কার মুখে শুনি আজ ‘আর নয় অন্যায়’?

২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ১ মার্চ কলকাতার শহিদ মিনারের সভায় একটি শ্রুতিমধুর প্রচারযুদ্ধের শুভারম্ভ করেছেন। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আর নয় অন্যায়’।

এই জনসভার সপ্তাহখানেক আগে দিল্লিতে এনআরসি, সিএএ, এনপিআর বিরোধী আন্দোলনকারী ‘গদ্দার’দের সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার খোলাখুলি নিদান হেঁকেছেন তাঁর অনুগামী বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী। তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা উত্তর-পূর্ব দিল্লির সম্প্রদায় বিশেষের মহল্লাগুলিতে যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তা সার্জিকাল স্ট্রাইককেও হার মানায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের সঙ্গে সে চিত্র মেলে। হাজার হাজার শিশুর ভয়ার্ত কান্না, গণহত্যার বলি অর্ধশত ও আহত তিন শতাধিক মানুষ, অগ্নির লেলিহান শিখা, সর্বস্বহারা ও স্বজনহারাদের আর্তনাদ– এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কোনও অন্যায়ই নয়। তাই ধ্বংসের তিনদিন তিনি পালন করেছেন নিষ্ঠুর মৌনতা। আর যে পুলিশ নিষ্ক্রিয় দর্শক হিসাবে বসে থেকে এই ধ্বংসলীলা চালাতে দিল সেই পুলিশকে দু-সপ্তাহ পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিলেন সাফল্যের় শংসাপত্র।

হত্যালীলায় বিচলিত দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মুরলীধর পুলিশকে তিরস্কার করেন ও আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন এবং উত্তেজক ভাষণ দিয়ে যে সব নেতা-মন্ত্রী হত্যালীলায় প্ররোচনা দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করতে বলেন। আজও এফআইআর দায়ের হয়নি। অমিতজি, এটা অন্যায় নয়? এ কথা বলার পর বিচারপতি মুরলীধরকে শাস্তিমূলক বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এটা কি অন্যায় নয়? ‘আর নয় অন্যায়়’ স্লোগান তা হলে কার অন্যায়ের বিরুদ্ধে? ‘অন্যায় যে করে, আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে’– বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি বলেননি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ কর, ওই অন্যায়ের কোরো না। এটা ভণ্ডামি।

এ রাজ্যে তৃণমূল সরকারের যে সব জনবিরোধী কাজ বা অন্যায় লক্ষ করা যায়, সবই তো বিজেপিশাসিত রাজ্যে ঘটছে। অমিত শাহ শহিদ মিনারের সভায় ‘আর নয় অন্যায়’ স্লোগান তুললেন। তিনি বিজেপি শাসিত রাজ্যের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই স্লোগান তুলবেন কি?

এম সিরাজ, মুর্শিদাবাদ

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ৩২ সংখ্যা)