিল এবং সেই দিনটিকে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার পক্ষে কালো দিন রূপে চিহ্ণিত করেছিল৷ পরবর্তী কালে সেই জঘন্য রায় যে বিচারকমণ্ডলী দিয়েছিলেন, তার মধ্যমণি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর নেওয়া মাত্রই কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত করায় বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতার দিকে পুনরায় আঙ্গুল ওঠে৷ কিন্তু অনেক শান্তিপ্রিয় মানুষ ভেবেছিলেন, যাক এবার অন্তত এই বিতর্কের অবসান ঘটবে৷ কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিভেদ যে সাধারণ মানুষ না চাইলেও এই দেশের শাসক পুঁজিপতি শ্রেণি চায় এবং এই বিভাজনই কেবলমাত্র তাদের শোষণের মেয়াদকে আরও বৃদ্ধি করতে পারে সেই কথাটা ঐ মানুষেরা বুঝতে পারেননি৷ তাই এক দাঙ্গার আগুন নিভতে না নিভতে দেশের অন্য স্থানে দাঙ্গা বাধানো হচ্ছে৷ ১৯৯২ সালে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় বিজেপি তথা সংঘ পরিবার শ্লোগান দিয়েছিল, ‘‘ইয়ে কেবল ঝাঁকি হ্যায়, আভি কাশী, মথুরা বাকি হ্যায়৷’’ ২০১৯ থেকে ২০২২, মাত্র তিন বছর যেতে না যেতেই কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পাশে জ্ঞানব্যপী মসজিদের পশ্চিম দিকের দেওয়ালে ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’–র যে বিগ্রহ আছে তাকে এখনকার মতো বছরে একদিন পুজো করার বদলে প্রতিদিন পুজো করার অধিকার দাবি করে বারাণসীর নিম্ন আদালতে একটি পিটিশন জমা দেন পাঁচ জন মহিলা৷ প্রসঙ্গত ওই পাঁচ মহিলাই বিজেপি–আরএসএসের সাথে যুক্ত৷ ওই পিটিশনে আরও দাবি করা হয় যে জ্ঞানবাপী আসলে মসজিদ নয়, একটি মন্দির৷ পিটিশনারদের যুক্তি হল, মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেন এবং মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের একটি অংশের উপরেই জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করা হয়৷ তাঁদের বক্তব্য, অষ্টাদশ শতাব্দীতে মসজিদের কয়েক মিটার দূরেই বিশ্বনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণ হয়ে থাকলেও হিন্দুরা বরাবরই জ্ঞানবাপী মসজিদে মা শৃঙ্গার গৌরী সমেত দৃশ্যমান ও অদৃশ্য দেবতাদের পুজো চালিয়ে গেছে৷ নিম্ন আদালত এই পিটিশনের ভিত্তিতে জ্ঞানবাপী কমপ্লেক্সে একটি সার্ভে চালানোর আদেশ দেয়৷
জ্ঞানবাপী মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত মসজিদ ইন্তেজামিয়া কমিটি এই পিটিশনের বিরোধিতা করে৷ তাদের যুক্তি ছিল, আদালত পিটিশনারদের রিলিফ দিতে পারে না, কারণ প্লেসেজ অফ ওয়ারশিপ অ্যাক্ট, ১৯৯১ অনুসারে কোনও উপাসনাস্থলের ধর্মীয় চরিত্র ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখে যা ছিল তা–ই রাখতে হয়, বদলানো যায় না৷ সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা পৌঁছলে