… বিগত কয়েক বছরে ধরে যে ধরনের সোসাল ডেমোক্রেটিক (তৎকালীন সময়ে কমিউনিস্টদেরই বলা হত সোসাল ডেমোক্রেটিক-গণদাবী) পাঠচক্র সবচেয়ে বিস্তারলাভ করছে তার কথাই ধরা যাক এবং তার কাজ নিয়ে বিচার-বিবেচনা করা যাক। এর রয়েছে ‘‘শ্রমিকদের সাথে সংযোগ”, আর তাই নিয়েই তারা সন্তুষ্ট–কলে-কারখানায় অন্যায়-অবিচার, পুঁজিপতিদের প্রতি সরকারের পক্ষপাতিত্ব, আর পুলিশের নিষ্ঠুরতার তীব্র নিন্দা করে এই পাঠচক্র প্রচারপত্র প্রকাশ করে। শ্রমিকদের বৈঠকগুলিতে আলাপ-আলোচনা কখনওই এই বিষয়গুলির সীমারেখা ছাড়িয়ে যায় না, অথবা খুব কমই যায়।
বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাস প্রসঙ্গে, সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত প্রশ্নাবলি প্রসঙ্গে, রাশিয়া ও ইউরোপের অর্থনৈতিক বিপ্লবের প্রশ্নাবলি প্রসঙ্গে, আধুনিক সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির অবস্থান সম্পর্কিত প্রশ্নাবলি ইত্যাদি প্রসঙ্গে বত্তৃতা ও আলোচনা হয় খুবই কম। সমাজের অন্যান্য শ্রেণির সাথে নিয়মিতভাবে সংযোগ স্থাপন ও তা ক্রমাগত বিস্তৃত করা সম্পর্কে মনে হয়, সে সব বিষয়ে কেউ স্বপ্নেও চিন্তা করে না। আসলে, এ সব পাঠচক্রের বেশিরভাগ সদস্য মনে মনে আদর্শ নেতার যে চিত্র এঁকে থাকেন, সে চিত্রটি যতটা না সমাজতন্ত্রী রাজনৈতিক নেতার, তার চাইতে অনেক বেশি মাত্রায় ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদকের প্রকৃতির। কারণ, যেমন ধরা যাক– যে কোনও ব্রিটিশ ট্রেড ইউনিয়নের সম্পাদক সব সময়ই অর্থনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনায় শ্রমিকদের সাহায্য করেন, কলে-কারখানায় অবিচার-অনাচারের স্বরূপ উদঘাটনে তাদের তিনি সাহায্য করেন, যে সমস্ত আইন ও ব্যবস্থাদি ধর্মঘট ও পিকেটিং করার (অর্থাৎ কোনও একটা কারখানায় ধর্মঘট চলছে বলে সবাইকে আর জনে জনে হুঁশিয়ারি দেওয়ার) স্বাধীনতা খর্ব করে সেগুলির অন্যায়-অবিচারের কথা তিনি ব্যাখ্যা করেন। বুর্জোয়া শ্রেণিরই অন্তর্ভুক্ত সালিশী আদালতের বিচারের পক্ষপাতিত্বের কথা তিনি তুলে ধরেন, ইত্যাদি। এক কথায় প্রত্যেক ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদকই ‘‘মালিকগোষ্ঠী ও সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সংগ্রাম” পরিচালনা করেন এবং তার পরিচালনায় সাহায্য করেন। এটা অত্যন্ত জোরের সাথে বললেও অত্যুক্তি হয় না যে, আর যাই হোক ওটা এখনও সোসাল ডেমোক্রেসি নয়, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক একজন সোসাল ডেমোক্র্যাটের (কমিউনিস্টের-সঃ গঃ) আদর্শ হতে পারেন না। বরং তার আদর্শ হলেন এমন একজন যিনি উৎপীড়নের প্রতিটি বহিঃপ্রকাশের বিরুদ্ধে–তা সেটা যেখানেই হোক না কেন, জনগণের যে কোনও স্তর বা শ্রেণিই তার ফল ভোগ করুক না কেন, তাতে সাড়া দিতে সক্ষম। যিনি এ সব সকল বহিঃপ্রকাশকে একটি সাধারণ সূত্রে গ্রথিত করতে এবং পুলিশের বলপ্রয়োগ ও পুঁজিবাদী শোষণের মধ্যে থাকা সম্পর্কের একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। যিনি তাঁর সমাজতান্ত্রিক প্রত্যয়বোধ এবং নিজের গণতান্ত্রিক দাবি-দাওয়া সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য, সর্বহারা শ্রেণির মুক্তি সংগ্রামের বিশ্ব-ঐতিহাসিক তাৎপর্যটি সবার এবং প্রত্যেকের কাছেই স্পষ্ট করে তোলার জন্য, যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, প্রতিটি ঘটনারই সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম।…(হোয়াট ইজ টু বি ডানঃ লেনিন)