সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সুবিবেচনার অনন্য নজির তৈরি করেছেন এ রাজ্যের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের মানুষ।
নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ ব্লকের দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগা গ্রাম। অন্যান্য এলাকার মতো এই গ্রাম থেকেও বহু মানুষ নানা রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়ে দলে দলে ঘরে ফিরছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে কারওর কারওর হয়ত করোনা সংক্রমণ রয়েছে। ভাগা গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গ্রামে ফেরা এই শ্রমিকদের থেকে তাঁরা কোনওভাবেই গ্রামে সংক্রমণ ছড়াতে দেবেন না। কিন্তু তাই বলে তাঁদের দূরে ঠেলে দেওয়া চলবে না, সাদরে গ্রহণ করতে হবে । উপায় বের করতে চাষি ও খেতমজুরদের সংগঠন এ আই কে কে এম এস-এর নদীয়া জেলা সম্পাদক, এলাকার অধিবাসী মহিউদ্দিন মণ্ডলের উদ্যোগে গ্রামবাসীদের নিয়ে তৈরি হয় গ্রাম কমিটি। তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রাম থেকে ১ কিলোমিটার দূরে একই চত্বরে থাকা একটি মসজিদ ও মাদ্রাসাকে করা হয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সেখানে ফিরে-আসা শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে গ্রাম কমিটি। যখন নিজের গ্রামে ফিরে আসা অসহায় বিধ্বস্ত পথশ্রান্ত শ্রমিকদের রাখার জন্য স্কুল-কলেজকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হবে শুনেই আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে বহু স্থানে সহ-নাগরিকরাই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, সেখানে এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
করোনা বিপর্যয়ের ভয়াল দিনগুলিতে একযোগে এগিয়ে এসেছেন গোটা গ্রামের মানুষ। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে চাঁদা তুলে শ্রমিকদের খাবার জোগাচ্ছেন তাঁরা। শ্রমিকরা নিজেরাই রান্না করে নিচ্ছেন। তাঁদের বাসনপত্র, জ্বালানি কেনার টাকাও কমিটি সংগ্রহ করছে গ্রামবাসীদের কাছ থেকেই। প্রতিদিন না হলেও মাঝে মধ্যে ভালো-মন্দ খাবারও জুটছে। এর মধ্যে একদিন এমনকি বিরিয়ানিও রেঁধেছিলেন শ্রমিকরা। একই পাত্রে রান্না করা খাবার পাশাপাশি বসে খাচ্ছেন মাদ্রাসায় আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো। অনুভব করছেন, ধর্ম নয়, বিপন্ন মানুষকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করে মানুষের শুভবুদ্ধি ও সমানুভূতি।
কায়েমি স্বার্থে দেশের মধ্যে মানুষে মানুষে বিভেদ যখন খুঁচিয়ে তুলছে মতলববাজ অপ-রাজনীতির কারবারিরা, খেটে-খাওয়া মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে, তখন ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে ভাগা গ্রামের মানুষের এই উদ্যোগ মানবতার প্রতি বিশ্বাসের আলোটি জ্বালিয়ে রাখে।