আদালত বলে, ১৯৯১ সালের ওই আইনে কোনও উপাসনাস্থলের ধর্মীয় চরিত্র নির্ধারণে নিষেধাজ্ঞা নেই৷ সেই রায়ে বলীয়ান হয়ে একদল সমীক্ষক মসজিদের একাংশে খননকার্য চালিয়ে একটি প্রস্তর খণ্ড উদ্ধার করার সাথে সাথে হিন্দুত্ববাদীরা সেটিকে শিবলিঙ্গ বলে দাবি করে শোরগোল ফেলে দেয়৷ কিন্তু সম্প্রতি এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন জ্ঞানবাপী মসজিদের মহন্ত রাজেন্দ্রপ্রসাদ তিওয়ারি৷ একজন সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির তৈরি হয়েছিল সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায়৷ তিনি আরও দাবি করেছেন, আওরঙ্গজেব যত মন্দির ভেঙেছেন তার থেকেও বেশি মন্দির ভেঙেছেন নরেন্দ্র মোদি৷
শ্রী তিওয়ারির মতে, দুই ধরনের ঐতিহাসিক আছেন৷ এক দল ইতিহাস রচনা করেন অতীতের সমস্ত কিছু বিচার করে৷ আর এক দল আছে ইতিহাসের জ্ঞান যাদের অগভীর, তারা ইতিহাস লেখে তাদের অ্যাজেন্ডা অনুযায়ী৷ এই দ্বিতীয় দলের কাছে মোগল যুগের ইতিহাস শুরু হয় ১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেবের নির্দেশে বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস দিয়ে৷ তার আগের বা পরের ইতিহাস তারা বলে না৷ তারা কখনও বলে না যে আকবর এই মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন৷ তার কারণ তাদের উদ্দেশ্য দেশের মধ্যে মুসলমানবিরোধী আবহাওয়া তৈরি করা আর হিন্দুদের আবেগকে ব্যবহার করে ভোট আদায় করা৷ এরা কারা প্রশ্ন করাতে শ্রী তিওয়ারি সরাসরি বিজেপি এবং আরএসএস–এর নাম গ্রহণ করেন৷
তিনি বলেন, বিশ্বনাথের শিবলিঙ্গ স্মরণাতীত কাল থেকে এখানেই রয়েছে৷ কিন্তু আকবরই প্রথম ব্যক্তি যিনি ওই শিবলিঙ্গের গৃহ হিসাবে একটা বডসড মন্দির তৈরি করিয়ে দেন৷ ফলে সেই মন্দির ঐতিহাসিক৷ হিন্দুত্ববাদীরা কিন্তু আকবরের এই অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের কথা বলে না৷
কিন্তু আওরঙ্গজেব কেন ওই মন্দির ধ্বংস করেন সেই প্রশ্ণের জবাবে শ্রী তিওয়ারি তৎকালীন ইতিহাস স্মরণ করান৷ শাহজাহানের বড় ছেলে দারাশিকো, যাঁকে আকবরের যোগ্য উত্তরাধিকারী মনে করা হত, তিনি বারাণসীতে এসেছিলেন সংস্কৃত আর প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ, শাস্ত্র ইত্যাদি পডতে৷ দারাকে যাঁরা পড়িয়েছিলেন সেই পরিবারের সদস্যরা এখনও বারাণসীতেই থাকেন৷ (কংগ্রেস নেতা কমলাপতি ত্রিপাঠীর পরিবার)৷ তাঁর এক পূর্বপুরুষই দারাশিকোর গুরু ছিলেন৷ গুরুদক্ষিণা হিসাবে দারা নিজের একটা কোঠি ত্রিপাঠী পরিবারকে দেন৷ সেটা বারাণসীর ঔরঙ্গাবাদ এলাকায়৷ যাইহোক, দারাশিকো বিশ্বনাথ মন্দিরের দায়িত্ব বর্তমান মহন্ত তিওয়ারিজির পূর্বপুরুষদের হাতে তুলে দেন৷ পাট্টায় লেখা আছে যে তাঁরা শৈব সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজন৷ তাই এই মন্দির এবং এর আচার অনুষ্ঠানের ধারা তাঁদের হাতে নিরাপদ৷
