করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সকল রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসুন–এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)

 

সরকার সর্বদলীয় কমিটি গঠন করুক – এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ ১৯ মার্চ, ২০২০ এক বিবৃতিতে বলেন,

আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী অতিমারি আক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভারতে ক্রমাগত তার আগ্রাসী বিস্তার জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও অসহায়তার সৃষ্টি করেছে। আমরা এটাও লক্ষ্য করছি যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই রোগ সম্পর্কে সতর্কীকরণের যত তৎপরতা দেখাচ্ছে, রোগ আক্রান্ত প্রত্যেকের বিনামূল্যে পরীক্ষা, রোগ নিরূপণ ও চিকিৎসার জন্য সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।

এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে আমাদের প্রস্তাব –

১) সারা দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক, সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসক সংগঠন এবং মেডিকেল সায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীদের কেন্দ্রীয় স্তরে বৈঠক করে তাদের সাজেশান গ্রহণ করা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দেশ যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সেগুলি সংগ্রহ করে সবদিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট করা।

২) বিদেশ থেকে যারা ভারতে প্রবেশ করছেন তাদের বাধ্যতামূলক ‘কোয়ারান্টাইন’ এবং ‘ল্যাব-টেস্ট’ করতে হবে। দেশের মধ্যে যারা তাদের সংস্পর্শে আসছেন, তাদেরও বিজ্ঞানসম্মত পর্যবেক্ষণে রাখার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

৩) সংক্রমণ রুখতে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী-আউটডোরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ফেস মাস্ক বিনামূল্যে দেশের সকলের জন্য সরবরাহ করতে হবে। হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য সাবান, হ্যান্ডরাব ইত্যাদির সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক। সমস্ত রাজ্যেই করোনা পরীক্ষার প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবস্থা খুবই নগণ্য। তাই সারাদেশে দ্রুত ন্যূনতম সাবডিভিশনাল লেভেল হাসপাতাল পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার সেন্টার খুলতে হবে। সকলের বিনামূল্যে টেস্ট করতে হবে।

৪) করোনা আটকানোর নামে বিজেপি-আরএসএস গোমূত্র-গোবর ইত্যাদি সেবনের যে দাওয়াই দিচ্ছে তা অবৈজ্ঞানিক এবং ক্ষতিকর। মানুষের অসহায়তা এবং অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এই কুসংস্কারের চর্চা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

৫) ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক মন্দাজনিত কারণে বেকার সমস্যায় জর্জরিত আমাদের দেশে কয়েক কোটি শ্রমিক কর্মচ্যুত হয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধিজনিত সঙ্কটও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় করোনা রোগ সংক্রমণজনিত কারণে যেসব জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে বিশেষত অসংগঠিত ক্ষেত্র বন্ধ হওয়ার ফলে বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। বিপিএল তালিকাভূক্ত সহ গরিব-নিম্নবিত্ত পরিবার, রিক্সা-টোটো-অটো চালক, ক্ষুদ্র দোকানদার প্রভৃতি যাদের কাজ এবং রোজগার বন্ধ হয়ে গেল, সেই সমস্ত পরিবারে অন্তত আগামী চার সপ্তাহ বিনামূল্যে রেশন, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

পরিশেষে আমাদের আবেদন, সাম্প্রতিক এই অতিমারি বিপর্যয় প্রতিরোধে সমস্ত রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, ক্লাব, লাইব্রেরি, সমিতি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন – সকলেই এগিয়ে আসুন। সরকারও এ ব্যাপারে সকলের ভূমিকা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করুক।

(গণদাবী : ডিজিটাল বুলেটিন-২৮ মার্চ ২০২০)