করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্য সম্পাদকের চিঠি

রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানিয়ে ২৮ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে বলেন,

১) ৬ মাসের জন্য খাদ্যদ্রব্যের যে রেশন বিনা পয়সায় দেওয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা এপ্রিল থেকে চালু হবে। ফলে ২৩ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ায় গ্রামের গরিব বিশেষ করে দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। সরকার কেবল চাল ও আটা দেবে বলেছে, কিন্তু তার সঙ্গে খাওয়ার জন্য তেল-নুন সমেত ন্যূনতম কিছু প্রয়োজন। অনেক মানুষের রেশন কার্ড নেই, তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে।

২) বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৯ এপ্রিল বলা হয়েছে, তা আরও বাড়ানো দরকার।

৩) দিনমজুর সমেত যাঁদের এককালীন ১০০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব হয়েছে তার বিলি-বন্টন সর্বদলীয় ব্যবস্থায় হওয়া দরকার, নতুবা দলবাজি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

৪) বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে হবে এবং মূল্যবৃদ্ধি ও কালোবাজারি রুখতে হবে। লকডাউন কার্যকরী করতে পুলিশ কোথাও কোথাও বাড়াবাড়ি করছে, যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।

৫) গণপরিবহণের অভাবে হাসপাতালে যেতে সাধারণ মানুষ ভীষণ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, তার সুরাহা করাটা জরুরি।

৬) পৌর এলাকায় বাজারগুলি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও গ্রামীণ এলাকার বাজার-হাটে ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।

৭) রাজ্য সরকার করোনা মোকাবেলায় রাজ্যের স্বনামধন্য চিকিৎসকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের টিম তৈরি করেছে। বর্তমানে COVID-19 সংক্রমণের সবচেয়ে বিপজ্জনক তৃতীয় বা চতুর্থ স্টেজে যাতে না যেতে পারে তার উপযোগী প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই কাজে অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ কাউকেই এই কমিটিতে রাখা হয়নি। Epidemologist, public health specialist, community medicine এর বিশেষজ্ঞ, virologist, microbiologist এই টিমে নেই। আমরা সরকারকে এই কমিটিতে এমন বিশেষজ্ঞদের এবং এই কাজে অভিজ্ঞ চিকিৎসক সংগঠনগুলিকে যুক্ত করার দাবি করছি।

৮) লালারস পরীক্ষা, হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা, কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা গোষ্ঠীস্তর পর্যন্ত করা দরকার, যা আমাদের মতো দেশে স্টেজ-৩ এ অত্যন্ত জরুরি।

৯) গত কয়েকদিন  PPE-র দাবিতে মেডিকেল কলেজ, বেলেঘাটা ID হাসপাতাল সহ নানা হাসপাতালে নার্সদের বিক্ষোভ চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি সুরক্ষিত না থাকেন তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। আমাদের দাবি, রাজ্যের যেসব হাসপাতালে করোনা রোগীর পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে সেখানে ডাক্তার, নার্স সমেত সকল স্বাস্থ্যকর্মীর পর্যাপ্ত ত্নত্নড্র-র ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া ডাক্তার সমেত এই স্বাস্থ্যকর্মীরা যে বাড়িতে বা আবাসনে থাকেন তাঁদের থাকার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটা তাঁদের মনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। এই বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।

১০) রাজ্যের বাইরে থেকে এই রাজ্যে বা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পরিযায়ী শ্রমিক সমেত নানা ধরনের মানুষ যাঁরা এসেছেন তাঁদের উপর নজরদারির অভাব হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে যদি এই ত্রুটি দূর না করা হয় তাহলে গোষ্ঠী সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে না, যা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।

সবশেষে বলতে চাই, গরিব মানুষ, ফুটপাতবাসী প্রভৃতি মানুষের জন্য আপনি যে ঘোষণা করেছিলেন তা সকলে পাচ্ছেন কিনা তা প্রশাসনের তরফ থেকে আরও নজরদারির প্রয়োজন আছে।

(গণদাবী : ডিজিটাল বুলেটিন-২৮ মার্চ ২০২০)

Check Also

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের অর্জিত সাফল্য হারিয়ে যেতে দেওয়া চলে না

বাংলাদেশের রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ দুই হাত ছড়িয়ে বুলেটকে আহ্বান করে এই …