এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির প্রবীণ সদস্য ও দলের হুগলি জেলার পূর্বতন সম্পাদক কমরেড পরিমল সেন ২৬ জানুয়ারি ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি দলের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৬১ সালে তৎকালীন ছাত্রনেতা, দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ শ্রীরামপুর কলেজে ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার জন্য যাতায়াত শুরু করেন। সেই সময় এই কলেজে দলের পূর্বতন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড সুকোমল দাশগুপ্ত অধ্যাপনা করতেন। তিনি ছাত্র শিক্ষক কর্মচারী নির্বিশেষে সকলের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। দলের বর্তমান রাজ্য কমিটির প্রবীণ সদস্য কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্য, যিনি তখন কমরেড সুকোমল দাশগুপ্তের ছাত্র ছিলেন, তাঁর সাথে সম্পর্ককে ভিত্তি করে তদানীন্তন ছাত্রনেতা কমরেড প্রভাস ঘোষের সাথে কমরেড পরিমল সেনের পরিচয় হয়। খুব দ্রুত শ্রীরামপুর কলেজে ডি এস ও ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র ইউনিয়ন গড়ে ওঠে। এই সময় ধীরে ধীরে তিনি দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁর পরিবার ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। ওড়িশার সম্বলপুরে তিনি চাকরি সূত্রে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিজ উদ্যোগে দলের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলেন এবং দলের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে কমরেড তাপস দত্ত, কমরেড ধূর্জটি দাস সহ দলের নেতা-কর্মীদের তাঁর বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল। চাকরি সূত্রে তিনি যেখানেই গেছেন সেখানে নিজের উদ্যোগে দলের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন। ওড়িশা থেকে ৮০-র দশকে হুগলি জেলায় ফিরে এসে তিনি সংগঠনের কাজ নিয়মিতভাবে করতে থাকেন। দলের প্রথম পার্টি কংগ্রেসের পূর্বে তিনি শ্রীরামপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। দলের প্রথম হুগলি জেলা সম্মেলনে তিনি জেলা কমিটির সদস্য হন। সরকারি চাকরির বিধিনিষেধ সত্তে্বও তিনি হুগলি জেলায় শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেন। শ্রীরামপুর রিষড়ায় হেস্টিংস জুট, হিন্দুস্তান গ্লাস, বি এম কেমিক্যাল, ইন্ডিয়া জুট প্রভৃতি কারখানায় শ্রমিক আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি হুগলি জেলায় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নেতায় উন্নীত হন। দীর্ঘ বছর তিনি এ আই ইউ টি ইউ সি-র হুগলি জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এ আই ইউ টি ইউ সি-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি এবং ২০১৩ সালে বাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত ট্রেড ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সম্মেলনে সর্বভারতীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। হুগলি জেলায় কমরেড প্রশান্ত ঘটক, কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্য ও কমরেড পরিমল সেন– তিন জনের কমরেডসুলভ বন্ধুত্ব জেলায় সংগঠন গড়ে ওঠার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। প্রবল শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও মৃত্যুর দু’মাস আগে পর্যন্ত দীর্ঘ বছর যাবৎ তিনি দলের হুগলি জেলার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পার্টির ন্যস্ত দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সাথে রূপায়িত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। পরিবারের মধ্যে থেকেও পার্টির কাজই তাঁর কাছে প্রধান ছিল। জেলার সমস্ত কর্মীদের তিনি সন্তানের মতো ভালবাসতেন। তাঁর মৃত্যুতে দল ও শ্রমিক আন্দোলন একজন যোগ্য নেতাকে হারাল।
মৃত্যুর পর হাসপাতালে তাঁর মরদেহে সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের পক্ষে মাল্যদান করেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড অমিতাভ চ্যাটার্জী। মালা দেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড সৌমেন বসু, পলিটবুরো সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অশোক সামন্তের পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড সুভাষ দাশগুপ্ত, হার্ট ক্লিনিক হাসপাতালের পক্ষে ডাঃ কিসান প্রধান, হাসপাতালের কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে ডাঃ বিপ্লব চন্দ্র, দলের হুগলি জেলা কমিটির পক্ষে সম্পাদক কমরেড সন্তোষ ভট্টাচার্য, কমরেড পরিমল সেনের ভাই মৃণাল সেন ও পুত্র বুধাদিত্য সেন। তাঁর মরদেহ হুগলি জেলা অফিসে আনা হয়। সেখানে পলিটবুরো সদস্য কমরেড গোপাল কুণ্ডু ও অন্যান্য রাজ্য ও জেলা নেতাদের পক্ষে মরদেহে মাল্যদান করে বিপ্লবী শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকল তরুণ কর্মীরা কমরেড পরিমল সেন লাল সেলাম ধ্বনি দিয়ে চারিদিক মুখরিত করে তোলেন। সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণে রচিত সঙ্গীত ও আন্তর্জাতিকের পর চোখের জলে কর্মীরা কমরেড পরিমল সেনকে শেষ বিদায় জানান।
কমরেড পরিমল সেন লাল সেলাম