সিংহাসনে বসার পর যারা দারার সমর্থক বা কোনও ভাবে দারাকে সাহায্য করেছিল অথবা যাদের দারার সাথে সুসম্পর্ক ছিল বলে আওরঙ্গজেবের মনে হয়েছিল, তাদের সকলকে উনি আক্রমণ করেন৷ উনি মনে করতেন তারা সবাই ওঁর প্রতিপক্ষ৷ তাঁদের পারিবারিক স্মৃতি বলে বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করার কারণও এটাই৷ অর্থাৎ ধর্মীয় বিদ্বেষ নয়, দারাশিকোর সঙ্গে দ্বন্দ্বই বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের কারণ৷
কিন্তু বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করা আওরঙ্গজেবের একমাত্র পরিচয় নয়৷ ১৬৫৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আওরঙ্গজেব একটা ফরমান জারি করেন৷ সেটা এখনও বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে৷ সেই ফরমানে বলা হয়েছিল পুরনো মন্দির এবং ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের রক্ষা করা উচিত৷ কিন্তু তিনিই আবার বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেন৷ অথচ কয়েক বছর পরে জঙ্গমবাদী মঠকে সাহায্য করেন, কুমারস্বামী মঠ নামে এক নতুন মঠ প্রতিষ্ঠার কাজেও সাহায্য করেন৷ আবার কেদার মন্দিরের সংস্কারের অনুমতিও দেন৷ এগুলো কি আওরঙ্গজেবকে হিন্দুবিরোধী প্রমাণ করে?
আওরঙ্গজেব জঙ্গমবাদী মঠকে চার–পাঁচ বিঘা জমি দিয়েছিলেন আর রাজকোষ থেকে কিছু টাকাও দিয়েছিলেন যাতে লিঙ্গায়তরা শিবপুজো এবং সংসৃক্ত পুঁথির পাঠ চালিয়ে যেতে পারে৷ আওরঙ্গজেবের পাট্টা এখনও জঙ্গমবাদী মঠে আছে৷ ২০১৮ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ওই মঠে গিয়েছিলেন৷ মঠের লোকেরা বলেছে উনি ঐ পাট্টাটা ওখান থেকে সরিয়ে ফেলতে চাইছিলেন৷ কিন্তু ওই পাট্টা তো ঐতিহাসিক নথি৷ আদিত্যনাথ চায় বলেই ইতিহাস থেকে বা স্মৃতি থেকে সেটা মুছে ফেলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের মহন্ত রাজেন্দ্রপ্রসাদ তিওয়ারি৷
এই ঘটনাটাই প্রমাণ করে আসলে যা করা হচ্ছে সবই একটা নির্দিষ্ট বয়ান তৈরি করার স্বার্থে৷ ইতিহাস আওরঙ্গজেবকে একজন একনায়ক, অত্যাচারী রাজা হিসাবে দেখিয়েছে৷ এটা ঠিকই যে উনি নিজের ভাইদের খুন করেছিলেন আর বাবাকে গারদে পুরেছিলেন৷ বিশ্বনাথ মন্দির তাঁর আমলেই ধ্বংস করা হয়েছিল৷ ফলে তাঁকে হিন্দুবিরোধী বলে দেখানো সহজ৷ বিজেপি–আরএসএস আওরঙ্গজেবের প্রচলিত ভাবমূর্তির সঙ্গে মন্দির ধ্বংসের ঘটনাকে জুড়ে তাঁকে আক্রমণ করে আর আওরঙ্গজেবকে আক্রমণ করার মধ্যে দিয়ে ভারতের মুসলমানদের আক্রমণ করে৷ শ্রী তিওয়ারি বলেছেন, হিন্দুত্ব অ্যাজেন্ডা সফল করার জন্য আওরঙ্গজেবকে দানব বানানো বিজেপি–আরএসএস–এর ড্রিম প্রোজেক্ট৷
