কুলতলীর মৈপীঠে শতাধিক ঘরবাড়িতে আগুন লুঠপাট মারধর সহ টিএমসি-র বর্বরতায় নিহত জননেতা কমরেড সুধাংশু জানা স্মরণসভা ২৯ আগস্ট অনলাইনের মাধ্যমে সংগঠিত হয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সভায় যোগ দিয়েছিলেন। কোনও কোনও জায়গায় তা জনসভার রূপ নেয়। জনসাধারণ ও কমরেডরা গভীর শ্রদ্ধায় ও আগ্রহে মাইক লাগিয়ে এক জায়গায় সমবেত হয়ে শুনেছেন। জেলা দপ্তর জয়নগর অফিসে সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন দলের পলিটবুরোর প্রবীণ সদস্য ও জেলা সম্পাদক কমরেড দেবপ্রসাদ সরকার, পলিটবুরোর সদস্য ও প্রধান বক্তা কমরেড সৌমেন বসু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য এবং সভার সভাপতি, প্রাক্তন বিধায়ক ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার।
কমরেড জয়কৃষ্ণ হালদার শহিদ কমরেড সুধাংশু জানার সংগ্রামী বিপ্লবী চরিত্রের উন্নত গুণাবলি স্মরণ করে জেলা কমিটির শ্রদ্ধার্ঘ্য পাঠ করেন। কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বিপ্লবী দল এস ইউ সি আই (সি) গঠনের সূচনা লগ্ন থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় জোতদার-জমিদারদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক রক্তাক্ত লড়াইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার মাধ্যমে দেশে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উৎখাত করার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শোষিত মানুষের সমাজ কায়েম হবেই– এই স্বপ্ন দেখেছিলেন কমরেড সুধাংশু জানা।
কমরেড সৌমেন বসুর আলোচনায় অতীতে কুলতলীর বিস্তীর্ণ এলাকায় জোতদার-জমিদারদের অত্যাচারের ইতিহাস, কমরেডদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, মৈপীঠের সেই দিনের ঘটনার কথা উঠে আসে। উঠে আসে, আমফান ঝড় ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি ঢাকতে সিপিএম মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা যারা বর্তমানে জামা বদল করে টিএমসি-র আশ্রয় নিয়েছে, তারা কী ভাবে সুন্দরবন কুলতলী মৈপীঠের নোনা মাটিকে আবার রক্তাক্ত করছে, সে কথা। ৪ জুলাই সকালে তারা নারকীয় ভাবে হত্যা করেছে এলাকার গরিব মানুষের আপনজন ও তাদের প্রিয় নেতা কমরেড সুধাংশু জানাকে। তারা তাণ্ডব শুরু করেছিল আগের দিন রাত থেকে। অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে তারা বেছে বেছে এস ইউ সি আই (সি) দলের নেতা ও কর্মীদের উপর বর্বর অত্যাচার চালায়। সাধারণ মানুষ যারা পঞ্চায়েতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, তাদের রেহাই মেলেনি। প্রায় ২০০ পরিবারের অর্থ, ধান-চাল, আসবাবপত্র, রান্নাবান্নার সরঞ্জাম ইত্যাদি প্রায় সমস্ত কিছু লুটপাট করে পেCল ঢেলে আগুন লাগিয়ে ঘরগুলি জ্বালিয়ে দেয়। নারী শিশু বৃদ্ধ সহ বহুজনকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে আহত করে। কোনও ভাবে প্রাণে বেঁচে আহতরা ঘটনার এক মাস পরেও যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই বীভৎসতা এলাকার সেই লড়াইকে স্তব্ধ করার হীন ষড়যন্ত্রের ফল।
নিছক সংসারের জন্য অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে নয়, অমর শহিদ কমরেড সুধাংশু মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে নিজেকে বিনা পয়সার চিকিৎসকে পরিণত করেছিলেন। ক্রীড়া ও সাস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপে, মনীষীদের জীবনচর্চায় তিনি ছিলেন অগ্রণী সংগঠক। নির্মাণ শ্রমিক, মৎস্যজীবী সহ নানা পেশার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন সর্বদা প্রয়াসী। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এই জননেতার মধ্যবিত্ত জীবনের নিশ্চিন্ততার জীবন কাটানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছিলেন মানুষের মধ্যে থেকে তাদের সমাজ বদলের পথ দেখানোর সংগ্রামে অনুপ্রাণিত এক সৈনিকের জীবন। এলাকার মানুষ তাকে ভালোবাসতেন বলেই দুষ্কৃতীদের টার্গেট হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
অসহায়, পীড়িত মানুষের প্রতি তাঁর কর্তব্যবোধ ও ভালবাসা ছিল অন্তহীন। তাঁকে হারিয়ে শুধুমাত্র দলের অনুগামীরা নয়, দল-মত নির্বিশেষে বহু মানুষই আজ বেদনাক্লিষ্ট। ঘটনার দিন বারবার নেতৃবৃন্দ তাঁকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি বলেছিলেন, কমরেডদের জীবন বিপন্ন, আমি তাদের ছেড়ে যেতে পারি না। বিপ্লবের যোগ্য সৈনিকের মতো তিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। প্রাণ বিপন্ন করে দলকে রক্ষা করেছেন। অগণিত কমরেডের ব্যথিত হৃদয়ে চোখের জলে শহিদ কমরেড সুধাংশু জানাকে লাল সেলাম জানানোর মধ্য দিয়ে সভা শেষ হয়। (প্রধান বক্তার ভাষণটি পরে প্রকাশ করা হবে)