উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় এস ইউ সি আই (সি) দলের ভাটপাড়া জগদ্দল লোকাল কমিটির প্রবীণ সদস্য, মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সহসভাপতি এবং শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কমরেড ইন্দ্রানী হালদার ১৭ মে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে তাঁকে বারাকপুরের নার্সিং হোমে ভর্তি করেও জীবন রক্ষা করা যায়নি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তাঁর মৃত্যুসংবাদে জেলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের মধেও শোকের ছায়া নেমে আসে।
জেলায় দলের সূচনাপর্বে কমরেড ইন্দ্রানী হালদার ১৯৫৭ সালে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র গার্লস কলেজে পাঠরত অবস্থায় ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও-র সংস্পর্শে এসে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। ওই বছরই দেশের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসাবে কমরেড অসিত রায় ভাটপাড়া কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ছিলেন কমরেড ইন্দ্রানী হালদারের মামাতো দাদা। কমরেড ইন্দ্রানী হালদার নির্বাচনে প্রচারের কাজ করতে শুরু করেন এবং দলের কর্মী হয়ে ওঠেন। সে সময় কিছুদিন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রয়াত সদস্য কমরেড তাপস দত্ত ভাটপাড়ায় ছিলেন। দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষও তখন ছাত্র সংগঠনের কাজ দেখাশোনার জন্য ভাটপাড়ায় যেতেন। তাঁদের সাহচর্যে কমরেড ইন্দ্রানী হালদার এ যুগের বিশিষ্ট মার্কসবাদী দার্শনিক কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তার সান্নিধ্যে আসেন। এর মধ্য দিয়ে কমরেড হালদার দলের একনিষ্ঠ, উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন, সাহসী এবং প্রত্যয়ী কর্মী হিসাবে গড়ে ওঠেন। ভাটপাড়ার অতি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হয়েও তিনি দলের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি তাঁর পরিবারের সকলকেই দলের সাথে যুক্ত করেন। উত্তর ২৪ পরগণার নৈহাটি থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত তৎকালীন পার্টি ইউনিটের সর্বত্রই তিনি সুপরিচিত এবং সক্রিয় কর্মী হিসাবে ভূমিকা নেন। সে সময় দলে হাতে-গোনা কয়েকজন কর্মী ছিলেন। পার্টিজীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাতে, দুঃসময়ে যাঁরা সেদিন দলকে রক্ষা করেছেন এবং এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তাঁদের মধ্যে কমরেড ইন্দ্রানী হালদার ছিলেন অন্যতম। দলের মুখপত্র গণদাবীর প্রচারে তিনি প্রথম থেকেই নিরলস ছিলেন। তিনি একজন শিক্ষিকা, বিশেষত ভাটপাড়া মডেল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে এলাকায় শ্রদ্ধা অর্জন করেন। শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। গত শতাব্দীর আশির দশকে যে শিক্ষা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তিনি তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় নারী নির্যাতন বিরোধী এবং নারীমুক্তি আন্দোলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে গেছেন। অল ইন্ডিয়া মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের জেলা সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। সংগঠনের রাজ্যস্তরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন এবং সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
একজন দৃঢ়চেতা, স্পষ্টবক্তা, নিষ্ঠাবান কর্মী হিসাবে তিনি সংগঠনে গভীর ছাপ রেখে গেছেন।
কমরেড ইন্দ্রানী হালদার লাল সেলাম