শ্রী তিওয়ারি বলেন, তাঁদের পরিবারের আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি ছিল না৷ যখন বোঝা গেল যে মন্দিরটা ভেঙে ফেলা হবে, তখন তাঁর পূর্বপুরুষরা শিবলিঙ্গটা তুলে নিয়ে গিয়ে নিজেদের কাছে রাখেন যাতে ওটা সুরক্ষিত থাকে৷ এখনকার বিশ্বনাথ মন্দিরে যে শিবলিঙ্গ রয়েছে সেটা তাঁর পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত করা সেই শিবলিঙ্গ৷ তাঁরা ঠিক যেখানে বসিয়েছিলেন সেখানেই আছে৷ শিবলিঙ্গটা তাঁদের বাড়িতে রাখা ছিল৷ কোথায় আছে তাঁরা প্রকাশ করেননি৷ ১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেব মারা যাওয়ার পর তাঁদের পরিবার লোকজনকে জানায় শিবলিঙ্গ কোথায় আছে৷ তখন সকলে তাঁদের বাড়িতে সেটি দর্শন করতে আসে৷ হোলকার রাজপরিবারের সদস্যা অহল্যাবাঈ হোলকার ছিলেন শৈব৷ তিনি তিওয়ারি পরিবারকে অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন বাড়ির যে অংশে শিবলিঙ্গ রয়েছে সেই অংশটা তাঁর হাতে তুলে দেন৷ তাঁরা তাই করেন সেখানেই নতুন মন্দির তৈরি হয়৷ বিশ্বনাথ মন্দিরের এখনকার জায়গায় একটা পাথরের ফলক আছে, যাতে মন্দিরের অতীত লেখা আছে৷
সুতরাং, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের মহন্তের মতে আরও একটা শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব ভিত্তিহীন৷ এই বছর (২০২২) বারাণসীর লোয়ার কোর্ট জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে একটা সার্ভে করিয়েছে৷ দাবি করা হয়েছে যে মসজিদে ওজু করার জন্যে যে জলের ট্যাঙ্ক আছে, তার মধ্যে একটা শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে৷ কিন্তু শ্রী তিওয়ারি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর জীবনে চার–পাঁচবার জলের ট্যাঙ্কটা পরিষ্কার করা হয়েছে কোনও দিন কোনও শিবলিঙ্গ পাওয়া যায়নি৷ যে ‘শিবলিঙ্গ’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেটিকে গুজব বলে উডিয়ে দেন তিনি৷ তিনি এও বলেন যে জ্ঞানবাপী মসজিদে সর্বদাই মুসলিম ধর্মের মানুষেরা নামাজ পডতেন, ধর্মীয় আচার পালন করতেন৷ কিন্তু কখনই মসজিদের অভ্যন্তরে পুজোপাঠ হত না৷ কেবলমাত্র বছরে একদিন (চৈত্র মাসের নবরাত্রির নবমীর দিন) মসজিদের পশ্চিম দিকের দেওয়ালের বাইরে মা শৃঙ্গার গৌরীর যে বিগ্রহ আছে তাকে পূজা করা হত৷ নরেন্দ্র মোদি এবং আদিত্যনাথেরা ক্ষমতায় আসার পর সমস্ত মসজিদটাই মন্দির কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
রাজেন্দ্রপ্রসাদ তিওয়ারি আরও বলেছেন, কাশীতে আওরঙ্গজেব একটি মন্দির ভেঙেছিলেন৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে তাঁর স্বপ্নের প্রজেক্ট কাশী বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গা পর্যন্ত সরাসরি করিডোর বানাতে গিয়ে একই ভাবে প্রচুর প্রাচীন মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে৷ এই ধ্বংসের দায়িত্বও মোদির উপর চাপা উচিত৷ প্রায় ২৮৬টা শিবলিঙ্গ উপড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ কয়েকটা তো নর্দমায় ফেলা হয়েছে৷ তার মধ্যে মাত্র ১৪৬টা শিবলিঙ্গ উদ্ধার করা গেছে৷ বলা বাহুল্য বর্তমানে জীবিত কেউ আওরঙ্গজেবের বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করা দেখেনি, কিন্তু অনেকেই মোদির দলবলকে হিন্দুদের আবেগের তোয়াক্কা না করে ঐতিহাসিক মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গকে অসম্মান করতে দেখেছে৷ উদ্ধার হওয়া ওই ১৪৬টা শিবলিঙ্গ এখন লঙ্কার (বারাণসীর একটি এলাকা) থানায় আছে৷ থানাতেই রোজ পুজো হয়৷ করিডোর নির্মাণ করতে গিয়ে যেসব মন্দির ভাঙা হয় তাদের মধ্যে ছপ্পন বিনায়ক (গণেশ ঠাকুর) মন্দির রয়েছে৷ রাজেন্দ্রপ্রসাদ সহ অনেকেই মন্দির ভাঙার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল৷ বারাণসীর বাসিন্দা রমেশ উপাধ্যায় এবং কয়েকজন উকিল মিলে একটা পিটিশন ফাইল করেছিলেন৷ বক্তব্য ছিল তাঁদের প্রতিদিন ছপ্পন বিনায়কের পুজো করার অধিকার আছে৷ এই অধিকারও আবহমানকাল ধরে চালু আছে৷ কিন্তু সেই পিটিশন গৃহীত হয়নি৷ ওই পিটিশন গ্রাহ্য হলে ছপ্পন বিনায়ক মন্দির ভাঙা আটকে যেত৷ জেলা জজ সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে নোটিস দেন৷ দু–দিনের মধ্যে তাঁর ট্রান্সফার হয়ে যায়৷ তাঁর বদলে অন্য একজন জজ আসেন৷ এই নতুন জজ পিটিশনারদের বলেন তাঁদের মামলা উন্নয়নের পথে অর্থাৎ করিডোর তৈরির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না৷
জ্ঞানবাপী নিয়ে যে পাঁচজন মহিলা পিটিশন ফাইল করেছেন তাঁদের মামলা কিন্তু ছপ্পন বিনায়ক কেসের মামলার পিটিশন যা দাবি করছিল তা–ই দাবি করছে৷ সুপ্রিম কোর্ট কেসকে লোয়ার কোর্ট থেকে জেলা কোর্টে ড্রান্সফার করে দেয়, আর জেলা কোর্ট বলে এই মামলা প্লেসেজ অফ ওয়ারশিপ অ্যাক্ট, ১৯৯১–এর আওতায় পড়ে না, অতএব গ্রহণযোগ্য৷ সুতরাং এক দল হিন্দুর মামলা বাতিল করে দেওয়া হল, আরেক দল হিন্দুর মামলা গ্রহণযোগ্য হল৷ এ হল একই ধরনের দুটো কেসে দুটো আলাদা নীতি প্রয়োগের উদাহরণ৷ জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে মুসলিম–বিরোধী প্রচার চালানোর সুযোগ আছে বলে তার জন্য এক নীতি, আর করিডোর বানিয়ে ধর্মস্থানকে ‘আধুনিক’ করার জন্য প্রয়োজনে মন্দির ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত ভিন্ন নীতি৷ যারা মন্দিরকে ‘মল’ বানানোর বিরোধিতা করেছেন, তাদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, ফানে হুমকি দেওয়া হয়েছে, এমনকি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের মহন্তের বাডি ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ সুতরাং শ্রী রাজেন্দ্রপ্রসাদ তিওয়ারির মতে, হিন্দুত্ব স্রেফ নরেন্দ্র মোদি আর তাঁর পার্টির ব্যবসা৷ তিনি সোজাসুজি বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি আওরঙ্গজেবের চেয়ে বেশি মন্দির ধ্বংস করেছেন৷
(সূত্রঃ নিউজ ক্লিক, ২৮ সেপ্ঢেম্বর ২০২২)