৫০ হাজারেরও বেশি আশাকর্মী এ রাজ্যে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বর্তমানের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। বিভিন্ন মহল থেকে ফ্রন্টলাইন কর্মী হিসেবে প্রশংসিত হলেও কর্মক্ষেত্রে তাঁদের জন্য প্রায় কোথাও উপযুক্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম একেবারেই নেই। মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, গ্লাভস হয়ত কোথাও একবার দেওয়া হয়েছে, তা-ও সবার জোটেনি। বাঁচার তাগিদে নিজেদেরই তা কিনে নিতে হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার ফান্ডের কথা শোনা যাচ্ছে, তা কোন জীবন রক্ষার জন্য ব্যবহার হচ্ছে তাঁরা জানতে পারছেন না। দিন-রাত কাজ করার কথা আশাদের। দিনে বাড়ি বাড়ি করোনা সার্ভে, মা-শিশুর দেখভাল, এ-সব ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ও অসংক্রামক উপসর্গের খোঁজখবর নেওয়া, ফিরে এসে আবার সেই জরুরি পরিষেবার জন্য বাড়ি-বাড়ি ঘোরা। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়, এই কর্মীরা তাঁদের গার্হ্যস্থ জীবন ও কর্মক্ষেত্র রাত-দিনের এত কাজ দিয়ে মেলাতে পারেন কি না, বা তা বাস্তবে সম্ভব কি না নীতি-নির্ধারকরা তার খবর রাখেন না। বাড়ি বাড়ি সার্ভে করতে গিয়ে বহু জেলাতে কর্মীরা মার খাচ্ছেন, তাঁদের নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই। যে কাজ করার কথা নয়, যে কাজের েCনিং নেই, যে কাজের কোনও পারিশ্রমিক নেই– তেমন সব কাজ কোথাও জোর করে, কোথাও ভয় দেখিয়ে করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ অত্যন্ত অন্যায় ও দুঃখজনক ঘটনা।
নিরাপত্তা ও সুরক্ষাবিহীন ভাবে কাজ করতে গিয়ে সারা রাজ্যে একশোর বেশি আশাকর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। অথচ তাঁদের সবার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকুও নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা পজিটিভ হলে চিকিৎসা বাবদ ১ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। সে কথা তাঁদের জানানোও হচ্ছে না, দেওয়া তো দূরের কথা। এখনও পর্যন্ত কোনও আশাকর্মী সে টাকা পায়নি। জুন মাসে সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, রাজ্য সরকার আশা কর্মীদের জন্য উৎসাহ ভাতা ৩৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫০০ টাকা করবে। কিন্তু তা শুধু ঘোষণায় থেকে গেল। কেন্দ্রীয় সরকার করোনা পরিষেবার জন্য তিন মাস এক হাজার টাকা করে দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছে।
বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে আশাকর্মীদের দুর্বিষহ অবস্থা। আর্থিক অবস্থাও তলানিতে। কাজ বহুগুণ বেড়েছে। আইটেম অনুযায়ী কাজে যে টাকা কর্মীরা পেতেন, তা-ও কোথাও ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে না। গত মাসে হঠাৎ আশাকর্মীদের একটা করে চাদর দেওয়া হয়েছে। কোন প্রয়োজন মেটানোর জন্য এ চাদর দেওয়া হল তার কোনও উত্তর মেলেনি। হাজার হাজার আশাকর্মীকে একরকম প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে যেভাবে খাটিয়ে নেওয়া হচ্ছে তা এককথায় নজিরবিহীন। মাথায় ফুল ছড়িয়ে, রেড রোডে করোনা যোদ্ধা হিসেবে সম্বর্ধনা দিয়ে কি কর্মীদের এই বঞ্চনা ঢাকা যাবে! পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ন বারবার দাবি জানিয়েছে, আশা কর্মীদের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি দিতে হবে, করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন ১০,০০০ টাকা মাসিক উৎসাহ ভাতা দিতে হবে, অবসরকালীন সমস্ত ধরনের সুরক্ষা দিতে হবে। অবিলম্বে সরকার দাবিগুলি না মানলে, ইউনিয়ন জানিয়েছে, আশাকর্মীরা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হবেন।