৩১-ডিসেম্বর-১ জানুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুরের মেছেদায় অনুষ্ঠিত হল এসইউসিআই(সি)-র কিশোর কমিউনিস্ট সংগঠন কমসোমলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষাশিবির। ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে রক্তপতাকা উত্তোলন ও শহিদ বেদিতে মাল্যদানের মধ্য দিয়ে শিবিরের সূচনা করেন এসইউসিআই(কমিউনিস্ট)-র পলিটবুরো সদস্য কমরেড সৌমেন বসু। শহিদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড সান্টু গুপ্ত ও কমরেড অনুরূপা দাস। নবজাগরণের প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তিতে কমসোমল সদস্যরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
বিদ্যাসাগর গ্রন্থাগারের অডিটোরিয়াম হলে, ২০টি জেলার ২১৯ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কমসোমলের উপর রচিত সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয়। পার্টির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের ‘ছাত্র জীবনে রাজনীতি করা উচিত কি?’ এবং ‘কিশোরদের প্রতি’ বই দুটি থেকে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের ওপর শিবিরে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের মধ্যে ৫৩ জন আলোচনা করেন।
দ্বিতীয় দিন, শিবিরে যোগ দেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড নভেন্দু পাল এবং এআইডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক কমরেড মণিশঙ্কর পট্টনায়ক। দু’দিনই আলোচনার মাঝে মাঝে নানা জেলার প্রতিনিধিরা আবৃত্তি, গান পরিবেশন করে।
খুবই উল্লেখযোগ্য যে, প্রবীণ কমিউনিস্ট বিপ্লবী কমরেড চন্দ্রনাথ মহাপাত্র, কিশোর কিশোরীদের অনুপ্রাণিত করার জন্য দ্বিতীয় দিন শিক্ষাশিবিরে উপস্থিত হন। এ বছরই মার্চ মাসে তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করবেন। জীবনের প্রারম্ভে কমিউনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সিপিআই-এর সাথে যুক্ত হন। ৮৮ বছর বয়সে কমরেড শিবদাস ঘোষের বই পাঠ করে ও পার্টির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে তিনি বুঝতে পারেন মার্কসবাদ লেনিনবাদ শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারায় গড়ে ওঠা এসইউসিআই(কমিউনিস্ট)-ই এ দেশের বুকে সত্যিকারের কমিউনিস্ট পার্টি। তারাই পারে পুঁজিবাদ বিরোধী বিপ্লব সংগঠিত ও সফল করতে। এই উপলব্ধি থেকেই কমরেড শিবদাস ঘোষের আদর্শে ও পথেই জীবনকে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন চন্দ্রনাথ বাবু।
প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি অত্যন্ত আবেগময় কণ্ঠে বলেন ‘আমার যাত্রা শেষ, তোমাদের যাত্রা শুরু। উন্নত মহান জীবন ও সমাজ গড়ে তোলার জন্য তোমাদের লড়াই করে এগিয়ে যেতে হবে। কমসোমলের পক্ষ থেকে তাঁকে কমরেড শিবদাস ঘোষের উদ্ধৃতি সম্বলিত স্মারক ও পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।
দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে, কমরেড সৌমেন বসু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকেই একটা সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে সকল মানুষের সত্যিকারের মর্যাদা ও বাঁচার সুযোগ থাকবে। আর কৈশোর হল সেই স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের যথার্থভাবে গড়ে তোলার সব থেকে উপযুক্ত বয়স। সেভাবে তোমাদেরও গড়ে উঠতে হবে। জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা বিষয় ও ইতিহাসের গতিপথে সমাজ পরিবর্তনের স্তরগুলিকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। দেশ-বিদেশের মহান মনীষী, মুক্তি সংগ্রামের যোদ্ধাদের জীবন থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। যে শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের ফলে তৈরি জিনিস ভোগ করে আমরা বেঁচে আছি। তাদের ও নিজেদের উপরে চাপানো শোষণের সমস্ত শৃঙ্খলকে ছিন্ন করতে হবে। তাই অসহায় মানুষের প্রতি গভীর হৃদয়বৃত্তি গড়ে তুলতে পারলেই আমরা তাদের ঋণ শোধ করতে পারবো। সেজন্য, সমস্ত বিষয়কে বিজ্ঞানের আলোকে বিচার করে, কৈশোর থেকেই সমাজ পরিবর্তনের সৈনিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, মানুষকে শুধু তার দোষ দিয়ে নয়, দোষ তার গুণের মাপকাঠিতে বিচার করতে হবে। কমসোমলের সদস্যদের অপরের গুণ থেকেই শিখতে হবে। তিনি বলেন, কৈশোরের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে পুঁজিবাদ ধ্বংস করার বিভিন্ন ধরনের চক্রান্ত করছে প্রতি মুহূর্তে। মানুষ যাতে বিবেকের ডাকে সাড়া না-দেয়, তাই আচার-ব্যবহার-জীবনবোধ সব দিক থেকেই মনুষ্যত্ব ধ্বংস করে দেওয়ার সমস্ত আয়োজন করছে তারা। এর বিরুদ্ধে চাই উন্নত নীতি-নৈতিকতার আধারে জীবন পরিচালনার সুশৃঙ্খল সংগ্রাম। আজকে সেই সংগ্রামে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজন এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মার্কসবাদী দার্শনিক, সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের অমূল্য চিন্তাধারা।
শিবিরে কমরেড সপ্তর্ষি রায়চৌধুরীকে ইনচার্জ করে কমসামলের ৪১ জনের নতুন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়।